ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আমাকে দু’বছর শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছিল

প্রকাশিত: ১৯:৩৫, ২৮ জুন ২০১৬

আমাকে দু’বছর শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছিল

অনলাইন ডেস্ক ॥ তিন বছর আগে পাকিস্তানের মুলতান শহর থেকে আল-কায়েদা জঙ্গিরা অপহরণ করেছিল আলী হায়দার গিলানীকে। পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানীর ছেলে এই আলী হায়দার গিলানী। পাকিস্তানের সংসদে একটি প্রাদেশিক আসনের জন্য নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছিলেন তিনি। গত তিন বছর তিনি কেমন ছিলেন বন্দি অবস্থায়? কিভাবে তিনি ফিরে আসলেন? বিবিসির শায়মা খলিলের কাছে তিনি সে অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন। আল-কায়েদা জঙ্গিরা মি: গিলানীকে জানিয়েছিল যে তার বাবা ইউসুফ রাজা গিলানীর উপর প্রতিশোধ নেবার জন্যই তাকে অপহরণ করা হয়েছে। কারণ ওসামা বিন লাদেনকে যখন হত্যা করা হয় ইউসুফ রাজা গিলানী পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। অপহরণকারীরা মুক্তিপণ দাবীর করার পাশাপাশি পাকিস্তানের কারাগারে আটক আল-কায়েদার কয়েকজন বন্দীর মুক্তিও দাবী করেছিল। অপহরণের পর মি: গিলানীকে উত্তর ওয়াজিরিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়। “আমাকে দু’বছর শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছিল, ” বলছিলেন মি: গিলানী। তাকে একটি ছোট্ট কক্ষে আটকে রাখা হয়েছিল এবং একবছর বাইরের কোন কিছু দেখতে দেয়া হয়নি। সূর্যের আলো কী জিনিষ সেটি ভুলে গিয়েছিলেন তিনি। আল-কায়েদা জঙ্গিরা মি: গিলানীকে শারীরিকভাবে কোন নির্যাতন না করলেও তাকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করেছিল। এক পর্যায়ে আল-কায়েদা জঙ্গিরা তাকে তালেবানদের কাছে হস্তান্তর করে। উত্তর ওয়াজিরিস্তানে আল-কায়েদা এবং তালেবান জঙ্গিদের লক্ষ্য করে পাকিস্তানী বাহিনী ২০১৪ সাল থেকে সামরিক অভিযান জোরালো করে। এর পাশাপাশি চলছিল মার্কিন ড্রোন হামলা। মি: গিলানীকে যে জায়গায় আটকে রাখা হয়েছিল সেটি ছিল একটি যুদ্ধক্ষেত্র। তিনি বলেন, “ ড্রোনের আওয়াজ ছিল ভয়ঙ্কর। মনে হতো যেন একটি বড় মৌমাছি মাথার উপর বিকট শব্দে উড়ে বেড়াচ্ছে। একটি নয় , একসাথে চার – পাঁচটি ড্রোন হামলা করতো।” গোলার আঘাতে যে কোন সময় মারা যাবার করতেন মি: গিলানী। সে এলাকায় ড্রোন হামলা জোরদার হলে আল-কায়েদা জঙ্গিরা তাকে পাকিস্তানী তালেবানের হাতে হস্তান্তর করে। পাকিস্তানী তালেবানের হাতে যাবার পর তার খানিকটা উন্নতি হয়। তারা তাকে শিকলে বেঁধে রাখতো না। তাকে হাঁটার সুযোগ দিত। খবরা-খবর শোনার জন্য তালেবানরা তাকে একটি রেডিও দিয়েছিল। তালেবানের হাতে আফগানিস্তানে প্রায় দুই মাস ছিলেন। মে মাসের নয় তারিখে তালেবানরা তাকে জানিয়েছে , জায়গাটি তাদের ছেড়ে দিতে হবে। কারণ তারা খবর পেয়েছে যে আমেরিকানরা বিমান হামলা চালাবে। মি: গিলানী বলেন, “ আমরা রাতে সে জায়গা ছেড়ে দিলাম এবং তিন-চারঘন্টা হাঁটার পর বোমা নিক্ষেপের শব্দ শুনতে পেলাম।” হাঁটতে হাঁটতে এক পর্যায়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন মি: গিলানী। “তখন একজন এসে আমাকে বললেন আমার শার্টটি খুলতে। তারপর একজন এস সেটি দিয়ে আমার হাত বাঁধে ফেললেন।” নিজেকে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানীর ছেলে বলে পরিচয় দিলেও তারা সেটি বিশ্বাস করতে চায়নি। কিন্তু পরে তারা বুঝতে পারলেন যে তিনি সত্যি কথা বলছেন। এরপর একজন ব্যক্তি বললেন, “মি: গিলানী আপনি মুক্ত। আপনি এখন বাড়ি যাচ্ছেন।” যে ব্যক্তিটি এ কথা বললেন তিনি ছিলেন আমেরিকান বাহিনীর একজন সদস্য। তালেবানবানদের লক্ষ্য করে তারাই এই হামলা চালিয়েছিল। এভাবেই তিন বছরের বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেলেন আলী হায়দার গিলানী। সূত্র : বিবিসি বাংলা
×