ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পুঁজিবাজারে বড় ধরনের উত্থান পতন নেই

প্রকাশিত: ০৪:২৪, ২৭ জুন ২০১৬

পুঁজিবাজারে বড় ধরনের উত্থান পতন নেই

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ গত কয়েক মাস ধরে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মূল্যসূচক ৪ হাজার ৩০০ থেকে ৪ হাজার ৫০০ পয়েন্টের মধ্যে ওঠা-নামা করছে। একদিন ১০ পয়েন্ট কমে তো আরেকদিন ১০ পয়েন্ট বাড়ে। শেয়ারবাজারের এই পরিস্থিতিকে কেউ কেউ ‘স্বাভাবিক’, আবার কেউ কেউ ‘মন্দাবস্থা’ বলছেন। সার্বিকভাবে ৩০০ থেকে ৪০০ কোটির ঘরে লেনদেনকে মন্দাবস্থা হিসেবেই দেখছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, খুব একটা নড়াচড়া নেই শেয়ারবাজারে। বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ১ মার্চ থেকে সর্বশেষ ১৬ জুন পর্যন্ত সময়ে সর্বোচ্চ মূল্যসূচক হয়েছিল ৪ হাজার ৪৮৪ ও সর্বনিম্ন ৪ হাজার ১৭১ পয়েন্ট। এর মধ্যে দু’দিন মূল্যসূচক ৪ হাজার ২০০ পয়েন্টের নিচে ছিল। অধিকাংশ সময় মূল্যসূচক ৪ হাজার ৩৫০ থেকে ৪ হাজার ৪৫০ পয়েন্টের মধ্যে ওঠা-নামা করেছে। এদিকে স্টক এক্সচেঞ্জ ও ব্রোকারেজ হাউসগুলোর ব্রেক-ইভেন্ট (আয়-ব্যয় সমান)-এর জন্য প্রতিদিন প্রায় ৬০০ কোটি টাকার লেনদেনের প্রয়োজন। তবে গত ৪ মাসে ২ দিন ৫০০ কোটি টাকার উপরে লেনদেন হয়েছে। অধিকাংশ দিন লেনদেন হয়েছে ৩০০ থেকে ৪৫০ কোটির মধ্যে। এর মধ্যে ৩ দিন ৩০০ কোটি টাকার নিচেও লেনদেন হয়েছে। সাম্প্রতিক পুঁজিবাজার পরিস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে ‘বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন’ (বিএসইসি)-এর সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, শেয়ারবাজার বর্তমানে মোটামুটি স্থিতিশীল আছে। বাজারকে বাজারের মতো চলতে দিতে হবে। এখন কোন অস্থিরতা নেই। তবে টার্ন ওভার কম। এটা একটা খারাপ দিক। তিনি বলেন, মার্জিন ঋণের নেগেটিভ এ্যাকাউন্টগুলোর কোন সমাধান করা গেলে বাজারে গতি বাড়ত। এই নেগেটিভ এ্যাকাউন্টগুলোর কারণে বাজার অনেকটা আটকে আছে। কোন স্কিমের আওতায় এর সমাধান করা যেতে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও শেয়ারবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ বলেন, সবদিক বিবেচনায় শেয়ারবাজারের বর্তমান পরিস্থিতিকে ভাল বলা যায় না। যদি বাজেটে কোন প্রণোদনা দেয়া হতো, তাহলে হয়ত শেয়ারবাজারে গতি ফিরে আসত। এ ক্ষেত্রে বিশেষ করে লভ্যাংশ আয় ১ লাখ টাকা পর্যন্ত করসীমার বাইরে রাখা যেত। এছাড়া তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর কর হার কমালে শেয়ারবাজারের জন্য ভাল হতো। এদিকে বর্তমান বাজার পরিস্থিতিকে মন্দাবস্থা বলে মনে করছেন না ডিএসই’র পরিচালক ও সাবেক প্রেসিডেন্ট শাকিল রিজভী। চলতি জুন শেষে শেয়ারবাজারে গতি বাড়বে বলে মনে করেন তিনি। ঈদ শেষ ও ব্যাংকের হিসাব ক্লোজিং হওয়ার প্রভাবে এ গতি ফিরবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। পুঁজিবাজারের বর্তমান অবস্থা নিয়ে কোন মন্তব্য না করলেও ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে অন্তর্ভুক্তির জন্য ডিএসই’র পক্ষ থেকে ৫ দফা সুপারিশ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে এগুলোর একটিও বিবেচনায় আনা হয়নি। এমতাবস্থায় বাজেট পাসের প্রাক্কালে ৫টির মধ্যে অন্তত এ দু’টি প্রস্তাব মেনে নেয়ার দাবি জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান বিচারপতি (অব) ছিদ্দিকুর রহমান মিয়া। বাজেট ঘোষণা পরবর্তী এক প্রতিক্রিয়ায় এ দাবি জানান তিনি। প্রস্তাব দুটি হচ্ছে ডি-মিউচ্যুয়ালাইজেশন পরবর্তী স্টক এক্সচেঞ্জকে ৫ বছর কর অব্যাহতি দেয়া এবং স্টক এক্সেচেঞ্জের স্টেকহোল্ডারদের উৎস কর হার কমানো। এদিকে বর্তমান শেয়ারবাজার পরিস্থিতিকে ‘ক্রান্তিকাল’ বলে মনে করে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই)। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে বাজেটে অন্তর্ভুক্তির জন্য সিএসই’র পক্ষ থেকে ৯ দফা সুপারিশ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে সিএসই’র কোন প্রস্তাবও বিবেচনায় নেয়া হয়নি। সিএসইর দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে সিএসইকে ৫ বছর সম্পূর্ণ কর অবকাশ সুবিধা দেয়া, তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও স্টক এক্সচেঞ্জের ক্ষেত্রে জুলাই-জুন হিসাব বছর করার বাধ্যবাধকতা থেকে বাইরে রাখা, স্টক এক্সচেঞ্জের ট্রেকহোল্ডারদের কাছ থেকে আদায়কৃত ০.০৫ শতাংশ উৎসে কর হার কমিয়ে ০.০১৫ শতাংশ করা, লভ্যাংশ আয়ের ওপর দ্বৈত কর হার নীতি পরিহার করা, মূলধনী লাভের ওপর সম্পূর্ণ কর প্রত্যাহার, তালিকাভুক্ত কোম্পানির করপোরেট কর হার কমানো, ব্যক্তিগত করদাতাদের কর মুক্ত আয়সীমা ২ লাখ ৫০ হাজার থেকে ৩ লাখ করা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ন্যায় ট্রেকহোল্ডারদের মওকুফকৃত যে কোন পরিমাণ মার্জিন ঋণ ও সুদ কর আওতার বাইরে রাখা ও অভিবাসী ব্যক্তিদের কারিগরি সেবা পরিশোধের ক্ষেত্রে উৎসে কর ১০ শতাংশে কমিয়ে আনা।
×