ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

আলোকচিত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ঐতিহ্য ও সংগ্রাম

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ১ জুলাই ২০১৬

আলোকচিত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ঐতিহ্য ও সংগ্রাম

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অধিকাংশ ছবি সাদা-কালো মাধ্যমে তোলা। উপস্থাপিত হয়েছে গত শতকের নানা সময়। রয়েছে সাম্প্রতিক সময়ের কিছু রঙ্গিন ফ্রেমও। সবগুলো ছবির মূল বিষয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। প্রাচ্যের অক্সফোর্ডখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়টির ইতিহাস ও ঐতিহ্য ধরা দিয়েছে এসব ছবিতে। উপস্থাপিত হয়েছে নান্দনিক স্থাপনার চিত্র। সেই সঙ্গে উঠে এসেছে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধসহ নানা আন্দোলন-সংগ্রামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকদের আত্মত্যাগ ও বলিষ্ঠ ভূমিকার চিত্র। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে এ প্রদর্শনীর আয়োজন। আজ শুক্রবার প্রতিষ্ঠার ৯৫ বছর পূর্ণ করছে ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আগের দিন বৃহস্পতিবার বিকেলে এ প্রদর্শনীর সূচনা হয়। শত বছরের দ্বারপ্রান্তে যাত্রা উপলক্ষে ১০০টি ছবি দিয়ে সাজানো হয়েছে প্রদর্শনী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনের এ্যালামনাই ফ্লোরে বৃহস্পতিবার বিকেলে শুরু হয় তিন দিনের এ প্রদর্শনী। ‘১০০ বছরের দ্বারপ্রান্তে সৌরভে গৌরবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’ শীর্ষক প্রদর্শনীটির আয়োজক ঢাকা ইউনিভার্সিটি এ্যালামনাই এ্যাসোসিয়েশন। বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রার পূর্ব থেকে নানা সময়ের ১০০টি দুর্লভ ছবি দিয়ে সাজানো হয়েছে এ প্রদর্শনী। পিয়ারু আর্কাইভ ইন্টারন্যাশনালসহ বিভিন্ন মাধ্যম থেকে পাওয়া ছবিগুলোয় উঠে এসেছে ১৯২১ সালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকালীন থেকে দেশভাগ, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন, ছেষট্টির ছয় দফা, ঊনসত্তরের গণঅভ্যূত্থান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সময়ের ঐতিহাসিক স্থাপনা। প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন ঢাবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এ্যালামনাই এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি একে আজাদ। বক্তব্য রাখেনÑ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান, এ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি রকীবউদ্দীন আহমেদ ও এ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি এ্যাডভোকেট মোল্লা মোহাম্মদ আবু কাওছার। স্বাগত বক্তব্য রাখেন এ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব রঞ্জন কর্মকার। প্রদর্শনীর প্রতিটি ছবির মাঝে যেন উঠে এসেছে একেকটি গল্প। শুরুতেই নজর পড়ে ১৯১২ সালের একটি আলোকচিত্রে। এ ছবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সম্ভাব্যতা যাচাই কমিটির সভাপতি ব্যারিস্টার রবার্ট নাথানসহ অন্য সদস্যদের দেখা মেলে। চারুকলা অনুষদের নির্মাণকালীন দাঁড়ানো অবস্থায় একটি বিশেষ ভঙ্গিমায় ধরা দিয়েছেন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন। আরেক ছবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সড়কদ্বীপে গাইছেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত গণসঙ্গীতশিল্পী হেমাঙ্গ বিশ্বাস। আছে ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বার উন্মোচনের চিত্র। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ছাত্রী ও ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের নেত্রী লীলা নাগের দেখা মেলে একটি ফ্রেমে। আরেক ছবিতে দেখা যায় ডাকসু কর্তৃক আজীবন সদস্যপদের কাগজে স্বাক্ষর করছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৪০ সালে তোলা এক ছবিতে একটি শ্রেণীকক্ষের চিত্রে কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে দেখা যায় এক শিক্ষককে। স্বাধীন দেশে তৎকালীন উপাচার্য ড. আবুল মতিন চৌধুরীর শিক্ষার্থীদের নিয়ে কৃষকদের পাশে দাঁড়ানো ছবিটি বলে যায় দেশ গঠনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ভূমিকার কথা। প্রথম নির্মিত শহীদ মিনারের পাশে ভাষাশহীদ বরকতের লাশে তাঁর মা ও বোনের বেদনার্ত অভিব্যক্তির ছবিটি দর্শককে ফিরিয়ে নেয় বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে। স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতাদের শপথ গ্রহণের দৃশ্যটি মেলে ধরে মুক্তিযুদ্ধের পূর্বপ্রস্তুতির চিত্র। কারুকাজ খচিত প্রাচীন স্থাপনা মুসাখার মসজিদের ছবিটিতে ধরা দিয়েছে নানা স্থাপনা। বর্তমানে মধুর ক্যান্টিন নামে পরিচিত এক সময়ের নবাবদের জলসাঘরের পুরনো ছবিতে দৃশ্যমান সোনালী অতীত। ভাষা আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে মোনাজাতরত অবস্থায় পেছন থেকে দেখা যায় বঙ্গবন্ধুকে। বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারির দিন তোলা এক ছবিতে দেখা যায়, কলা ভবনের সামনে ১৪৪ ধারা ভাঙ্গার প্রস্তুতি নিচ্ছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। মানবহিতৈষী ও সমাজসেবী মাদার তেরেসার ছবিও ঠাঁই পেয়েছে প্রদর্শনীতে। ওই ছবিতে দেখা যায়, ১৯৮১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হীরকজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে তিনি বক্তৃতা করছেন। প্রদর্শনীর উদ্বোধনী বক্তব্যে আরেফিন সিদ্দিক বলেন, এক শতকের অনন্য এক মাইলফলক ছোঁয়ার অভিযাত্রায় ৯৫তম বছরে পা রাখল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ প্রতিরোধ ও মানবিক চেতনা বিকাশে উচ্চশিক্ষা’। এসব আলোকচিত্রে উঠে এসেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবময় ইতিহাস। রঞ্জন কর্মকার বলেন, এ বছর ১০০টি আলোকচিত্র নিয়ে প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। আগামী দু’বছরেও ১০০টি করে আলোকচিত্র নিয়ে আরও দুটি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষে সবগুলো আলোকচিত্র নিয়ে বড় করে একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে। আজ শুক্রবার থেকে প্রদর্শনীটি স্থানান্তরিত হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি)। শনিবার পর্যন্ত চলমান প্রদর্শনী বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
×