ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যবসায়ীরা আতঙ্কে

ঈদ বকশিশের নামে শুরু হয়ে গেছে চাঁদাবাজি

প্রকাশিত: ০৪:০৩, ২৯ জুন ২০১৬

ঈদ বকশিশের নামে শুরু হয়ে গেছে চাঁদাবাজি

শংকর কুমার দে ॥ ‘ঈদের সালাম, ঈদ বকশিশ’। উপরি আদায়ের জন্য সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তাদের এক ধরনের চাঁদাবাজির কৌশল। ঈদ ঘনিয়ে এলেই, ধুম পড়ে যায় এই ধরনের চাঁদাবাজির। পুলিশ, কাস্টমস, ইনকামট্যাক্স, ভ্যাট, গ্যাস, বিদ্যুত, টেলিফোনসহ সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠানের সবাই এ নিয়েই মহাব্যাস্ত। সন্ত্রাসী, মস্তান, রাজনৈতিক ক্যাডার কেউই কম যান না। শিল্পপতি, ব্যবসায়ীদের কাছে চাঁদাবাজির এই কৌশলটি মারাত্মক আতংক। ঈদ ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে উপরি আদায়ের জন্য বখশিস নেয়ার মওসুমী চাঁদাবাজির প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে। অনেক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যান এলাকাভিত্তিক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে। সারা বছরের সেবাদানের বিপরীতে একথা-সেকথায়, ইনিয়ে-বিনিয়ে, অনুনয়-বিনয় আবদারের সুরে আসল কথাটা বলেন, ‘আমরা ঈদের সময়ে পেয়ে থাকি’। ঈদের আগমন যত ঘনিয়ে আসছে, এসব সেবাদানের অফিসে যাওয়া অনেকেই কমিয়ে দিয়েছে। সেবাদানের অফিসের কর্মকর্তাদের দেখলে মুখ ঘুরিয়ে লুকিয়ে অন্যপথে চলে যাওয়ার সুযোগ খুঁজেন ভুক্তভোগীরা। সেবাগ্রহনকারীদের না পেয়ে সেবাদানকারীরা অনেকের কাছে নাকি মোবাইলে ফোন করে বিকাশে বকশিশ পাঠিয়ে দেয়ার জন্যও অনুরোধ করছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভুক্তভোগীদের একজন বললেন, সন্ত্রাসী, মস্তান ও রাজনৈতিক ক্যাডারদের যেভাবে বকশিশ নামের চাঁদা আদায়ের কৌশল নানা ধরনের। তারা ঈদ বকশিশের জন্য টেলিফোন করেন। মামা, চাচা বা ভাইজান সম্বোধন করেন। বলেন, ঈদ করাবেন না? নরম কথায় কাজ না হলে গরম কথায় ভয়ভীতি দেখানো হয়। যে ব্যবসায়ী যত বড়, তার কাছে বকশিশ বা চাঁদার অঙ্কের হাঁক-ডাক পড়ে তত বেশি। যেই মস্তান যত বড়, তার চাঁদাবাজির নজরানাও তত বড়। ব্যবসায়ীদের অনেকেই ঝক্কি ঝামেলা এড়াতে কম বেশি যা হোক একটা অঙ্কের টাকার সমঝোতায় এসে মিটমাট করার চেষ্টা করে কোন রকমে ঈদটা পার করে দেন। রাজধানীর বঙ্গবাজারের একাধিক ব্যবসায়ীর সঙ্গে আলাপ হলে তারা জানান, রোজার ঈদের সময়ে কাপড় কেনাবেচা হয় বেশি। এ জন্য ভারতীয় কাপড়ের নামে পুলিশ ও কাস্টমসের লোকজনের আনাগোনা বেড়ে যায়। মাঝে মধ্যেই তারা হানা দেয়। অনেক সময়ে গোপনে সমঝোতা করে ফেলতে হয়। সমঝোতা না হলে মিডিয়ায় চলে আসে ভারতীয় কাপড়ের চোরাচালানের আটকের ঘটনা। তখন আর সামাল দেয়া সম্ভবপর হয় না। সমঝোতা করতেই হয়। যদি ব্যতিক্রম ঘটে তাহলে, ‘আমও যায়, ছালাও যায়’। শনির আখড়ার এক ব্যবসায়ী বলেন, সাদা পোশাকে কয়েক জন সদস্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য এসে গেছেন। তাদের দাবি এবার নিজেদের কথার চেয়ে তাদের দাবি এবার বড় সাহেবদের ঈদ করাতে হবে। এবারের ঈদের বকশিশের অঙ্কটাও একটু বেশি দেয়ার জন্য বলে গেছেন, আবদারের সুরে। ব্যবসায়ীর কথা, আবদারের সুরটায় যদি কাজ না হয়, তবে বড় ধরনের কাফরা দিতে হবে, এটা প্রায় নিশ্চিত।
×