ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি জাপান ও ভারতের

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ৩ জুলাই ২০১৬

বাংলাদেশের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি জাপান ও ভারতের

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ জিম্মি ঘটনার পর এ বিষয়ে যে কোন সহযোগিতা করতে ভারত প্রস্তুত রয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে টেলিফোনে জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এর আগে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবেও বাংলাদেশের সরকারপ্রধানকে ফোন করে বাংলাদেশের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। এছাড়া আরও কয়েকটি দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান টেলিফোন ও বিবৃতির মাধ্যমে এই কাপুরুষোচিত হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব আশরাফুল ইসলাম খোকন জানান, শনিবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এর আগে সকালে বাংলাদেশের সরকারপ্রধানকে ফোন করে বাংলাদেশের পাশে থাকার আশ্বাস দেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে। উপ-প্রেস সচিব আশরাফুল বলেন, ভারত ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের যে কোন প্রয়োজনে পাশে থাকার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, এ ঘটনার তদন্ত থেকে শুরু করে যে কোন পর্যায়ে সাহায্য করতে ভারত প্রস্তুত রয়েছে। দুই দেশেরই প্রধানমন্ত্রী শুক্রবার রাতের সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা জানান এবং জিম্মি উদ্ধারে সরকারের নেয়া ত্বরিত ব্যবস্থার প্রশংসা করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সময় দুই প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করার জন্য ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি জিম্মিদের উদ্ধারে সরকারের নেয়া ব্যবস্থা সম্পর্কে অবহিত করেন। এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে টেলিফোনালাপের কথা নিজেই টুইট বার্তায় জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। টুইট বার্তায় মোদি বলেছেন, ‘ঢাকায় আক্রমণ আমাদের অনেক কষ্ট দিয়েছে। আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলেছি এবং এ আক্রমণের তীব্র নিন্দা জানাই।’ তিনি আরও জানান, ‘বাংলাদেশের এ শোকের সময় ভারত বাংলাদেশী ভাই ও বোনদের সঙ্গে আছে। আমি শোকসন্তপ্ত পরিবারদের সমবেদনা জানাই এবং যারা আহত হয়েছেন তাদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করি। প্রধানমন্ত্রীর নির্ঘুম একটি রাত ॥ নির্ঘুম রাত কাটালেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিসান রেস্তরাঁয় হামলা এবং দেশী-বিদেশী নাগরিকদের জিম্মির ঘটনায় উদ্বিগ্ন প্রধানমন্ত্রী শুক্রবার সারারাত জেগে সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ, দফায় দফায় সামরিক-বেসামরিক উর্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে যে কোন মূল্যে দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেন। তিনি ধৈর্য সহকারে পুরো পরিস্থিতি সামাল দেয়ারও নির্দেশ দেন। গণভবন সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার পুরো রাত চোখের পাতা এক করতে পারেননি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সন্ত্রাসী হামলার পর থেকেই জিম্মিদের উদ্ধারে উদ্বিগ্ন শেখ হাসিনা দফায় দফায় বৈঠক করেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতেই হলি আর্টিসানে যৌথ কমান্ডো অভিযানেরও পরিকল্পনা হয় গণভবনেই। সেই অনুযায়ী সম্মিলিত বাহিনীর ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’ অপারেশন অল্প সময়ের মধ্যে সফল হওয়ায় এবং জীবিত বেশ কয়েকজন দেশী-বিদেশী নাগরিকের উদ্ধারের খবর শুনে কিছুটা স্বস্তি ফিরে পান প্রধানমন্ত্রী। এরপরও না ঘুমিয়েই সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের অনুষ্ঠানে যোগ দেন শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুক্রবার রাতে দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে সম্প্রতি হত্যাকা-, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদী কর্মকা-ের বিরুদ্ধে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য সারাদেশে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনসমূহের নেতাকর্মীদের মাঠে নামার নির্দেশ দিয়েছেন। শেখ হাসিনার এ নির্দেশনা শনিবার সারাদেশের নেতাকর্মীদের জানিয়ে দেয়া হয়েছে। জানা গেছে, গুলশানের হামলা ও জিম্মির ঘটনার সময়ে শেখ হাসিনা তারাবির নামাজের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ঠিক তখনই হামলা ও বিদেশী নাগরিক জিম্মির ঘটনা অবহিত হন তিনি। এরপর রাতভর জেগে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি কূটনৈতিক যোগাযোগও অব্যাহত রাখেন প্রধানমন্ত্রী। সঙ্গে সঙ্গেই তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উর্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলে জরুরীভিত্তিতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে জিম্মিদের নিরাপদে মুক্ত করার পাশাপাশি বিদেশী কূটনীতিকদের আবাসস্থলের নিরাপত্তা জোরদার করাসহ পদস্থ কর্মকর্তাদের তাৎক্ষণিকভাবে বেশ কয়েকটি জরুরী নির্দেশনাও দেন প্রধানমন্ত্রী। রাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কয়েক দফা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কথা হয়। গণভবনে যৌথ বাহিনীর কমান্ডো অভিযানের দিকনির্দেশনা চূড়ান্ত হয়। এরপরই সফল অভিযানে ১৩ জিম্মিকে উদ্ধার করে যৌথবাহিনী। জঙ্গী দমনে পাশে থাকবে যুক্তরাষ্ট্র জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তরাঁয় সন্ত্রাসীর ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে এ হামলার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা এবং সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গীবাদ প্রতিরোধে সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র জন কারবি বলেন, ‘এ ধরনের নৃশংস সন্ত্রাসবাদের ঘটনার নিন্দা জানাতে আমরা বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে আছি। হামলা প্রতিরোধ করতে গিয়ে নিহত বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসহ ঘটনার শিকার ব্যক্তিদের বন্ধু-বান্ধব ও পরিবারের সদস্যদের প্রতি আমরা সমবেদনা জানাই।’ জিম্মি সঙ্কটের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সন্ত্রাসী সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) যোগসূত্র সম্পর্কে জন কারবি বলেন, ‘আমরা আইএসআইএলের দায়িত্ব স্বীকারের কথা শুনেছি, কিন্তু এখনও বিষয়টি নিশ্চিত নই। আমরা প্রাপ্ত তথ্য যাচাই-বাছাই করে দেখছি।’ বিবৃতিতে বলা হয়, পরিস্থিতি সম্পর্কে মার্কিন প্রশাসন বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে। এদিকে আনন্দবাজারের খবরে বলা হয়, গুলশান হামলায় বিশ্বনেতাদের বাংলাদেশে উদ্ভুত নাশকতামূলক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাশে চাইছেন। টুইটে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা লেখেন, ‘অত্যন্ত বেদনার সঙ্গে জানাচ্ছি, ঢাকায় জঙ্গীরা তারুশি নামে এক ভারতীয় তরুণীকে হত্যা করেছে। অন্য বিদেশীদের সঙ্গে তাকেও শুক্রবার রাতে বন্দী করে রাখা হয়েছিল।’
×