ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়তে তথ্যপ্রযুক্তিতে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা

প্রকাশিত: ০৫:১২, ২ জুলাই ২০১৬

জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়তে তথ্যপ্রযুক্তিতে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা

ফিরোজ মান্না ॥ জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলতে সরকার তথ্যপ্রযুক্তি সেক্টরে স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে জনগণের ক্ষমতায়ন ও দারিদ্র্য দূরীকরণে বড় ভূমিকা রাখবে। বর্তমান বিশ্ব শ্রমনির্ভর থেকে জ্ঞাননির্ভর অর্থনীতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নের পাশাপাশি মানুষকে নিরাপদ রাখতে সাইবার নিরাপত্তাও নিশ্চিত করার জন্য নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সাইবার নিরাপত্তার জন্য বিশ্বের বড় বড় সাইবার সিকিউরিটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। অনেক প্রতিষ্ঠান সাইবার নিরাপত্তা দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। সম্প্রতি তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এ তথ্য জানিয়েছেন। প্রতিমন্ত্রী বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির ফসল এখন প্রতিটি ঘরেই পৌঁছে গেছে। ২০২১ সালের আগেই সরকারের ভিশন বাস্তবায়ন করা হবে। বর্তমানে দেশের পাঁচ হাজারেরও বেশি ইউনিয়ন ডিজিটাল কেন্দ্র থেকে প্রতিদিন ৪০ লাখ মানুষ সেবা পাচ্ছেন। ই-কমার্স, ই-পেমেন্ট, মোবাইল ব্যাংকিং, থ্রীজি ইত্যাদি সুবিধা নিচ্ছে কোটি কোটি মানুষ। সাড়ে আট হাজার ডাকঘরে ই-পোস্ট রূপান্তরের কাজ শুরু করা হয়েছে। ডিজিটাল ল্যান্ড জোনিংয়ের কাজও এগিয়ে যাচ্ছে। ই-গবর্নেন্স চালু, তথ্যপ্রযুক্তি পার্ক ও বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের কাজও অব্যাহত রয়েছে। এসব শেষ হলে তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলাদেশ আরও এগিয়ে যাবে। মানুষকে তথ্যপ্রযুক্তির চূড়ান্ত সুবিধার পথে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনেক কর্মসূচী বাস্তবায়ন করা হলেও একটি জিনিস এখন পর্যন্ত নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। সেটা হচ্ছে সাইবার নিরাপত্তা। আমরা চেষ্টা করছি সাইবার নিরাপত্তা কিভাবে তৈরি করা যায়। তবে এটা অনেকটা ব্যয়বহুল বলে এখনও সম্ভব হচ্ছে না। তবে আশা করছি, আমাদের দেশের তরুণরাই অনেকটা সাইবার নিরাপত্তার জন্য বিভিন্ন এ্যাপস তৈরি করছে। সম্প্রতি ‘সোনামনি গার্ড’ নামের একটি এ্যাপস তৈরি করেছে দিনাজপুরের এক তরুণ। এই এ্যাপস ব্যবহার করে অনেক খারাপ সাইট থেকে রিরত থাকা যাবে। এদিকে, কম দামে ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য প্রতি এমবিপিএস ৬২৫ টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে। এতে প্রান্তিক জনপদগুলোতেও ইন্টারনেটের ব্যবহার বেড়েছে। দেশে বর্তমানে মোবাইল গ্রাহক ১১ কোটি ৬০ লাখ আর ইন্টারনেট ব্যবহারকারী হচ্ছে ৫ কোটি ৭০ লাখ। এ অর্জন সম্ভব হয়েছে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের কারণে। সরকারের এই উদ্যোগগুলোর সফলতার বড় সহযোগী মোবাইল অপারেটর, বিসিএস, বেসিস, আইএসপিএবিসহ বিভিন্ন তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান। ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের যাত্রা শুরু হয়। এরপর থেকে প্রতিবছরই নতুন নতুন উদ্যোগ বাস্তবায়ন করে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের গতি আরও ত্বরান্বিত হচ্ছে। শ্রমনির্ভর থেকে জ্ঞাননির্ভর অর্থনীতির পথে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। প্রথমে মানুষের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্য স্থির করা হয়েছিল। সে লক্ষ্য অর্জনে সরকার অনেকটাই সফল। এখন চলছে হাতের মুঠোয় তথ্য ও সেবা পৌঁছে দেয়ার কাজ। আর এসব লক্ষ্য বাস্তবায়নে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সম্প্রসারিত করা হচ্ছে প্রত্যন্ত এলাকা পর্যন্ত। ফলে গ্রামের মানুষও এখন বিশ্বগ্রামের সঙ্গে যুক্ত হতে পেরেছে। ইন্টারনেট ক্রমশ মানুষের জীবনেরই অংশ হয়ে উঠছে। তাদের জীবনকে করছে স্বপ্নময়। জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে তথ্যপ্রযুক্তিই মানুষের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হয়ে উঠছে। সূত্র জানিয়েছে, ২০১১ সালের ৪ ডিসেম্বর পৃথক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরবর্তীতে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় ও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের কাজে সমন্বয়ের উদ্যোগ নেয়া হয়। কারণ এ দুটি মন্ত্রণালয় একটি অপরটির সঙ্গে সম্পর্কিত। যৌথভাবে তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে এগিয়ে নিতে কাজ করে যাচ্ছে। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীনে দুটি বিভাগ করা হয়েছে। একটি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ ও অন্যটি ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অধীন সংযুক্ত ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদফতর, কন্ট্রোলার অব সার্টিফাইং অথরিটি (সিসিএ) এবং বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ। আর ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অধীন প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি), বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল), বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানি লিমিেিটড (বিএসসিসিএল)।
×