ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

লিভার এ্যাবসেস-লিভারের বিষফোঁড়া

প্রকাশিত: ০৩:৫৮, ২৮ জুন ২০১৬

লিভার এ্যাবসেস-লিভারের বিষফোঁড়া

লিভার এ্যাবসেস অর্থ লিভারের ফোঁড়া- আঁৎকে ওঠার মতো বিষয়ই বটে। ছোট ফোঁড়াতেই যখন কত বিড়ম্বনা সেখানে খোদ লিভারের ফোঁড়া বলে কথা। তবে কথাটা আসলে আংশিক সত্য। কারণ এ কথা ঠিক যে, লিভারের ফোঁড়া ফেটে গিয়ে তা রোগীর মৃত্যুর কারণও হতে পারে। তবে আজকের দিনে সঠিক ব্যবস্থাপনার কারণে এ ধরনের ঘটনা খুবই বিরল। লিভারের ফোঁড়া কেন হয়? লিভারে মূলত দু’ধরনের ফোঁড়া হয়, পায়োজেনিক ও এ্যামিবিক। ইকোলাই, স্টাফাইলোকক্কাই, স্ট্রেপ্টোকক্কাই, ক্লেবসিয়েলা ইত্যাদি ব্যাকটেরিয়া পায়োজেনিক লিভার এ্যাবসেসের জন্য দায়ী। আর এ্যামিবিক লিভার এ্যাবসেস হয় এ্যামিবা থেকে। তবে এসব জীবাণু ঠিক কী কারণে লিভারে ফোঁড়া তৈরি করে তা সব সময় জানা যায় না। তবে ডায়াবেটিস, এ্যাপেন্ডিসাইটিস, গ্যাস্ট্রোএন্টারাইটিস, রক্তের ইনফেকশন, নবজাত শিশুর নাভির ইনফেকশন, অতিরিক্ত মদ্যপান, পেটে আঘাত পাওয়া ইত্যাদি কারণে লিভারে ফোঁড়া হতে পারে। একজন রোগীর লিভারে একটি বা একাধিক ফোঁড়া থাকতে পারে। রোগের লক্ষণ লিভারের ফোঁড়ার কোন বিশেষ লক্ষণ নেই। রোগীদের সাধারণত খাবারে অরুচি, জ্বর ও পেটেব্যথা থাকে। অনেক সময় কাশি কিংবা ডান কাঁধে ব্যথা থাকতে পারে। বিরল ক্ষেত্রে রোগীর জন্ডিস হতে পারে। রোগ নির্ণয় রক্ত পরীক্ষা লিভার এ্যাবসেস নির্ণয়ে খুব বেশি কার্যকর নয়। কোন কোন ক্ষেত্রে ব্লাড কালচারে জীবাণু ধরা পড়তে পারে। লিভার এ্যাবসেসের জন্য মূল পরীক্ষা হলো পেটের আল্ট্রাসনোগ্রাম। কোন কোন ক্ষেত্রে রোগের শুরুতে আল্ট্রাসনোগ্রামে এ্যাবসেস ধরা পরে না। এজন্য ৭-১০ দিন পর আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপিট করলে ভাল। সিটি স্ক্যান ও এমআরআই আল্ট্রাসনোগ্রামের চেয়ে ভাল হলেও এসব পরীক্ষায় খরচ বহুগণ বেশি; আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অপ্রয়োজনীয় বটে। লিভার এ্যাবসেসের চিকিৎসা লিভার এ্যাবসেস সাধরণত এন্টিবায়োটিকেই সেরে যায়। তবে লিভার থেকে পুজ বের করে দেয়াটা জরুরী- বিশেষ করে লিভারে যদি বড় বা একাধিক এ্যাবসেস থাকে। এক সময় এজন্য অপারেশন প্রয়োজন পড়লেও আজ আর তার দরকার পড়ে না। এখন আমরা লোকাল এ্যানেসথেসিয়া করে খুব অল্প খরচে আল্ট্রাসনোগ্রাফি গাইডেন্সে লিভার থেকে পুজ বের করতে পারি। আর এরপর এ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করলে লিভাবের ফোঁড়া সারতে বাধ্য। শেষ কথা আমাদের মতো দেশে লিভার এ্যাবসেস বেশ কমন। তবে চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতির কল্যাণে এটি আজ আর কোন মারাত্মক ব্যাধি নয়। শুধু যা জরুরী তা হলো সঠিক সময়ে সঠিক কাজটি করা। কারণ লিভার এ্যাবসেস ফেটে গিয়ে পুজ হার্ট, ফুসফুস কিংবা পেটের ভেতরে গিয়ে জীবন সংশয়ের কারণও হতে পারে। ডাঃ মামুন-আল-মাহতাব (স্বপ্নীল) সহযোগী অধ্যাপক, লিভার বিভাগ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় লিভার, গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিশেষজ্ঞ ইন্টারভেনশনাল এ্যান্ডোস্কোপিস্ট ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হসপিটাল
×