ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চিনি

প্রকাশিত: ০৬:০০, ১ জুলাই ২০১৬

চিনি

এম শাহজাহান ॥ গত বছরের ঈদের আগে এই দিনে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হয়েছে ৩৮ টাকায়। এক বছরের ব্যবধানে সেই চিনি কিনতে এখন ভোক্তাদের ৭০ টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আবার এই দামে মিলছে না পণ্যটি। ফলে ক্রেতাদের দ্বিগুণ দাম দিয়ে চিনি কিনতে হচ্ছে। বাধ্যবাধকতা না থাকলেও রমজানের ঈদে সেমাই খাওয়া ঐতিহ্য ও রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। আর সেমাই রান্নায় প্রয়োজন হবে চিনির। চাহিদার এ সুযোগটি নিয়ে পণ্যটির দাম বাড়িয়ে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। মুনাফাখোর ব্যবসায়ীরা প্রতি বছর রোজা ও ঈদে যে কোন একটি পণ্যকে টার্গেট করে ভোক্তাদের পকেট থেকে কোটি কোটি হাতিয়ে নেয়। এবারের রোজা ও ঈদে সেই সব সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের লক্ষ্যবস্তু চিনি। এ কারণে হু হু করে বেড়ে যাচ্ছে পণ্যটির দাম। এদিকে, দুর্বল বাজার মনিটরিং এবং সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের কারসাজির কারণে ঈদের আগে চিনির দাম আরও বাড়ার আশঙ্কা করছেন ভোক্তারা। খুচরা বিক্রেতারাও বলছেন, পাইকারি বাজারে সরবরাহ পরিস্থিতি ভাল না হলে পণ্যটির দাম আরেক দফা বাড়তে পারে। যদিও পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে দাম বাড়ানোর জন্য মিল মালিকরা সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। এছাড়া আজ শুক্রবার থেকে সরকারী ছুটি হয়ে যাওয়ায় বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা আরও দুর্বল হয়ে পড়বে। এ সুযোগ নিতে পারেন সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন দেশের বাইরে থেকে টেলিফোনে জনকণ্ঠকে বলেন, চিনির দাম এত বাড়ার কথা নয়। মজুদ, আমদানি পরিস্থিতি এবং এলসি নিষ্পত্তির বিষয়গুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায় চাহিদার তুলনায় বেশি চিনি রয়েছে। তাই কোনভাবে ৭০ টাকা চিনি কাম্য নয়। যারা অতিরিক্ত দামে চিনি বিক্রি করছেন, তাদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। আইনগতভাবেই সেসব ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সরকারী সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যমতে, চিনির বর্তমান মূল্য প্রতি কেজি ৬৭-৭০ টাকা। এক সপ্তাহ পূর্বে পণ্যটির দাম ছিল ৬৩-৬৫, এক মাস পূর্বে ৬০-৬২ এবং এক বছর পূর্বে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হয়েছে মাত্র ৩৮-৪০ টাকায়। এক্ষেত্রে গত এক বছরে চিনির দাম বেড়েছে প্রায় ৭৫ দশমিক ৬৪ শতাংশ। সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম কমলেও শুধুমাত্র চিনির দাম বেড়েছে। এ দাম বাড়ার পেছনে সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা দায়ী বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে চিনি নিয়ে কারসাজির কারণে চট্টগ্রামের মীর গ্রুপকে ২২ লাখ টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এছাড়া চিনি নিয়ে কারসাজির পেছনে মৌলভীবাজার ও খাতুনগঞ্জের কয়েকজন পাইকার ব্যবসায়ী জড়িত রয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি আবুল কাশেম আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, চিনি নিয়ে ইতোপূর্বে বহু ছিনিমিনি হয়েছে। রোজা এলেই কয়েকজন ব্যবসায়ী বাজার অস্থির করতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। এবারও তাই হয়েছে। সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে সরকারকে আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। দাম নিয়ে কেউ যাতে কারসাজি করতে না পারেন সেজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও তৎপর হতে হবে। জানা গেছে, দেশীয় শিল্প রক্ষায় চিনি আমদানিতে ইতোপূর্বে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। একই সঙ্গে টনপ্রতি চিনি আমদানির ট্যারিফ মূল্য বৃদ্ধি করেছে সংস্থাটি। ওই সময় প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, পরিশোধিত ও অপরিশোধিত চিনি আমদানিতে ১৫ শতাংশ মূসক দিতে হবে। এছাড়া পরিশোধিত চিনি আমদানিতে টনপ্রতি ট্যারিফ মূল্য ৪০০ থেকে ৪৩০ মার্কিন ডলার ও অপরিশোধিত চিনি আমদানিতে টনপ্রতি ট্যারিফ মূল্য ৩২০ থেকে ৩৫০ মার্কিন ডলার করা হয়েছে। শিল্প মন্ত্রণালয়ের আবেদনের প্রেক্ষিতে এ মূসক আরোপ ও ট্যারিফ মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। এদিকে, অপরিশোধিত চিনি আমদানিতে শুল্কহার কম হওয়ায় এখন আর পরিশোধিত চিনি আমদানি হচ্ছে না। ফলে মিল মালিকরা মনোপলি ব্যবসার সুযোগ নিচ্ছেন। প্রতিনিয়ত বাড়ছে চিনির দাম। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দু’ধরনের চিনি আমদানিতে শুল্কহার সমান করা হলে দাম নিয়ে কারসাজি হওয়ার সুযোগ কমে আসবে।
×