ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদের ছুটিতে নিরাপত্তা

প্রকাশিত: ০৩:৫৫, ২ জুলাই ২০১৬

ঈদের ছুটিতে নিরাপত্তা

ছুটির সময় কিছুটা ঢিলেঢালা ভাব নতুন কিছু নয়। বিশেষ করে ঈদের মতো বড় উৎসবের ছুটির বেলায় এমনটা হওয়া খুব অস্বাভাবিক বলা যাবে না। তাই ছুটির আগে বরাবরই প্রশাসনের পক্ষ থেকে আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গৃহীত হতে দেখা যায়। অন্যান্য বছরের ঈদের ছুটির সঙ্গে এবারের ঈদ-উল-ফিতরের ছুটিকে মেলানো যাবে না। শুক্র-শনিবারের কল্যাণে এবং সরকার ঘোষিত আরেকটি বাড়তি ছুটির ফলে এবার ঈদের ছুটি গিয়ে দাঁড়িয়েছে নয় দিনে। এটিকে দেশের সর্বোচ্চ ছুটি হিসেবে দেখা যেতে পারে। সাধারণত দেড়-দুই কোটি জনসংখ্যার ঢাকা মহানগর ঈদের সময় অনেকটাই ফাঁকা হয়ে যায়। এর কারণ, ঢাকায় বসবাসকারী অধিকাংশ মানুষই এসেছেন ঢাকার বাইরে থেকে। ঈদ উপলক্ষে তাদের সিংহভাগ ঢাকা ছাড়েন। এবার ৯ দিনব্যাপী ঈদের ছুটিতে প্রায় ফাঁকা হয়ে যাবে ঢাকা, এটা ধারণা করা যায়। বৃহস্পতিবার থেকেই নগরবাসী ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছেন। ঈদের ছুটির সময় বাসাবাড়ি ফাঁকা হয়ে যাওয়ায় চুরির পরিমাণ বেড়ে যায়। এ ছাড়া রাস্তাঘাট ফাঁকা থাকায় ছিনতাইকারীরাও তৎপর হয়ে ওঠে। এ জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঈদের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে বরাবরই আমরা জোরদার করতে দেখি। ঈদের আগের দিন পর্যন্ত মার্কেটকেন্দ্রিক বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবারও থাকছে। ঈদের আগে থেকেই ঈদগাহকেন্দ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হবে। ঈদের পরবর্তী দিনগুলোয় বাসাবাড়ি, শপিংমল ও জুয়েলারি দোকানগুলোতে বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হবে। ঢাকার মতো আর কোন নগরী ঈদ উপলক্ষে এতখানি জনশূন্য হয় না বলেই ঢাকার নিরাপত্তার বিষয়টি অগ্রগণ্য হয়ে থাকে। এবার ঈদ উপলক্ষে বিভাগীয় কমিশনার ও ডিসিদের সতর্ক থাকার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে সঙ্গত কারণেই। দেশের স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করার অপচেষ্টায় দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে একটি চক্র। যুদ্ধাপরাধীদের একের পর এক ফাঁসি কার্যকর হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে দেশকে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দেয়ার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। ঈদের টানা নয় দিনের ছুটিতে ছুটির আমেজ বিরাজ করার ফলে নিরাপত্তার কিছুটা শিথিলতা দেখা দেয়া অস্বাভাবিক নয়। এই সুযোগটাই নিতে পারে চিহ্নিত অপশক্তি। তাই সরকার সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ঈদের দীর্ঘ ছুটিতে কোন পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলায় বা কোনভাবে যাতে অস্থিরতা সৃষ্টি না হতে পারেÑ সে বিষয়ে বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। বুধবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে বিভাগীয় কমিশনারদের এক অনুষ্ঠানে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের এই নির্দেশনা দেয়া হয়। এ ছাড়া ব্যাংকিং বিভাগ থেকে ঈদের ছুটিতে ব্যাংকগুলোর নিরাপত্তার বিষয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ের দায়িত্বশীল ব্যক্তিগণ তাদের কর্তব্য পালনের অংশ হিসেবেই ঈদের মতো বড় ছুটিতে বিশেষ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন। তার পরও সরকারের পক্ষ থেকে সতর্ক থাকার নির্দেশ প্রদান করার অর্থ হচ্ছে দেশের মানুষের ভেতর এমন মনোভাব জাগানো যাতে তারা ভয়ভীতির উর্ধে থেকে আনন্দমুখর পরিবেশে বড় ধর্মীয় উৎসব উদযাপন করতে পারেন। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ঈদের ছুটিতে মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। এতে হয়ত তাদের কিছুটা ত্যাগ স্বীকার করতে হতে পারে। তাদের কারও কারও পক্ষে পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদের দীর্ঘ আনন্দে যুক্ত হওয়ার সুযোগও কমে আসতে পারে। তবে অপশক্তির ধ্বংসাত্মক তৎপরতা রুখে দিয়ে দেশের মানুষের নিরাপত্তা বিধানের পবিত্র দায়িত্ব পালনেও যে রয়েছে সুখ, তৃপ্তি ও আনন্দÑ সে কথা বলাই বাহুল্য।
×