ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আয়োজন ছাড়াই ঈদমেলা

প্রকাশিত: ০৭:১২, ২ জুলাই ২০১৬

আয়োজন ছাড়াই ঈদমেলা

ঈদের দিনে আপন মনেই মেলা বসে। ভাসমান এই মেলা ঈদের আনন্দের বাতায়নেরই মেলা। আগে থেকেই কোন দিনক্ষণ থাকে না। কোথায় মেলা বসবে তারও ঠিকানা নেই। ঈদের বিশেষ করে রমজানের ঈদের নামাজের পরই কি শহর কি গ্রাম সব জায়গাতেই মেলার আবহ পেয়ে বসে। এই মেলায় প্রথম আসে নানা ধরনের বেলুনওয়ালা। শহরের সকল পথের ধারেই এরা ঘাঁটি করে নেয়। লোকে বলে বেলুনের মেলা। ঈদের আনন্দে এই বেলুন শুধু ছোটদেরই না, বড়রাও মজা পায় কিনে। গ্যাস বেলুন নিয়ে কতই না খেলা। ঘরে ছেড়ে দিলে ছাদে গিয়ে ঠাঁই নেয়। ঘরের বাইরে এই বেলুন শুধু ওপরে উঠতেই চায়। ছেড়ে দিলেই উড়ে চলে যায় ওপরে। এটাই আনন্দের। ঈদের দিনে কত যে বাহারি বেলুন এখন এসেছে! বাঁশি বেলুন ছোটদের প্রিয়। বেলুন ফুলিয়ে বাঁশের বাঁশির মতো ছিদ্রতে আঙুল এদিক সেদিক করে সুর তোলা যায়। শিশুরা বেসুরো সুরকেই সুরেলা মনে করে আনন্দ পায়। বড়রাও কম যায় না। তারাও সুর তোলার চেষ্টা করে কখনও বেলুনই ফাটিয়ে ফেলে। ঈদের মেলা কবে কিভাবে এসেছে তা ইতিহাসে বর্ণিত আছে। মুঘলদের আমলে ঢাকাতেই ঈদমেলার গোড়াপত্তন। তারপর আর থেমে থাকেনি। ঈদের আনুষ্ঠানিক মেলার পাশাপাশি অনির্ধারিত ঈদমেলার হিসাব নেই। এই মেলা এখন শহর ছাড়িয়ে উপজেলা পর্যায়েও ছুঁয়েছে। ঈদ-উল-ফিতরের দিনই এখন দেশজুড়ে মেলা। উত্তরাঞ্চলের মধ্য নগরী বগুড়ায় বছর দশেক আগেও শহরের কেন্দ্রস্থল সাতমাথার আশপাশে দোকানিরা পসরা সাজিয়ে বসত। দিনের কয়েক ঘণ্টা বেচাকেনার পর ফাঁকা হয়ে যেত। বর্তমানে সাতমাথার ব্যপ্তি ছড়িয়ে পড়েছে পাড়া মহল্লায়। আর শহরের এ্যাডওয়ার্ড পার্ক পরিণত হয় মেলার পার্কে। স্বাভাবিক সময়ে পার্কে যত লোকের আনাগোনা ঈদের দিন তা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। সকল বয়সের নারী পুরুষ শিশু মিলিত হয় এই পার্কে। মনে হবে ঈদের মিলনমেলা বসেছে। মেলায় দোকানিরা পসরা সাজিয়ে পার্কের চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে অবস্থান নেয়। বিদেশী চ্যানেলগুলোতে কার্নিভালের যেমন আয়োজন দেখা যায়, বগুড়া এ্যাডওয়ার্ড পার্কের এই মেলাকে চিত্রায়িত করলে তেমনই দেখতে হবে। তরুণ তরুণীদের উচ্ছ্বাসে পার্কের এই মেলা তারুণ্যের আভা ছড়িয়ে দেয়। বিশেষ করে পার্কে স্থাপিত ব্রিটিশ সম্রাট সপ্তম এ্যাডওয়ার্ডের স্ট্যাচুর সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুললে মনে হবে বিদেশী কোন মেলারই ছবি। বগুড়ায় ঈদের এই অনির্ধারিত মেলার রেশ চলে টানা কয়েক দিন। পার্কের উন্মুক্ত ওস্তাদ আলাউদ্দিন মঞ্চে ঈদমেলাকে ঘিরে আয়োজন করা হয় বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের। এর একটি নাগরিক মঞ্চ। এই দিনে মঞ্চের চারধারে নানা ধরনের পণ্য নিয়ে আসে ভাসমান দোকানিরা। মনে হয় আগে থেকেই বুঝি মেলার আনুষ্ঠানিকতা করা আছে। শহরের চেলোপাড়ায় করতোয়া নদীর ধারে ঈদের অনির্ধারিত মেলা চালু হয়েছে। ঈদের দিনে নদীর পাড়ে বেড়াতে যায় অনেকে। যদিও করতোয়া নদী এখন মৃতপ্রায়। তারপরও খালের মতো দেখতে এই নদীকেই মনে পড়ে একদা ছিল প্রমত্তা। ঈদে মেলার আবেশে মানুষের মনের কোণায় ফিরে আসে সেই নদী। ঈদের মেলা না বসলে মানুষের মনে নদী হয়ত প্রাণ ফিরে পেত না। ঈদের মেলা আনন্দের স্পন্দনেই ফুটে ওঠে। Ñসমুদ্র হক, বগুড়া থেকে
×