ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

আল বিদা মাহে রমজান

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ২৭ জুন ২০১৬

আল বিদা মাহে রমজান

অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক ॥ আজ পবিত্র রমজানের ২১তম দিবস। দেখতে দেখতে দুটি দশক ফেলে এসেছি আমরা। এখন সমাপনী দশকে পদার্পণ। রোজাদারের জন্য এ দশকটির মর্যাদা অতুলনীয়। এমনিতেই মাহে রমজানের ত্রিশ দিনের প্রতি দশ দিনই মুমিন মুসলমানদের জন্য বড় নেয়ামত স্বরূপ। ১ম দশ দিন রহমত, ২য় দশ দিন মাগফিরাত ও ৩য় দশ দিন নাজাতের। নাজাতের দশ দিন তথা শেষ দশ দিন সর্বাধিক ফজিলত সম্পন্ন। এই দশ দিনের মধ্যেই রয়েছে আলাহর অশেষ নেয়ামত ও করুণার রজনী লাইলাতুল কদর। তজরীদ নামক গ্রন্থে হযরত আয়েশার (রাদি:) উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে যখন রমজান মাসের শেষ দশ দিন আরম্ভ হতো তখন রাসূলে খোদা (স) স্বয়ং জেগে থাকতেন, পরিবার পরিজনদের জাগিয়ে রাখতেন, রাতভর জেগে থেকে ইবাদত বন্দেগী করতেন, কদরের রাত্রি তালাশ করতেন। যে রাত হাজার রাতের চেয়েও উত্তম। আল্লাহপাক সুরা কদরে ইরশাদ করেছেন : ইন্না আনযালনাহু ফী লাইলাতুল কদর। ওয়ামা আদরাকামা লাইলাতুল কদর। লাইলাতুল কদরি খায়রুম মিন আলফি শাহর. . . ।’ অর্থাৎ নিশ্চয়ই আমি এ কিতাব নাযিল করেছি কদর রজনীতে। আপনি জানেন কি লাইলাতুল কদরের মর্যাদা কি? লাইলাতুল কদর হাজার মাসের চেয়ে সেরা। এতে ফেরেশতাগণ ও পবিত্র আত্মা জিব্রাইল (আ) তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে প্রত্যেকটি কাজের (নির্দেশ নিয়ে) অবতীর্ণ হন। উল্লেখ্য, কোন রজনী কিম্বা মাসের গুরুত্ব বুঝানোর জন্য কুরআনে কোন সুরা নাযিল হয়নি, একমাত্র শবে কদরের ফজিলত বুঝানোর জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ সুরা নাযিল হয়েছে। আর লাইলাতুল কদর রমজান মাসের শেষ দশ দিনের যে কোন বেজোড় রাত্রি হতে পারে, তাই রমজানের শেষ দশ দিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রাসূলে করীম (স) বলেছেন : তোমরা এ মাসের শেষ দশ দিনের বেজোড় তারিখের রাত্রিসমূহে কদরের রাত্রি তালাশ কর। হুজুরে করীম (স) রমজানের শেষ দশ দিনে ইতিকাফ থাকতেন। উম্মতে মুহাম্মাদীর জন্য তাই ইতিকাফ করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ আলাল কিফায়া। বুখারী ও মুসলিম শরীফে উম্মুল মু’মেনীন হযরত আয়েশা (রাদি:) হতে বর্ণিত হয়েছে যে, মহান ও পরাক্রমশালী আল্লাহ নবী করীম (স)-কে ওফাত দান করার আগ পর্যন্ত তিনি নিয়মিতভাবে শেষ দশ দিন ইতিকাফ করতেন। তারপর তার পবিত্র স্ত্রীগণ ইতিকাফ করতেন। উম্মতের সাধক পুরুষ বুজুর্গানে দ্বীন এ পুণ্যধারা আজও অব্যাহত রেখেছে। গতকাল থেকে শুরু হয়েছে পুরুষ মুসল্লিদের মসজিদে মসজিদে ইতিকাফ এবং মহিলারা তাদের ঘরের কোন উত্তম কামরায়। হুজুরে করীম (স) ইরশাদ করেছেন : শেষ ভাল যার সব ভাল তার। রহমতের প্রথম দশ দিনের পর আসে মাগফিরাতের দশ দিন, এই বিশ দিনের ইবাদতের পর আসে নাজাতের দশ দিনের শেষ সুযোগ। এ সময় কঠোর সাধনার মাধ্যমে পবিত্র রমজানের পরিসমাপ্তিতে রয়েছে মুমিন জীবনের পরম সার্থকতা। অতএব রমজানের শেষ দশ দিন তথা নাজাতের দিনসমূহে আমাদের একনিষ্ঠভাবে রোজা পালন, তারাবিহ, ইতিকাফ , লাইলাতুল কদর অন্বেষণ ও বেশি বেশি নফল ইবাদত করা প্রয়োজন। এছাড়া আজ ২১ রমজান ঐতিহাসিক মক্কা বিজয় দিবস। ৬৩০ খ্রিস্টাব্দের এ দিনে রোযাদার সাহাবীগণ অনেকটা রক্তপাতহীনভাবে মক্কা নগরীতে প্রবেশ করেন এবং বিজয় নিশান উড়ান। এদিন মহানবী ভিন্ন মতাবলম্বী মক্কাবাসীদের সঙ্গে যে অহিংস ও ক্ষমাসুন্দর ব্যবহার দেখিয়েছেন তা দুনিয়ার বিজয় ইতিহাসে বিরল। কুরআনুল কারীমেও এ ঐতিহাসিক বিজয়ের প্রশংসাগাঁথা বর্ণনা করা হয়েছে। এছাড়া এ দশকে রয়েছে জুমাতুল বিদা, অধিকাংশ বড় বড় মসজিদে খতমে তারাবিহর আখেরী মুনাজাত। সবশেষে ঈদপূর্ব রাত্রিতে মুমিন মুসলমানদের ইবাদত বন্দেগী ও রাত্রি জাগরণের মাধ্যমে বিশেষ মর্তবা লাভের সুযোগ। আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা আমাদের যেন এই দিনগুলো সুষ্ঠুভাবে অতিবাহিত করে তার নাজাতের ভাগী হওয়ার তওফিক দান করেন। আমীন
×