ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ক্রোয়েশিয়াকে কাঁদিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে পর্তুগাল

প্রকাশিত: ০৪:৩১, ২৭ জুন ২০১৬

ক্রোয়েশিয়াকে কাঁদিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে পর্তুগাল

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ‘খেলল ক্রোয়েশিয়া, জিতল পর্তুগাল’। ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপে প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে এ দু’দলের লড়াইয়ের চালচিত্র ছিল এমনই। পুরো ম্যাচে একতরফা প্রাধান্য বিস্তার করে খেলেও ভাগ্যের ফেরে গোল পায়নি ক্রোয়েটরা। অথচ একটা মাত্র ভাল সুযোগ পেয়ে সেটাকে কাজে লাগিয়ে ১-০ গোলের জয় নিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে গেছে পর্তুগীজরা। শনিবার রাতে ফ্রান্সের লেন্সে শেষ ষোলোর ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল দল দু’টি। নির্ধারিত ৯০ মিনিটের খেলা গোলশূন্য থাকার পর ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে। সেখানে শেষ দশ মিনিট পর্তুগীজদের রক্ষণভাগকে আক্রমণের ঢেউয়ে রীতিমতো তটস্থ করে রাখেন মডরিচ, রাকিচিটরা। এরপরও ম্যাচটি গড়াচ্ছিল ভাগ্যনির্ধারণী পেনাল্টি শূটআউটের দিকে। কিন্তু শেষ বাশি বাজার মাত্র তিন মিনিট আগে পাল্টা আক্রমণ থেকে গোল করে পর্তুগালকে অসাধারণ জয় উপহার দেন বদলি হিসেবে নামা রিকার্ডো কারেসমা। কোয়ার্টার ফাইনালের পর্তুগালের প্রতিপক্ষ পোল্যান্ড। পোলিশরা শেষ ষোলোতে টাইব্রেকারে ৫-৪ গোলে হারায় সুইজারল্যান্ডকে। নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময়ের খেলা ১-১ গোলে ড্র ছিল। এখন সমীকরণ জানান দিচ্ছে, ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোদের সেমিফাইনালে যাওয়া অনেকটাই নিশ্চিত। ফরম্যাট বলছে, খুব সহজেই হয়ত ফাইনালে পৌঁছে যাবে পর্তুগীজরা! কোয়ার্টার ফাইনালের টিকেট পেয়েছে গ্যারেথ বেলের ওয়েলসও। নর্দান আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে আত্মঘাতী গোলের সৌজন্যে ওয়েলস জয় পায় ১-০ গোলে। ম্যাচের ৭৫ মিনিটে ওয়েলস জয়সূচক গোলটি পায়। লেফট উইং দিয়ে ঢুকে পড়ে প্রতিপক্ষের বক্সে ক্রস করেন বেল। গ্যারেথ ম্যাকলি চেয়েছিলেন দলকে বিপন্মুুক্ত করতে। কিন্তু উল্টো নিজেদের পোস্টেই বল ঢুকিয়ে দেন আইরিশ এই ডিফেন্ডার। গ্রুপ পর্বে কোনরকমে তিনটি ড্র করে শেষ ষোলোর টিকেট পায় পর্তুগাল। আর ক্রোয়েশিয়া নকআউট পর্বে উঠেছিল দাপটের সঙ্গে। গত দুইবারের শিরোপাজয়ী স্পেনকে হারিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হিসেবে। ফ্রান্সের লেঁসে প্রথমার্ধে আক্রমণের চেয়ে রক্ষণকাজেই বেশি মনোযোগ ছিল দু’দলের। তবে ক্রোয়েশিয়া বল নিজেদের অধীনে রেখে খেলে বেশিরভাগ সময়। কিন্তু কোন দলই গোল করার মতো সুযোগ সৃষ্টি করতে পারেনি। অবাক করা বিষয় হচ্ছে, নির্ধারিত সময়ে দু‘দলের কোনো খেলোয়াড়ই গোল বরাবর শট নিতে পারেননি! ১৯৮০ সালের পর এই প্রথম বড় আসরে নির্ধারিত সময়ে গোল বরাবর কোন শট হয়নি। নির্ধারিত ৯০ মিনিট শেষে অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধে কোন দলই তেমন ঝুঁকি নেয়নি। তবে খেলা জমে উঠে দ্বিতীয়ার্ধে। ম্যাচের শেষ ১৫ মিনিট প্রাধান্য ছিল ক্রোয়েশিয়ার। ১১৬ মিনিটে ইভান পেরিশিচের এ্যাক্রোবেটিক ঢংয়ে নেওয়া শট ফিরে আসে পর্তুগালের পোস্টের সাইডপোস্টে লেগে। পাল্টা আক্রমণ থেকেই ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দেয়া গোলের জন্ম। রোনাল্ডোর শট কোনরকমে ফিরিয়ে দেন ক্রোয়েশিয়ার গোলরক্ষক ডনিয়েল সুবাসিচ। কিন্তু ফাঁকায় দাঁড়িয়ে থাকা রিকার্ডো কারেসমার হেড করে গোল করতে কোন সমস্যাই হয়নি। ট্যাকটিক্যাল এক ম্যাচে পরিকল্পনা শিষ্যরা সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে পেরেছেন বলে জানান পর্তুগাল কোচ ফার্নান্ডো সান্টোস। তিনি বলেন, খুব ট্যাকটিক্যাল একটি ম্যাচ ছিল। পর্তুগাল নিয়ন্ত্রণ নিতে চেষ্টা করেছে কিন্তু ক্রোয়েশিয়া আমাদের তা নিতে দেয়নি। কিন্তু তারা যখন নিয়ন্ত্রণ নিতে চেষ্টা করেছে, আমরা তাদের নিতে দেইনি। সান্টোস আরও বলেন, আপনাকে মুদ্রার দুই পিঠই দেখতে হবে। আমরা অসাধারণ একটি দলের মুখোমুখি হয়েছিলাম। এখন শেষ আট নিয়ে ভাবতে শুরু করেছেন পর্তুগীজ কোচ। সান্টোস বলেন, আমি ম্যাচটি দেখেছি, পোল্যান্ড ভালো খেলেছে। আমরা পোল্যান্ডের বিরুদ্ধে ২০১২ সালে খেলেছি, লেভানডোস্কি খুব ভাল খেলোয়াড়, তাদের প্রয় সব খেলোয়াড়ই বুন্দেসলিগায় খেলে। খুব কঠিন একটা ম্যাচ হবে। এদিকে টুর্নামেন্টের ফরম্যাট জানান দিচ্ছে, পর্তুগালের ফাইনালে যাওয়ার পথ অনেকটাই মসৃণ। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে গ্রুপের তৃতীয় হয়ে শেষ ষোলোতে আসাটাই শাপে বর হয়েছে রোনাল্ডো, ন্যানিদের। অথচ গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন কিংবা রানার্সআপ হলে এর চেয়ে কঠিন পথ পাড়ি দিতে হতো। পর্তুগাল যদি গ্রুপের দ্বিতীয় দলও হতো, তাহলে প্রি-কোয়ার্টারে তাদের মুখোমুখি হতে হতো ইংল্যান্ডের। ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স ও জার্মানির মতো দলকে পেয়ে যেত একই অর্ধে। এখন তৃতীয় হয়ে নকআউট পর্বে ওঠায় ওই অর্ধটা এড়াতে পেরেছে সান্টোসের দল। পর্তুগালের সামনে তেমন কোনো বড় প্রতিপক্ষই নেই ফাইনালের আগ পর্যন্ত! শেষ ষোলোতে ক্রোয়েশিয়ায় ছিল পর্তুগালের বড় বাধা। সেই বাধা পেরিয়ে সেমিফাইনালের টিকেট পেতে কোয়ার্টারে পর্তুগালের সামনে অপেক্ষাকৃত সহজ দল পোল্যান্ড। এরপর সেমিফাইনালে পর্তুগালের সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ হতে পারে ওয়েলস, হাঙ্গেরি কিংবা বেলজিয়ামের কোন একটি।
×