ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চট্টগ্রামে শেখ হাসিনা হত্যা চেষ্টা মামলায় পূর্তমন্ত্রীর সাক্ষ্য

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ২৭ জুন ২০১৬

চট্টগ্রামে শেখ হাসিনা হত্যা  চেষ্টা মামলায় পূর্তমন্ত্রীর  সাক্ষ্য

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সমাবেশে পুলিশের গুলি নিক্ষেপের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। ঘটনার ২৮ বছর পর রবিবার চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ মীর রুহুল আমিনের আদালতে ৩৭তম সাক্ষী হিসেবে সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দেন তিনি। জবানবন্দীতে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ বলেন, সেদিন সমাবেশের উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে ট্রাকে করে রওনা দিয়েছেন। আমিও সেই ট্রাকে ছিলাম। কিছুদূর এগোনোর পর আমি সুজনের (খোরশেদুল আলম সুজন) মোটরসাইকেলে উঠে ট্রাকের আগে আগে যাচ্ছিলাম। কোতোয়ালি মোড় আসার পর আমাদের লক্ষ্য করে পাখির মতো গুলি করা হয়। ভাগ্যক্রমে সেদিন নেত্রীর গায়ে গুলি লাগেনি। তিনি বলেন, সেদিন বিনা উস্কানিতে পরিকল্পিত হত্যাকা- ঘটানো হয়। উল্লেখ্য, স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় নগরীর লালদীঘি ময়দানে সমাবেশে যাবার পথে ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে পুলিশ এলোপাতাড়ি গুলি চালালে নিহত হন ২৪ জন। আহত হন কমপক্ষে দুই শতাধিক মানুষ। এ ঘটনায় এরশাদ সরকারের পতন হলে ১৯৯২ সালের ৫ মার্চ ক্ষতিগ্রস্তদের পক্ষ থেকে প্রয়াত আইনজীবী শহীদুল হুদা বাদী হয়ে চট্টগ্রাম মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় হত্যাকা-ের সময় চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ (সিএমপি) কমিশনারের দায়িত্বে থাকা মীর্জা রকিবুল হুদাকে প্রধান আসামি করা হয়। মামলার আসামিরা সরকারী কর্মচারী হওয়ায় এবং মামলা চালানোর জন্য সরকারের অনুমতি না মেলায় আদালত মামলাটি ওই সময় খারিজ করে দেয়। পরবর্তীতে বাদীপক্ষ উচ্চ আদালতে রিভিশন মামলা দায়ের করলে মামলাটি তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সিআইডির ওপর দায়িত্ব পড়ে। মূলত ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে বহুল আলোচিত এই হত্যা মামলাটি পুনরুজ্জীবিত হয়। আদালতের নির্দেশে সিআইডি দীর্ঘ তদন্ত শেষে প্রথম দফায় ১৯৯৭ সালের ১২ জানুয়ারি সিএমপির তৎকালীন কমিশনার মীর্জা রকিবুল হুদাকে এবং পরবর্তীতে ১৯৯৮ সালের ৩ নবেম্বর দ্বিতীয় দফায় অধিকতর তদন্তের মাধ্যমে মীর্জা রকিবুল হুদাসহ ৮ পুলিশ সদস্যকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন। আদালতে দুই দফায় আলোচিত এ মামলার চার্জ গঠন (দ্বিতীয় দফায় সংশোধিত আকারে) করা হয়। প্রথম দফায় ১৯৯৭ সালের ৫ আগস্ট এবং দ্বিতীয় দফায় ২০০০ সালের ৯ মে ৮ আসামির বিরুদ্ধে দ-বিধির ৩০২/২০১/১০৯/৩২৬/৩০৭/১১৪/৩৪ ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়। রবিবার ওই মামলার ৩৭তম সাক্ষী হিসেবে আদালতে সাক্ষ্য দেন ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। এ সময় আসামি পক্ষের আইনজীবীরা তাকে জেরা করেন। জবানবন্দীতে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, ১৯৮৮ সালের ঘটনা। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সময় সরকারী মুসলিম হাইস্কুল কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে আমরা লালদীঘিতে সমাবেশ আহ্বান করেছিলাম। ওইদিন ২৪ জনের প্রাণহানি ঘটেছিল। পুলিশ হিন্দু, বৌদ্ধ, মুসলিম নির্বিশেষে সবাইকে পুড়িয়ে ফেলেছিল। বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতের পিপি এ্যাডভোকেট মেজবাহ উদ্দিন বলেন, গণহত্যা মামলায় ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ছিলেন ৩৭ নম্বর সাক্ষী। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে তার জেরাও সম্পন্ন হয়েছে। আদালত ৩১ জুলাই পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করেছেন। এর আগে গত ২৬ মে একই মামলায় চট্টগ্রাম প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. অনুপম সেন সাক্ষ্য দেন। আলোচিত এ মামলায় এ পর্যন্ত মোট ৩৭ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হলো।
×