ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

প্রকাশিত: ০৪:০৭, ৩ জুলাই ২০১৬

জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম প্রিয় দেশবাসী ভাই ও বোনেরা, আসসালামু আলাইকুম। আপনারা জানেন, গতরাতে কতিপয় অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী রাজধানীর গুলশানের একটি রেস্টুরেন্টে হামলা চালায়। সেখানে অবস্থানরত নিরস্ত্র, বেসামরিক নাগরিকদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে এবং হত্যাকা- শুরু করে। পবিত্র রমজান মাসে ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা যখন এশা ও তারাবির নামাজের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তখন এই হামলা ধর্ম ও মানবিকতাকে অবমাননা করেছে। এই বর্বর ও কাপুরুষোচিত আক্রমণ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ বাংলাদেশে নজিরবিহীন। হামলার সংবাদ পাওয়ার সাথে সাথেই আমার সরকার দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার উদ্যোগ নেয়। পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবিসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দ্রুত সেখানে পৌঁছায় এবং উদ্ধার অভিযান শুরু করে। পরবর্তী সময়ে সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনীর কমান্ডোরা অভিযানে অংশগ্রহণ করে আজ সকালে জিম্মিদের মুক্ত করে আনে। ৬ জন হামলাকারী ঘটনাস্থলেই নিহত হয়। তিনজন বিদেশীসহ ১৩ জন জিম্মিকে আমরা অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করতে সমর্থ হই। এ অভিযানে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনী, ফায়ারসার্ভিসসহ অন্যান্য বাহিনীর যেসব সদস্য অংশ নিয়েছেন আমি তাঁদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। বিশ্ব সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ যারা আমাদের সাথে একাত্মতা ও সংহতি প্রকাশ করেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। এই নৃশংস হামলায় ২জন পুলিশ সদস্য নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। আমি নিহত পুলিশ সদস্য এবং সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং শোক-সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। আহতরা দ্রুত আরোগ্যলাভ করুন- মহান আল্লাহ-তায়ালার কাছে এই প্রার্থনা করছি। নিহতদের স্মরণে দুই দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করছি। প্রিয় দেশবাসী, বাংলাদেশ যখন একটি আত্মমর্যাদাশীল এবং আত্মনির্ভরশীল দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে তখন দেশী-বিদেশী একটি চক্র বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে বানচালের অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। অস্ত্রের মুখে নিরীহ সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে এরা দেশকে একটি অকার্যকর রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত করাতে চায়। গণতান্ত্রিক পথে মানুষের মন জয় করতে ব্যর্থ হয়ে এরা সন্ত্রাসের পথ বেছে নিয়েছে। কোমলমতি যুবক-কিশোরদের ধর্মের নামে বিভ্রান্ত করে বিপথে ঠেলে দিচ্ছে। তাদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে মানুষ হত্যা করছে। বাংলাদেশের শান্তিপ্রিয় মানুষ ষড়যন্ত্রকারীদের কৌশল বাস্তবায়িত হতে দেবে না। দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে যে কোন মূল্যে আমরা ষড়যন্ত্রকারীদের চক্রান্ত প্রতিহত করব। প্রিয় দেশবাসী, আমাদের উপর আস্থা রাখুন। ত্রিশ লাখ শহীদ এবং ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব আমরা যেকোন মূল্যে রক্ষা করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। মুষ্টিমেয় বিপথগামী সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমি জেলা-উপজেলা পর্যায়ে সন্ত্রাসবিরোধী কমিটি, কম্যুনিটি পুলিশ এবং সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করে সন্ত্রাস মোকাবিলায় এগিয়ে আসার উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি। যেসব কোমলমতি যুবক-কিশোর বিপথে পরিচালিত হচ্ছেন, যারা তাদের মদদ দিচ্ছেন, তাদের কাছে আমার প্রশ্ন- মানুষকে হত্যা করে কী অর্জন করতে চান? ইসলাম শান্তির ধর্ম। ইসলামের নামে মানুষ হত্যা বন্ধ করুন। অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান, আপনার সন্তানকে সুশিক্ষা দিন। তারা যাতে বিপথে না যায় সেদিকে নজর রাখুন। বিপথগামীদের প্রতি আহ্বান আপনারা সঠিক পথে ফিরে আসুন। ইসলামের মর্যাদা সমুন্নত রাখুন। প্রিয় দেশবাসী, সন্ত্রাসীদের সমূলে নির্মূল করে আমরা বাংলাদেশকে একটি শান্তিপূর্ণ রাষ্ট্রে পরিণত করবই, ইনশাআল্লাহ। কোন ষড়যন্ত্রই আমাদের অগ্রযাত্রাকে প্রতিহত করতে পারবে না। আসুন, আমরা সকল ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে একটি নিরাপদ বাংলাদেশ, জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় একযোগে কাজ করি। খোদা হাফেজ। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ চিরজীবী হোক। ২ জুলাই, ২০১৬
×