ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ফের আর্জেন্টিনাকে কাঁদিয়ে চ্যাম্পিয়ন চিলি

প্রকাশিত: ০৬:৩১, ২৮ জুন ২০১৬

ফের আর্জেন্টিনাকে কাঁদিয়ে চ্যাম্পিয়ন চিলি

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ কষ্টের মাত্রা কারও পক্ষেই বোঝা সম্ভব নয়। আর্জেন্টিনা ফুটবল দল গত তিন বছর ধরে যে কষ্ট বুকের মধ্যে বয়ে চলেছে তা আর শেষ হলো না। এটি স্রোতধারার মতো বেগবানই হয়ে রইল। গোটা বিশ্বের কোটি কোটি ভক্ত-সমর্থকের আরেকবার কাঁদিয়ে টানা তিন বছর তিনটি বড় টুর্নামেন্টের ফাইনালে হারের বেদনায় ডুবেছে দিয়াগো ম্যারাডোনার দেশ। বাংলাদেশ সময় সোমবার সকালে যুক্তরাষ্ট্রের ইস্ট রাদারফোর্ডের মেটলাইফ স্টেডিয়ামে শতবর্ষী কোপা আমেরিকার ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল চিলি ও আর্জেন্টিনা। তীব্র উত্তেজনাপূর্ণ ও নাটকীয় ম্যাচের নির্ধারিত ৯০ মিনিট ও অতিরিক্ত ৩০ মিনিটের খেলা গোলশূন্য ড্র থাকে। এরপর ভাগ্যানির্ধারণী পেনাল্টি শূটআউটে আর্জেন্টিনাকে ৪-২ গোলে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে চিলি। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই দুই দল ২০১৫ সালেও কোপার ফাইনালে খেলেছিল। সেবারও নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময়ের খেলা গোলশূন্য থাকার পর টাইব্রেকারে আর্জেন্টিনাকে ৪-১ গোলে হারিয়ে ট্রফি জিতেছিল চিলিয়ানরা। কোপার ইতিহাসে মাত্র তৃতীয় দল হিসেবে টানা দুইবার শিরোপা জয়ের কৃতিত্ব দেখিয়েছে ক্লাউডিও ব্রাভোর দল। এক বছর পর হারের মধুর প্রতিশোধ নেয়ার সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেনি আর্জেন্টিনা। উল্টো টানা তিন বছর ফাইনালে হারের কষ্টে পুড়তে হয়েছে মেসি, মারিয়া, মাশ্চেরানোদের। ২০১৪ সালে ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের ফাইনালে জার্মানির কাছে হারের পর ২০১৫ সালে কোপা আমেরিকার ফাইনালে চিলির কাছে হারে আকাশি-সাদা জার্সিধারীরা। এবার ২০১৬ সালে শতবর্ষী বিশেষ কোপা আসরের ফাইনালেও সেই একই প্রতিপক্ষের কাছে মাথা নোয়ালো আর্জেন্টিনা। পুরো টুর্নামেন্টে চোখ ধাঁধানো নৈপুণ্য প্রদর্শন করে টুর্নামেন্টের সেরা ফুটবলারের পুরস্কার জিতেছেন চিলির তারকা ফরোয়ার্ড এ্যালেক্সিস সানচেজ। সর্বোচ্চ ৬ গোল করে গোল্ডেন বুট জিতেছেন একই দলের এডুয়ার্ডো ভারগাস। চিলির গোলরক্ষক ও অধিনায়ক ক্লাউডিও ব্রাভো জিতেছেন সেরা গোলরক্ষকের পুরস্কার গোল্ডেন গ্লোভ এ্যাওয়ার্ড। ফিফা ফেয়ার প্লে এ্যাওয়ার্ড জিতেছে রানার্সআপ আর্জেন্টিনা। ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণ পাল্টাআক্রমণে খেলা জমজমাট হয়ে ওঠে। প্রথমার্ধে দুই দলের ফুটবলারদের চেয়ে বেশি আলোচিত ছিলেন রেফারি। বিতর্কিত সিদ্ধান্তের ফলে ৪৩ মিনিটের মধ্যেই দুই দলেরই একজন করে ফুটবলার চলে যান মাঠের বাইরে। ২৮ মিনিটে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন চিলির মিডফিল্ডার মার্সেলো ডিয়াজ। হলুদ কার্ড দেখার মতো অপরাধ তিনি করেছিলেন কিনা, তা নিয়ে বিতর্ক উঠতেই পারে। ৪৩ মিনিটে সরাসরি লালকার্ড দেখেন আর্জেন্টাইন ডিফেন্ডার মার্কোস রোজো। যদিও পরে টেলিভিশন রিপ্লে থেকে দেখা গেছে যে, সরাসরি লালকার্ড দেখার মতো কোন ফাউলই তিনি করেননি। প্রথমার্ধে একবারও গোলের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারেনি চিলি। গোলপোস্ট লক্ষ্য করে নিতে পারেনি একটি শটও। অন্যদিকে ২৩ মিনিটে করার মোক্ষম সুযোগ হাতছাড়া করেছেন গঞ্জালো হিগুয়াইন। চিলির ডিফেন্ডারের ভুলে একেবারে ফাঁকায় বল পেয়ে গিয়েছিলেন এই আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার। সামনে গোলরক্ষক ছাড়া আর কেউই ছিল না। কিন্তু চিলির গোলরক্ষকে ফাঁকি দিয়ে বলটা জালে জড়াতে পারেননি হিগুয়াইন। দুই মিনিট পরে নিকোলাস ওটামেন্ডির দারুণ হেড চলে যায় চিলির গোলপোস্টের কিছুটা বাইরে দিয়ে। দশজনের দল নিয়ে খেললেও দ্বিতীয়ার্ধে আক্রমণ পাল্টাআক্রমণে দারুণ উত্তেজনা ছড়ান চিলি ও আর্জেন্টিনার ফুটবলাররা। ৮০ মিনিটে গোলের দেখা পেয়ে যেতে পারত চিলি। কিন্তু আলেক্সিস সানচেজের শট রুখে দেন আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক সার্জিও রোমেরো। ৮৪ মিনিটে নিশ্চিত একটি গোলের সুযোগ নষ্ট করেছেন সার্জিও এ্যাগুয়েরো। গোলপোস্টের একেবারে সামনে বল পেয়েও সেটা জালে জড়াতে পারেননি আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড। নির্ধারিত ৯০ মিনিট গোলশূন্য থাকার পর অতিরিক্ত সময়ের খেলায় দেখা গেছে আরও হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। প্রথম ১৫ মিনিটের মধ্যে দুই দলই পেয়েছিল জয়সূচক গোল করার সুযোগ। ৯৯ মিনিটে চিলির ফরোয়ার্ড ভারগাসের হেড রুখে দেন আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক রোমেরো। পাল্টাআক্রমণ থেকে আর্জেন্টিনাও আতঙ্ক ছড়িয়েছিল চিলির রক্ষণভাগে। মেসির ফ্রিকিক থেকে হেড করেছিলেন সার্জিও এ্যাগুয়েরো। কিন্তু অসাধারণভাবে সেই হেড থেকে আসা বলটা গোলপোস্টের ওপর দিয়ে পাঞ্চ করে দেন ব্রাভো। এরপর টাইব্রেকারে গড়ায় খেলা। টাইব্রেকারে চিলির প্রথম শট মিস করেন আর্টুরো ভিদাল। আর্জেন্টিনার হয়েও প্রথম শট বারপোস্টের ওপর দিয়ে মারেন মেসি। চিলি পরের চারটি শটেই দক্ষতার সঙ্গে গোল করে। কিন্তু আর্জেন্টিনার চতুর্থ শটটি লুকাস বিজলিয়া মিস করলে শিরোপা নিশ্চিত হয় চিলির।
×