ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সংসদে বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় জামায়াত নিষিদ্ধে বিল আনার দাবি

একাত্তরে পরাজিত চক্রই দেশ অকার্যকর করতে গুপ্তহত্যা চালাচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ২৭ জুন ২০১৬

একাত্তরে পরাজিত চক্রই দেশ অকার্যকর করতে গুপ্তহত্যা চালাচ্ছে

সংসদ রিপোর্টার ॥ প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকার ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা জঙ্গীবাদ-সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, জঘন্য এক জিঘাংসা নিয়ে একাত্তরে পরাজিত প্রতিক্রিয়াশীল শত্রুরা দেশকে অকার্যকর করতে টার্গেট কিলিং করছে, পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে ইসরাইলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে জঘন্য ও হীন ষড়যন্ত্র করছে। কিন্তু খালেদা জিয়াদের সেই হীন ষড়যন্ত্র দেশবাসী কোনদিনই বাস্তবায়িত হতে দেবে না। বক্তারা অবিলম্বে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করতে দ্রুত একটি বিল সংসদে আনার জন্য আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের প্রতি দাবি জানিয়েছেন। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং পরে ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে রবিবার বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নেন নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, পানিসম্পদমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, হুইপ মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন, সরকারী দলের ড. আবদুর রাজ্জাক, বিএম মোজাম্মেল হক, ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস, এ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস, গোলাম রব্বানী, মুন্নজান সুফিয়ান, আনোয়ারুল আবেদীন খান, ওয়াসিকা আয়শা খান, স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য স্বপন ভট্টাচার্য এবং বিরোধী দল জাতীয় পার্টির নুরুল ইসলাম ওমর ও মাহজাবিন মোর্শেদ। আলোচনা শেষে সংসদ অধিবেশন আজ সোমবার সকাল এগারোটা পর্যন্ত মূলতবি করা হয়। আলোচনায় অংশ নিয়ে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান জঙ্গীবাদ-সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আসুন সকল পেশার মানুষ জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবেলা করি। খালেদা জিয়াকে জঙ্গীবাদের মদদদাতা আখ্যায়িত করে বলেন, এই দেশে জঙ্গীবাদের উত্থান ঘটিয়েছেন খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়াই হচ্ছে এই যুগের ঘসেটি বেগম। তিনি একের পর এক মানুষ হত্যা করে এখন সাধু হয়েছেন। সকল খুনীরা খালেদা জিয়ার সঙ্গে একত্রিত হয়েছে। তিনি বলেন, দেশে এত উন্নয়ন হচ্ছে অথচ খালেদা জিয়ার চোখে পড়ে না। খালেদা জিয়া বলেছেন বর্তমান সরকার নাকি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। তাঁর এই কথা হাস্যকর ছাড়া কিছু না। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দেশ গঠিত হলো। আজ সেই দেশ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পৃথিবীর মধ্যে উন্নত মর্যাদাশীল রাষ্ট্রে পরিণত হতে যাচ্ছে। যে সরকার জঙ্গী এবং সন্ত্রাসকে মোকাবেলা করে বিশ্বের রোল মডেল হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। শেখ হাসিনার কাছে আজকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ জঙ্গী মোকাবেলার ছবক নিতে চান, সেই রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনা ষড়যন্ত্র করবে এটা হাস্যকর ছাড়া কিছু নয়। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক জামায়াত ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার জন্য আইনমন্ত্রীকে দ্রুত বিল আনার পাশাপাশি সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ন্যায় মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ঈদ বোনাসের দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাণের আকুতি বিশেষ ভাতা চালু করার। আর কয়েকদিন বাদেই ঈদ। সকলেই ঈদ বোনাস পাবে। আর আমার মুক্তিযোদ্ধারা পাবেন না। তাই মুক্তিযোদ্ধাদের মনের আকুতি- তাদের জন্য দুই ঈদে, ২৬ মার্চ, ১৬ ডিসেম্বর এবং বৈশাখী ভাতা চালু করা হোক। তিনি জানান, শীঘ্রই প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা অনলাইনে প্রকাশ করা হবে। মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা করা হয়েছে। অচিরেই তা অনলাইনে দেয়া হবে। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৮ ধরনের আইডি কার্ড দেয়া হবে। দেশের টাকা জাল হতে পারে কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের কার্ড জালিয়াতি হবে না। দেশের সকল হাসপাতালে মুক্তিযোদ্ধাদের বিনামূল্যে চিকিৎসা প্রদান করা হবে বলেও জানান মন্ত্রী। জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য পানিসম্পদমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশে এখন আবার টার্গেট কিলিং করে দেশে একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রেও তারা সফল হবে না। কারণ ওনারা (বিএনপি-জামায়াত) যখন দেখেছে জ্বালাও-পোড়াও করে হয়নি, মানুষ পুড়িয়ে মেরে হয়নি- তখন এরা টার্গেট কিলিং করছে। এসব করে বাংলাদেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করছে। কিন্তু এ দেশের মানুষ সেটা সহ্য করবে না। দেশের মানুষ তাদের জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চায়। তারা জীবনকে সমৃদ্ধ করতে চায়। তারা তাদের ভবিষ্যত বংশধরকে শিক্ষা দিয়ে মানুষ করতে চায়। আর অন্ধকারের দিকে যেতে চায় না। সাবেক খাদ্যমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, বিদেশী সাহায্যনির্ভর বাংলাদেশ মাত্র ৪৬ বছরেই খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে। সকল সূচকে অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। খালেদা জিয়ার হরতাল-নাশকতা দক্ষভাবে মোকাবেলার কারণেই এখন ভারত ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার সকল দেশের চেয়ে বাংলাদেশে বিনিয়োগ অনেক বাড়ছে। যদি নাশকতা না থাকে বিনিয়োগ আরও বাড়বে, সপ্তম বার্ষিক পরিকল্পনার ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা আছে সেটাও অর্জন হবে। প্রতিমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ বলেন, পবিত্র রমজান মাসে খালেদা জিয়া নির্লজ্জ মিথ্যাচার করে যাচ্ছেন। ইফতারের সময় উনি বলছেন প্রধানমন্ত্রী নাকি দেশ বিক্রি করে দিচ্ছেন! জামায়াত-স্বাধীনতাবিরোধীদের পাশে নিয়ে তার এমন উক্তি সত্যিই হাস্যকর। মিথ্যাচার করে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে পারবেন না। মৃণাল কান্তি দাস বলেন, বছরে ১২ বার নাকে খত দিলেও খালেদা জিয়াদের মিথ্যাচার থামে না। এরা মানুষকে পুড়িয়ে হত্যার পর এখন গুপ্তহত্যা এবং বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে পর্যন্ত অপহরণ করে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছে। বিএনপি-জামায়াত অতীতের ভুল থেকে কোনই শিক্ষা নেয়নি। পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসীন হওয়ার স্বপ্নে বিভোর রয়েছে। ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস বলেন, সারাবিশ্ব আজ বাংলাদেশকে বলে উন্নয়নের বিস্ময়, শেখ হাসিনাকে বলে উন্নয়নের ‘কাটার মাস্টার’। জঘন্য এক জিঘাংসা নিয়ে প্রতিক্রিয়াশীল পরাজিত শত্রুরা দেশকে অকার্যকর করতে টার্গেট কিলিং করছে, ইসরাইলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে জঘন্য ও হীন ষড়যন্ত্র করছে। এদের ঘৃণা জানানোর ভাষাও আমাদের জানা নেই।
×