ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

যৌথ মূলধনী কোম্পানি গঠনে বাপেক্স ও সান্তোস চুক্তি

প্রকাশিত: ০৬:০২, ২৮ জুন ২০১৬

যৌথ মূলধনী কোম্পানি গঠনে বাপেক্স ও সান্তোস চুক্তি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বঙ্গোপসাগরের মাগনামা অবকাঠামোতে যৌথভাবে বাপেক্স এবং অস্ট্রেলীয় কোম্পানি সান্তোস গ্যাস অনুসন্ধান কূপ খনন করবে। এজন্য উভয় কোম্পানি একটি যৌথ মূলধনী কোম্পানি গঠনের জন্য সোমবার চুক্তি সই করেছে। অবকাঠামোটি বঙ্গোপসাগরের উজানে ৫১৫ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত। কোম্পানিতে বাপেক্সের শেয়ার থাকবে ৪৯ শতাংশ। অর্থাৎ কোম্পানির সিদ্ধান্ত গ্রহণ পর্যায়ে বাপেক্সের মতামত উপেক্ষিত থাকবে। সমান অংশীদারিত্ব না থাকলে কোম্পানি বোর্ডে সমান সংখ্যক সদস্য পাবে না বাপেক্স। এতে এককভাবে সান্তোস কোম্পানি বোর্ডে আধিপত্য বজায় রাখবে। সাম্প্রতিক সময়ে বিদ্যুত বিভাগ যেসব বড় প্রকল্প নির্মাণে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে চুক্তি করেছে সব ক্ষেত্রেই সমান অংশীদারিত্ব চুক্তি করেছে। সম্প্রতি একটি কোরিয়ান কোম্পানি ৪৯ শতাংশ শেয়ারে একটি বৃহৎ বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে প্রস্তাব দেয়। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের নেতৃত্বে গঠিত একটি কমিটি সমান অংশীদারিত্ব না হওয়ায় প্রস্তাবটি ফিরিয়ে দেন। কাওরানবাজারের বাপেক্স ভবনে চুক্তিটি সই হওয়ার সময় বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ আতিকুজ্জামান জানান, চুক্তির মধ্য দিয়ে যৌথ মূলধনী কোম্পানি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হলো। বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন নেয়ার পর যৌথ কোম্পানি গঠনে চুক্তি হলো। বাপেক্স সূত্র বলছে এটি প্রাথমিক চুক্তি। আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত পাওয়ার পর চূড়ান্ত চুক্তি করা হবে। তবে বাপেক্স বোর্ড চুক্তির বিষয়টি অনুমোদন করায় এখন ক্রয় প্রক্রিয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যাবে। গত মাসে বাপেক্সের বোর্ড সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গ্যাস উন্নয়ন তহবিল থেকে এ খাতে অর্থ ব্যয় করা হবে। সান্তোসের বাংলাদেশ প্রধান মাহমুদুল করিম বলেন, এ চুক্তির মাধ্যমে যৌথ কোম্পানি গঠনের কার্যক্রম শুরু হলো। আগামী শুষ্ক মৌসুমে জানুয়ারি মাসে মাগনামায় কূপ খননের কাজ শুরু হতে পারে বলে জানান তিনি। উৎপাদন অংশীদারিত্ব চুক্তির (পিএসসি) আওতায় বঙ্গোপসাগরের ১৬ নম্বর ব্লকটির ইজারাদার ছিল যুক্তরাজ্যের কোম্পানি কেয়ার্ন এনার্জি পিএলসি। সান্তোস এতে অংশীদার ছিল। মাগনামার ২১৩ বর্গকিলোমিটার এলাকায় তৃতীয় মাত্রার ভূকম্পন জরিপ চালিয়ে তেল-গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা চিহ্নিত করেছিল কেয়ার্ন। কিন্তু তারা সেখানে কূপ খনন করেনি। এক পর্যায়ে কেয়ার্ন ১৬ নম্বর ব্লকটি সান্তোসের কাছে বিক্রি করে চলে যায়। এখন এই ব্লকের ইজারাদার সান্তোস। মাগনামার পাশেই ছিল বাংলাদেশের সাগরের একমাত্র গ্যাসক্ষেত্র সাঙ্গু। যেখান থেকে প্রায় সাড়ে ৫৫০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস তোলা হয়েছিল। মাগনামায় প্রায় দেড় ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ) গ্যাসের মজুদ থাকতে পারে মনে করছে সান্তোস, যা নিশ্চিত হওয়ার জন্য অনুসন্ধান কূপ খনন করতে হবে। কূপ খননে অনেক দিন থেকেই অংশীদার খুঁজছিল বিদেশী কোম্পনিটি। অন্য কোথাও সাড়া না পেয়ে গত বছর তারা বাপেক্সকে অংশীদার হতে প্রস্তাব দেয়। প্রাথমিকভাবে সান্তোস আগে সম্পাদিত ভূকম্পন জরিপের অর্ধেক খরচ দেয়ার বিনিময়ে বাপেক্সকে অংশীদার করতে চায়। জরিপে ৯২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ হয়েছিল বলে দাবি করে কোম্পনিটি। অংশীদার বানাতে বাপেক্সের কাছে এ ব্যয়ের অর্ধেক ৪৬ মিলিয়ন ডলার চেয়েছিল সান্তোস। তবে বাপেক্স ১৬ দশমিক ৩৫ মিলিয়ন ডলার দিতে সম্মত হয়েছে। আর অনুসন্ধান কূপ খননে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৫ মিলিয়ন ডলার। এর অর্ধেক হিসেবে বাপেক্সকে দিতে হবে ১২ দশমিক ৫০ মিলিয়ন ডলার। সব মিলিয়ে ২৮ দশমিক ৮৫ মিলিয়ন ডলারে বিনিময়ে মাগনামায় সান্তোসের সঙ্গে এই যৌথ মূলধনী কোম্পানি হচ্ছে।
×