ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ইস্তানবুলে বোমা হামলা

প্রকাশিত: ০৪:০৪, ৩ জুলাই ২০১৬

ইস্তানবুলে বোমা হামলা

ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থার পরও ইস্তানবুলের আতাতুর্ক বিমানবন্দরে তিনটি আত্মঘাতী বোমা হামলা হয়েছে মঙ্গলবার। এতে ৪২ জন নিহত হয়েছে, আহতের সংখ্যা আড়াই শতাধিক। ঘটনায় সন্দেহের তীর আইএসের দিকে। তুরস্কের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সাম্প্রতিক আইএসের ওপর ব্যাপক ধরপাকড় চালায়। এটা আইএসের পাল্টা আক্রমণ বলে ধারণা করা হয়। এটাই তুরস্কে এ বছরের প্রথম হামলা নয়। চলতি বছরে এই নিয়ে চারটি জঙ্গী হামলার ঘটনা ঘটল। বছরের প্রথম দিকে আইএস হামলায় কেঁপে উঠেছিল ইস্তানবুল। দ্বিতীয় হামলাটি হয়েছিল রাজধানী আঙ্কারায়। নিহত হয়েছিল ২৮ জন। এরপর ফের আঙ্কারায় গাড়ি বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল জঙ্গীরা। মূলত প্রতিবেশী রাষ্ট্র সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধের কারণে একের পর এক সন্ত্রাসবাদী আক্রমণের নিশানা হয়েছে তুরস্ক। মঙ্গলবারের হামলা এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে ভয়ঙ্কর। উল্লেখ্য, গত বছরের অক্টোবরে তুরস্কের তেলের ওপর আঙ্কারায় প্রাণঘাতী দুটি হামলা হয়। কুর্দিস ও বামপন্থীদের একটি শান্তিপূর্ণ র‌্যালিতে সে হামলায় নিহত হয় ১০৩ জন। আরেকটি হামলায় আহত হয় ২৫০ জন। এসব ঘটনা বিশ্ববাসীকে হতবাক করে। চলতি বছর তিনটি হামলা হওয়ার পর কয়েক মাস ধরে ইস্তানবুলে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, হামলাগুলো পরিচালনা করেছে ইসলামিক স্টেট জিহাদিস্ট ও কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টির (পিকেকে) নিষিদ্ধ ঘোষিত শাখা কুর্দিস্তান ফ্রিডম হকস। ইস্তানবুলের ভেজনেসিলারে সাম্প্রতিক এক আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলায় ১২ জন নিহত হয়। কুর্দিস্তান ফ্রিডম হকস সে ঘটনার দায় স্বীকার করে বিদেশী পর্যটকদের হুঁশিয়ার করে ওয়েবসাইটে লিখে, ‘তুরস্ক আর তাদের জন্য নিরাপদ নয়।’ তারা বলে, এ বোমা হামলা তাদের প্রভাবালয় দক্ষিণ-পূর্ব কুর্দিসে চলমান নিরাপত্তা কর্মসূচীর প্রতিশোধস্বরূপ। তারা এ হামলা অব্যাহত রাখারও হুমকি দেয়। এর আগে এপ্রিল মাসে আঙ্কারায় দুটি পৃথক আত্মঘাতী হামলার দায়ও এরা স্বীকার করে। সেবারও ২৯ জন মারা যায়। ইস্তানবুলের বিমানবন্দরে মঙ্গলবারের সর্বশেষ বোমা হামলার জন্য তুরস্ক প্রশাসন আইএসকে দায়ী করছে। তুরস্কের বহু সাধারণ নাগরিক এতে চিন্তিত ও ক্ষুব্ধ। কারণ যে যুদ্ধ তাদের দেশের সীমান্তে শুরু হয়েছে, তা এখন ছড়িয়ে পড়ছে গোটা তুরস্কে। বিষয়টি উদ্বেগের এবং শঙ্কিত হওয়ার মতো। আইএস মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংগঠন হলেও ক্রমেই তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ছে। তুরস্ক ছাড়াও তাদের টার্গেটে পরিণত হয়েছে ফ্রান্স ও রাশিয়াসহ উন্নত বিশ্বের কয়েকটি দেশ। এতে বিশ্ব শান্তি হুমকির মুখে। এই ধরনের জঙ্গী হামলা বা সন্ত্রাসবাদ যারাই ঘটিয়ে থাকুক, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষ তারা সবার অভিন্ন শত্রু। সন্ত্রাসবাদকে নির্মূল করতে হবে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে, সম্মিলিতভাবে। জঙ্গীবাদ নির্মূলে ইতোমধ্যে যেসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, সেসবের কার্যকারিতা নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন। দেখা গেছে, পশ্চিমা পদক্ষেপ বিভিন্ন সময়ে জঙ্গীবাদকে আরও উসকে দিয়েছে। এভাবে যে জঙ্গী দমন সম্ভব নয়, তা বার বার প্রমাণিত হয়েছে। এর সর্বশেষ প্রমাণ ইস্তানবুলে হামলা। জঙ্গীবাদ নির্মূলে সর্বাগ্রে এর কারণগুলো দূর করা প্রয়োজন। যেসব কারণে বিশ্বে জঙ্গীবাদ সৃষ্টি ও সম্প্রসারিত হচ্ছে, সেগুলো সঠিকভাবে চিহ্নিত করে নিতে হবে সুচিন্তিত পদক্ষেপ। উদাহরণস্বরূপ, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে সৃষ্ট বিশৃঙ্খলা এবং এর ফলে উদ্ভূত শরণার্থী সমস্যার দিকে দৃষ্টিপাত করতে হবে বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে। পুরনো সূত্র ধরে জঙ্গীবাদ নির্মূল করা যাবে না। তারা সময়ে কৌশল বদলায়। আমরা আশা করব, বিশ্ব নেতৃবৃন্দ জঙ্গীবাদ মোকাবেলায় তাদের কৌশল পরিবর্তন করার কথা ভাববে। ইস্তানবুলে এই বর্বরোচিত হামলার ঘটনায় আমরা গভীরভাবে মর্মাহত। বিশ্ব থেকে এ ধরনের সহিংসতার অবসান ঘটুক এই প্রত্যাশা সবার।
×