ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

কোপায় চ্যাম্পিয়ন চিলি

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ২৮ জুন ২০১৬

কোপায় চ্যাম্পিয়ন চিলি

জাহিদুল আলম জয় ॥ লিওনেল মেসি প্রশ্নাতীতভাবে বর্তমান বিশ্ব ফুটবলের সেরা তারকা। ক্লাব ফুটবলে বার্সিলোনার হয়ে অবিশ্বাস্য সাফল্যগাথার কারণেই এ স্বীকৃতি। কিন্তু জাতীয় দল আর্জেন্টিনার হয়ে অর্জনের ভা-ারটা বরাবরই শূন্য ফুটবলের ক্ষুদে জাদুকরের। এই অপূর্ণতা রেখেই সোমবার আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় জানিয়েছেন মেসি। ২০১৪, ২০১৫ ও ২০১৬ টানা তিন বছর অপবাদ ঘোচানোর সুবর্ণ সুযোগ আসে আর্জেন্টাইন অধিনায়কের সামনে। কিন্তু তিনবারই তীরে এসে তরী ডুবিয়েছেন রেকর্ড সর্বোচ্চ পাঁচবারের ফিফা সেরা ফুটবলার। সবশেষ যুক্তরাষ্ট্রে শতবর্ষী কোপা আমেরিক ফুটবলের ফাইনালে মেসির আর্জেন্টিনা টাইব্রেকারে ৪-২ গোলে হেরেছে চিলির কাছে। নির্ধারিত ৯০ মিনিট ও অতিরিক্ত ৩০ মিনিটের খেলা গোলশূন্য অমীমাংসিত ছিল। ফলে টানা দ্বিতীয়বার শিরোপা জয়ের উৎসব করেছে চিলি। আর আর্জেন্টিনা ২৩ বছরের শিরোপা খরা ঘোচাতে ব্যর্থ হয়েছে। ২০১৪ সালে বিশ্বকাপে জার্মানির কাছে হার দিয়ে হতাশার যাত্রা শুরু হয় আর্জেন্টিনার। এরপর ২০১৫ ও ২০১৬ সালে টানা দুটি কোপা আমেরিকার ফাইনালে হারল দিয়াগো ম্যারাডোনার দেশ। সঙ্গতকারণেই হতাশ গোটা আর্জেন্টিনা দল। দুঃখ, কষ্টের বার্তা সবচেয়ে বেশি ছেয়ে গেছে মেসির মানসপটে। বার বার চূড়ান্ত সাফল্যের কাছাকাছি এসে ব্যর্থতা সহ্য করতে পারেননি গত ২৪ জুন ২৯ বছরে পা রাখা মেসি। তাই তো ম্যাচ শেষে কান্নাভেজা কণ্ঠে আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন। আবেগাল্পুত কণ্ঠে অবসর প্রসঙ্গে মেসি বলেন, আমার জন্য জাতীয় দল আজ থেকে শেষ হয়ে গেছে। যা আমার পক্ষে সম্ভব ছিল আমি সবকিছুই করেছি। চার ফাইনালে খেলেছি কিন্তু দুর্ভাগ্য, একটিতেও জিততে পারিনি। এটা আমার ও পুরো দলের জন্য অত্যন্ত কঠিন মুহূর্ত। এটা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। আর্জেন্টিনার হয়ে আমার যাত্রা এখানেই শেষ। বিদায়বেলায় অকপটে স্বীকার করে নিয়েছেন দেশের হয়ে নিজের ব্যর্থতা। এ প্রসঙ্গে মেসি বলেন, আবারও আকাশসমান হারের বেদনায় জর্জরিত হয়েছি। আমি নিজে টাইব্রেকার মিস করেছি, যেটা দলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আর্জেন্টিনার হয়ে একটি শিরোপা জিততে আমার সবটুকু সামর্থ্যই উজাড় করে দিয়েছিলাম। কিন্তু পারলাম না। সাফল্যটা ধরা দিল না। কেন বার বার ব্যর্থ হচ্ছেন? মেসি নিজেও কূল কিনারা পাচ্ছেন না। বলেন, এসব নিয়ে বিশ্লেষণের সময় এটা নয়। ড্রেসিংরুমে বসে আমার মনে হলো জাতীয় দলের হয়ে আর নয়। জাতীয় দলের হয়ে সাফল্য, শিরোপা জয়, এসব আমার জন্য নয়। তবে মেসির আচমকা অবসর মানতে পারছেন না ফুটবলবিশ্বে তার কোটি কোটি ভক্ত সমর্থক। তাই তো অবসর ঘোষণার পর সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে মেসিকে ফিরে আসার আকুতি জানাচ্ছেন ভক্তকুলরা। দক্ষিণ আমেরিকার এক সাংবাদিকও মেসিকে প্রশ্ন ছুড়ে দেনÑ ‘আপনি কি আপনার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবেন?’ জবাবে মেসি বলেছেন, না, আমি মনে করি না যে আমি ফিরব। আমি আর ফিরব না। এটাই আমার সিদ্ধান্ত। আমি আমার সর্বস্ব দিয়েছি। এটা আমার চতুর্থ ফাইনাল। এখানেও হেরে গেলাম। অস্বস্তি প্রকাশ করে মেসি আরও বলেন, গত কয়েক ঘণ্টা ধরে কী ঘটছে, আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। মনে হচ্ছিল দুঃস্বপ্ন ভর করেছিল আমার ওপর। কিন্তু এটাই বাস্তব। অবসরের ক্ষণে মেসির বয়স ২৯ বছর। ফর্মটাও যে মন্দ তা নয়। খেলছিলেন দুর্দান্ত। এখনও অবলীলায় খেলতে পারেন আরও পাঁচ থেকে সাত বছর পর্যন্ত। খেলবেন, তবে জাতীয় দলের হয়ে নয়। শুধু ক্লাব ফুটবলে বার্সিলোনার জার্সিতে। কিন্তু হুট করে জাতীয় দল থেকে মেসির এমন অবসরের সিদ্ধান্ত মানতে পারছেন না অনেকে। জাতীয় দলের সতীর্থরা তো বটেই, ভক্ত-সমর্থকরা আরও আবেগী। টুইটার, ফেসবুকে জোর আবেদন, ফিরে এসো মেসি। চিলির সঙ্গে ফাইনাল হারের পর মেসির শিশুর মতো কান্না ছুঁয়ে গেছে সবার মন। মেসির সতীর্থরা ছাড়াও শত্রুপক্ষের লোকজনও সমবেদনা জানাচ্ছেন। চিলি অধিনায়ক ক্লাউডিও ব্রাভো বুঝতে পারছেন মেসির মনের অবস্থা। দু’জন একসঙ্গে খেলেন বার্সিলোনার হয়ে। ব্রাভো তাই মেসিকে অনুরোধ জানিয়েছেন সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার। সার্জিও এ্যাগুয়েরো যেমন বলেছেন, মেসি উত্তেজনার বশেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গোলরক্ষক সার্জিও রোমেরোর মতে, এই সিদ্ধান্ত থেকে হয়তো সরে আসতে পারেন মেসি। ২০০৪ সালে পেশাদারী ফুটবল ক্যারিয়ার শুরুর পর একের পর এক সাফল্য পেয়েছেন মেসি। তবে সব কিছুই স্প্যানিশ ক্লাব বার্সিলোনার হয়ে। গত ১২ বছরে কাতালানদের হয়ে জিতেছেন আট স্প্যানিশ লা লিগা, চার কোপা ডেল’রে ও চার চ্যাম্পিয়ন্স লীগ শিরোপা। লা লিগার সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতার রেকর্ডটিও নিজের করে নিয়েছেন। ২০০৯ সাল থেকে বর্ষসেরা ফুটবলার নির্বাচিত হয়েছেন পাঁচবার। এছাড়া আরও অনেক গৌরবময় রেকর্ড নিজের পদতলে আঁছড়ে ফেলেছেন। কিন্তু বার্সার এই দুর্দান্ত মেসিকে কোনভাবেই খুঁজে পাওয়া যায় না আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে। ২০০৫ সালে অভিষেকের পর আর্জেন্টিনার হয়ে খেলেছেন ১১৩ ম্যাচ। ৫৫ গোল করে গড়েছেন নতুন রেকর্ড। আর্জেন্টিনার পক্ষে সবচেয়ে বেশি গোল করার রেকর্ড এখন মেসিরই। কিন্তু তাতে কি! দলীয় অর্জনের খাতাটি একেবারেই শূন্য। তাই তো বলা হচ্ছে, বার্সার হয়ে কিংবদন্তি বনে যাওয়া মেসির আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অনুজ্জ্বল প্রস্থান ঘটেছে।
×