ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জাতীয় সংলাপের দাবি এরশাদের

প্রকাশিত: ২২:২৬, ২৮ জুন ২০১৬

জাতীয় সংলাপের দাবি এরশাদের

সংসদ রিপোর্টার ॥ বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ দেশকে কঠিন অবস্থা থেকে উদ্ধারে জাতীয় সংলাপের জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানিয়ে বলেছেন, সুশাসন আজ প্রশ্নবিদ্ধ নয়, সুশাসন আজ গুলিবিদ্ধ। তাই আসুন এই অবস্থান থেকে পরিত্রাণ দেওয়ার জন্য সবাই মিলে ঐক্যমত হই। প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করবো- যে রাজনীতিবিদ সন্ত্রাসে বিশ্বাস করে না, জ্বালাও-পোড়াও রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না তাদের সবাইকে নিয়ে জাতীয় সংলাপের আয়োজন করুন। আলোচনাকরে কঠিন সঙ্কট থেকে দেশকে উদ্ধারের ব্যবস্থা করুন। ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ আহ্বান জানান। নিজে সব সময় আওয়ামী লীগের পাশে ছিলেন দাবি করে এরশাদ বলেন, আমি সবসময় আওয়ামী লীগের পাশে থেকেছি। ১৯৯১ সালে সংসদে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংসদ প্রতিষ্ঠা করেছি। আমি তখন জেলে ছিলাম। আমরা যুগপৎ আন্দোলন করে অত্যাচারী বিএনপি সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরিয়েছিলাম। ১৯৯৬ সালে ২১ বছর পর আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসাতে সহযোগিতা করেছি। ২০০৬ সাল মহাজোট গঠন করে ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষে বিশাল বিজয় এনে দিয়েছিলাম। আমি সবসময় আওয়ামী লীগের পাশেই থেকেছি। তিনি বলেন, আজ বিবেকের তারণায় অনেক কথা বলতে হচ্ছে। লোকজন কী নিরাপদে কর্মস্থালে আসতে পারে। মা কি তার সন্তানকে নিরাপদে স্কুলে পাঠাতে পারেন? হিন্দু পুরোহিত, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কেউ কি নিরাপদ বোধ করছে? বাস্তবে আমরা কেউ-ই নিরাপদে নেই। এভাবে বেশি দিন চলতে পারে না। তিনি বলেন, নিহত তনুর মা প্রশ্ন করেছেন গরীব বলে কি আমরা বিচার পাবো না। সাংবাদিক দম্পত্তি সাগর-রুনির হত্যার কি বিচার হয়েছে? তাহলে তারা কি বিচার পাবে না। একটি গুপ্তহত্যারও কি বিচার হয়েছে? এমন নজির আপনি দেখাতে পারবেন? সাবেক এই রাষ্ট্রপতি বলেন, যে সমাজে একজন এসপি’র স্ত্রী নিরাপদ নয়, সেখানে সাধারণ মানুষের কি অবস্থা হতে পারে। গুপ্তহত্যার পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, গত মার্চ হতে এ পর্যন্ত ১৩ জন গুপ্তহত্যার শিকার হয়েছে। এ দায়িত্ব কি সরকারকে নিতে হবে না? অন্যদিকে ২০০৪ সাল থেকে আজ পর্যন্ত বন্দুকযুদ্ধে ১ হাজার ৭১৫ জন নিহত হয়েছে। এসব কি সুশাসনের ইঙ্গিত বহন করে? আমি সেদিন বলেছিলাম- এসব সন্তানহারা মায়ের চোখের পানিতে আমরা ভেসে যাবো। বিএনপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, দেশে ক্রসফায়ার চালু করেছিলো বিএনপি। ২০০৪ সালে প্রথম তারা কেন ক্রসফায়ার চালু করেছিল? কারণ তখন এদেশে আইনের শাসন ছিলো না। আইনের শাসন ছিলো না বলেই বিচারহীনতার সংস্কৃতি শুরু হয়েছিল। সেদিন ২০০৪ সালে ২১ আগষ্ট প্রকাশ্য দিবালোকে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা করে সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে, যাদের বিচার এখনো হয় নাই। সেই বিচারহীনতার সংস্কৃতি আমরা এখনো বহন করে চলছি। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত এরশাদ বলেন, আমাদের প্র্রধান বিচারপতি একটি অনুষ্ঠানে বলেছিলেন আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা না হলে এদেশে বিনিয়োগ হবে না। যখন দেশের প্রধান বিচারপতি আইনের শাসন সম্পর্কে প্রশ্ন তোলেন তখন মানুষ চোখে অন্ধকার দেখে। সরকারের সমস্ত উন্নয়ন কর্মকান্ড প্রতিনিয়ত ম্লান হয়ে যাচ্ছে। সুশাসন ও উন্নয়ন অতোপ্রতভাতে জড়িত। সুশাসন ছাড়া উন্নয়নের সুবাতাস জনগণ পায় না। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কবর জিয়ারত করা জীবনের সবচাইতে বড় তৃপ্তি উল্লেখ করে এইচ এম এরশাদ বলেন, আমার সবচেয়ে যে কাজটি বেশি তৃপ্তি দেয়, তাহলো আমিই প্রথম রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে জাতির জনকের কবর জিয়ারত করেছি। আমার এখনো ইচ্ছা হয় জাতির জনকের কবরে পুষ্পস্তবক দিয়ে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করতে। কিন্তু জাতির জনক তো আমার জনক না, আওয়ামী লীগের জনক। তাই আমার অনুরোধ জাতির জনককে সারাজীবনের জন্য সর্বজনীন জাতির পিতা করুন।
×