ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদের কেনাকাটা

বিপণিবিতান শপিংমল ফুটপাথ- সবখানেই উপচেপড়া ভিড়

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ২ জুলাই ২০১৬

বিপণিবিতান শপিংমল ফুটপাথ- সবখানেই উপচেপড়া ভিড়

রহিম শেখ ॥ বড় উৎসব। বিরাট আয়োজন। এ নিয়ে মাতোয়ারা সারাদেশ। চলছে ঈদের কেনাকাটার ধুম। শেষ সময়ের কেনাকাটায় ব্যস্ত রাজধানীবাসী। যারা বাড়ি ফেরার পথে, তাদের সবাই ঈদ কেনাকাটা প্রায় শেষ করেছেন। যারা ঢাকায় আছেন, তারাও শেষ মুহূতের্র কেনাকাটায় অংশ নিতে ছুটছেন শপিংমলে। ব্যস্ততার কারণে এতদিন যারা ঈদের কেনাকাটা করতে পারেননি, তারাও রয়েছেন এ তালিকায়। নগরীর ফুটপাথ থেকে শুরু করে মার্কেট, বিপণিবিতান ও শপিংমলগুলোতে ছিল উপচেপড়া ভিড়। কোথাও যেন তিল ধারণের ঠাঁই নেই। কেনাকাটা করতে আসা মানুষের ভিড় মার্কেট ছাড়িয়ে রাজপথে এসে ঠেকে। যেখানে ভিড়, সেখানেই ভোগান্তি ও বিড়ম্বনা। পাশাপাশি দিনভর যানবাহনের অতিরিক্ত চাপে অলিগলি থেকে শুরু করে মূল সড়কে ছিল প্রচ- যানজট। পবিত্র রমজান মাসের শেষ শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে এমন দৃশ্য ছিল গোটা রাজধানীর ঈদবাজারে। রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি, নিউমার্কেট, গাউছিয়া, চাঁদনীচক, রাপা পাজা, প্লাজা এআর, মেট্রো শপিংমল, অর্চার্ড পয়েন্ট, সীমান্ত স্কোয়ার, মিরপুর রোডের বদরুদ্দোজা মার্কেট, এলিফ্যান্ট রোড, অর্কিড প্লাজা, সানরাইজ প্লাজা, ইস্টার্ন মল্লিকা, কর্ণফুলী গার্ডেন সিটি, পলওয়েল সুপার মার্কেট, গাজী ভবন ও যমুনা ফিউচার পার্ক ঘুরে দেখা গেছে, শেষ মুহূর্তের কেনাকাটায় প্রায় প্রতিটি মার্কেটে ছিল ক্রেতার উপচেপড়া ভিড়। মধ্যবিত্তদের ঠিকানা ফার্মগেট, গুলিস্তান, মতিঝিল, পল্টন, ঢাকা কলেজ, মিরপুর গোলচত্বর ও নিউমার্কেট-এলিফ্যান্ট রোডের ফুটপাথে ক্রেতার সংখ্যা ছিল চোখে পড়ার মতো। এছাড়া পাড়া-মহল্লার শপিংমল, ফ্যাশন হাউস ও বুটিক হাউসগুলোতে চলছে শেষ সময়ে ঈদের বেচাকেনা। এসব ফ্যাশন হাউসও মাঝরাত পর্যন্ত খোলা রেখে বেচাবিক্রি করছেন বিক্রেতারা। দোকানিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রমজানের শেষ শুক্রবার এবং ছুটির দিন বলেই ক্রেতার সংখ্যা ও বিক্রি আগের তুলনায় বেড়েছে। তাই বিক্রি নিয়ে সন্তুষ্টির কথা জানালেন ব্যবসায়ীরা। এদিকে শপিংমল, বিপণিবিতান, রাস্তা-ফুটপাথজুড়ে ঈদের কেনাকাটা জমে ওঠায় নগরীতে ছুটির দিনেও ছিল অতিমাত্রায় যানজট। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বসুন্ধরা সিটি, নিউমার্কেট, গাউছিয়া, এলিফ্যান্ট রোড, ধানম-ি হকার্স মার্কেট, গুলিস্তান, কর্ণফুলী গার্ডেন সিটি, মৌচাক মার্কেটসহ বিভিন্ন স্থানের বিপণিবিতানগুলোর সামনে যানজট ছিল অসহনীয়। নগরীর প্রধান সড়কগুলোর বাইরে অলিগলিতেও দেখা গেছে যানবাহনের লম্বা লাইন। রিক্সা, প্রাইভেটকার, অটোরিক্সা স্থির হয়ে থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়ে সাধারণ মানুষ। এদিকে, মার্কেটগুলোর সামনে যানজট মোকাবেলায় হিমশিম খেতে হয় কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশদের। মার্কেটগুলোতে পার্কিংয়ের জায়গা না থাকায় অনেকে রাস্তায় গাড়ি পার্ক করেছেন। এতে সড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, শাড়ি ও থ্রি-পিস থেকে শুরু করে পাঞ্জাবি, টি-শার্ট, পোলো শার্ট ও জিন্স প্যান্টের দোকানে ভিড় ছিল লক্ষণীয়। ক্রেতারা শুধু পোশাকই নয়, দলবেঁধে ছুটেছেন এক দোকান থেকে অন্য দোকানে। পোশাকের সঙ্গে ম্যাচ করে পরার জন্য চুড়ি, ইমিটেশন, ব্রেসলেট, পারফিউম, লিপিস্টিক-নেইল পলিশসহ নানা কসমেটিকস, স্বর্ণালঙ্কার, হাতঘড়ি, গিফট কার্ড থেকে শুরু করে ঘর-গৃহস্থালির সবকিছুই কিনছেন। এদিন কেনাকাটায় পিছিয়ে ছিল না শিশুরাও। শিশুদের পোশাক, খেলনাসামগ্রী ও জুতার দোকানেও ছিল ঠাসা ভিড়। বাদ নেই ইলেক্ট্রনিক্স ও মোবাইলের দোকানও। পাল্লা দিয়ে চলছে বিকিকিনিও। শুধু রাজধানী নয়, নগরীর বাইরে থেকেও ক্রেতারা আসছেন কেনাকাটা করতে। শুক্রবার তেমনি একজন ক্রেতা সাভারের মিষ্টি আক্তারের সঙ্গে কথা হয় বসুন্ধরা শপিংমলে। স্বামী ও দুই সন্তানকে নিয়ে কেনাকাটা করতে এসেছেন তিনি। আলাপ করতেই তিনি জানান, মায়ের বাড়ি ধানম-িতে। তাই শপিং করতে আসা। জানালেন, নিজের জন্য ঈদের শাড়ি কিনেছেন। বাচ্চাদের জন্য ড্রেস কিনেছেন, ইলেক্ট্রনিক্সের পণ্য ও কিছু খেলনাসামগ্রী কিনেছেন। শুক্রবার দুপুরে এলিফ্যান্ট রোডে কথা হয় সাব্বির রহমানের সঙ্গে। তিনি জানালেন, নারায়ণগঞ্জ থেকে ঈদের কেনাকাটা করতে এসেছেন। জানান, সারাবছর কেনাকাটা করা হয়; কিন্তু ঈদের সময় নতুন নতুন ডিজাইন আসে। এ সময়ে কেনাকাটা করতে আনন্দ লাগে। আবার বেড়ানোও হয়। বসুন্ধরা সিটিতে কথা হয় একটি বেসরকারী কোম্পানির কর্মকর্তা আসিফ আহমদের সঙ্গে। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, এতদিন অফিস সেরে ভিড় ঠেলে কেনাকাটা করতে আসা হয়নি। এবার ঈদ ঢাকাতেই করছি। তাই শেষ সময়ে ছুটির দিনে মার্কেটে আসা। ক্রেতাদের ভিড়ে কেনাকাটা করাই দায় বলে তিনি জানান। শুক্রবার বিকেলে আজিজ সুপার মার্কেটে পাঞ্জাবি কিনছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাহসান। তিনি বলেন, একটি পার্টটাইম চাকরি করায় বিশ্ববিদ্যালয় ছুটি হলেও বাড়ি যেতে পারিনি। রবিবার রাতে বাড়ি ফিরব। মা-বাবার জন্য কেনাকাটা করে ফেলেছি। এখন নিজের ও ছোট ভাইয়ের পাঞ্জাবি কিনতে এলাম। এদিকে, শুধু ফুটপাথের ব্যতিক্রম ছাড়া অন্যসব স্থান তরুণী এবং গৃহবধূ ক্রেতাদের দখলে ছিল। তারা পোশাক কিনতে দিনভর ছুটেছেন এক মার্কেট থেকে আরেক মার্কেটে। শুক্রবার ভিড়ের কারণে কেনাকাটা করতে অনেক ঝামেলায় পড়তে হয়েছে বলে একাধিক ক্রেতা জানান। গাউছিয়া মার্কেটে কথা হয় ধানম-ির বাসিন্দা ফারহানা সুলতানার সঙ্গে। তিনি বলেন, ক্রেতাদের বেশি ভিড়ের মধ্যে দামাদামী করা যায় না। এ সুযোগে বিক্রেতারা বেশি দাম নিয়ে থাকেন। তিনি বলেন, একই পোশাকের হরেক দাম। আফসানা নামের আরেক ক্রেতা বলেন, দোকানিরা ইচ্ছামতো হাঁকাচ্ছে পোশাকের দাম। স্থান ও পরিবেশের কারণে একই পোশাক কোন কোন মার্কেটে দ্বিগুণ ও তিনগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে। বসুন্ধরা সিটিতে কথা হয় বেসরকারী ব্যাংকের কর্মকর্তা মনির হোসেনের সঙ্গে। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, রাজধানীর পলওয়েল মার্কেটের পণ্য গুলশান ও বসুন্ধরায় গিয়ে বিক্রি হচ্ছে কয়েকগুণ বেশি দামে। আবার বঙ্গবাজার থেকে একই পোশাক বিভিন্ন মার্কেট ও ফুটপাথে গিয়ে বিক্রি হচ্ছে ভিন্ন দামে। এলিফ্যান্ট রোড এলাকায় জুতার দোকানে বিক্রেতার সঙ্গে দরকষাকষি করছিলেন আজিমপুরের বাসিন্দা ইসরাত জাহান মিতু। তিনি জানান, গতবারের তুলনায় বাচ্চাদের জুতার দাম অনেক বেশি। বড়দের জুতার দামও বেশি নেয়া হচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। ফুটপাথে বেচাকেনা ॥ রাজধানীর গুলিস্তান, পল্টন, মতিঝিল, বায়তুল মোকাররম, মৎস্য ভবন রোড, ফার্মগেট, মিরপুর-১, মিরপুর-১০, যাত্রাবাড়ীসহ রাজধানীর প্রায় সব ফুটপাথে ক্রেতার উপচেপড়া ভিড় ছিল শুক্রবার। ছুটির দিনে জমে ওঠে ফুটপাথের দোকানগুলোও। নিম্ন ও স্বল্পআয়ের মানুষের কেনাকাটার ভরসা এ ফুটপাথ। বায়তুল মোকাররমের সামনের ফুটপাথে সর্বনিম্ন ২শ’ ৫০ থেকে ৭শ’ টাকা দামের পাঞ্জাবি বিক্রি হতে দেখা যায়। এছাড়া শার্ট বিক্রি হচ্ছে ৩শ’ থেকে ৬শ’ টাকায়। প্যান্ট ৩শ’ থেকে ৭শ’, জুতা ৪শ’ থেকে ৭শ’, স্যান্ডেল ১৫০-৩০০ এবং বাচ্চাদের বিভিন্ন আইটেমের পোশাক পাওয়া যাচ্ছে ১৫০ থেকে ৭শ’ টাকায়। এছাড়া শাড়ি, লুঙ্গি, তরুণীদের থ্রি-পিস, জুতা ও কসমেটিকস ফুটপাথে বিক্রি হচ্ছে দেদার।
×