ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সরকারের প্রধান এজেন্ডা হোক সমূলে জঙ্গী নির্মূল

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ৩ জুলাই ২০১৬

সরকারের প্রধান এজেন্ডা হোক সমূলে জঙ্গী নির্মূল

মোয়াজ্জেমুল হক ॥ দেশে জঙ্গীপনায় জড়িতদের সমূলে নির্মূল করাই হোক সরকারের এক নম্বর বা প্রধান এজেন্ডাÑ এ দাবি এখন দেশের সচেতন ও সাধারণ মানুষের মাঝে কেবলই জোরালো হচ্ছে। বিএনপি, জামায়াত ও ইসলাম ধর্মের ব্যানারের ছোট ছোট কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে দেশে জঙ্গীপনার জন্ম ও বিস্তৃতি লাভ করেছে। সে জঙ্গীপনা এখন ফুলে ফেঁপে দেশের বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষকে টার্গেট করছে। বিদেশী এবং সংখ্যালঘু ধর্মীয় নেতা, সেবায়েত, ভিক্ষুর পাশাপাশি ব্লগার ও প্রগতিমনা লেখক ও বুদ্ধিজীবীরাই এদের মূল টার্গেট। এদের হাত থেকে বিচারকও রেহাই পাননি। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে এদের অবস্থানের জানান দিয়েছে। দেশজুড়ে একসঙ্গে একই সময়ে সিরিজ বোমা বিস্ফোরণ ঘটানোর মাধ্যমে প্রথম জানান দিয়েছিল জঙ্গীপনার অপতৎপরতা। এরপর বহু সময় গড়িয়ে গেছে। এদের শেকড় বিস্তৃতি লাভ করেছে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার পর এদের অপতৎপরতায় বজ্রাঘাত ঘটে। একে একে ধরা পড়ছে জঙ্গী গ্রুপ ও তাদের আস্তানা এবং অস্ত্রশস্ত্র। কিন্তু এখনও এদের নির্মূল করা যায়নি। দেশের বিভিন্ন স্থানে আকস্মিক কিছু ঘটনা ঘটিয়ে এরা এদের অস্তিত্বের কথা জানান দেয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, তারই ধারাবাহিকতায় ঢাকার গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারি নামে একটি স্প্যানিশ রেস্তরাঁয় সশস্ত্র একটি গ্রুপের হামলা ও রেস্তরাঁয় আগতদের জিম্মি করে শেষ পর্যন্ত বর্বরোচিত কায়দায় হত্যার মতো ঘটনা পুরো জাতিকে নাড়া দিয়েছে। সেনাবাহিনীর কমান্ডো গ্রুপের নেতৃত্বে নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী, পুলিশ, র‌্যাব, সোয়াতসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলায় নিয়োজিত সংস্থার সদস্যদের সমন্বয়ে সফল অভিযানে দ্রুততম সময়ে এ ঘটনার অবসান ঘটাতে পারায় সরকার দেশ ও বিদেশে প্রশংসিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক প্রভাবশালী মিডিয়ায় এ ঘটনা প্রাধান্য পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, ভারতসহ শক্তিশালী দেশগুলোর পক্ষ থেকে এ ঘটনা চলাকালে এবং রক্তাক্ত পরিসমাপ্তির পরও বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছে। এর ফলে দেশের সর্বস্তরের মানুষের কাছে অস্ত্রধারীদের নির্মূলে এবং জিম্মিত্ববরণকারীদের মধ্যে যারা উদ্ধার হয়েছেÑ সে জন্য অভিযান প্রশংসা পেয়েছে খোদ প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে। ইতোপূর্বেকার বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) বিদ্রোহের ঘটনা দমাতে সরকার ধীরে-সুস্থে যেভাবে তা মোকাবেলা করেছে অনুরূপভাবে গুলশানের রেস্তরাঁর ঘটনায় সশস্ত্র ব্যক্তিদের অপতৎপরতা দমনে রাতভর পরিকল্পনা করে সকালে কমান্ডো অভিযান শুরু করে স্বল্পতম সময়ে তার পরিসমাপ্তি ঘটায় সর্বত্র স্বস্তি ফিরে এসেছে। বিভিন্ন সূত্রমতে, পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর একেবারে আসন্ন। সরকারী লম্বা ছুটি ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। মুসলিম সম্প্রদায়ের বৃহত্তম এ ধর্মীয় উৎসবের একেবারে প্রাক্কালে এ ধরনের বর্বরোচিত ঘটনা ঘটে যাবে তা কারও ধারণাতেও আসেনি। যদিও সরকার এ ধরনের উৎসবসহ বড় বড় অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করে থাকে। এছাড়া গুলশানের ডিপ্লোমেটিক জোনটি এমনিতেই নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা থাকে। এমন একটি স্পর্শকাতর এলাকার একটি রেস্তরাঁয় যেখানে অধিকাংশ বিদেশীদের আনাগোনা সেখানে অস্ত্রধারীদের হামলা ও রেস্তরাঁয় আগতদের জিম্মি করার ঘটনার পর পর সরকারসহ সর্বত্র শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ঘটনার পর কয়েকটি টিভি চ্যানেলে তা সরাসরি সম্প্রচার করলেও পরবর্তীতে পরিস্থিতি সামাল দিতে এবং জাতীয় স্বার্থে তা বন্ধ করার নির্দেশ দেয়া হলে তা বন্ধ হয়ে যায়। তবে তখন থেকে প্রতি মুহূর্তে প্রতিটি টিভি চ্যানেলে আপডেট জানান দেয়া হয়। এভাবে শনিবার ৯টার পর কমান্ডো অভিযানের সমাপ্তি ঘটলে মানুষের মাঝেও স্বস্তি ফিরে আসে। এ ঘটনা নিয়ে দেশের মানুষের বড় একটি অংশ উৎস্যুক হয়ে রাতভর টিভির খবর পর্যবেক্ষণ করেছে। সূত্র জানায়, দেশের ইতিহাসে এ ধরনের ঘটনা এই প্রথম। সরকার বা দায়িত্বশীল কোন সংস্থার পক্ষ থেকে এ ঘটনার নেপথ্যে কারা তা বলা না হলেও সচেতন মহলের কাছে পরিষ্কার জঙ্গীদের কোন একটি গ্রুপ এ ঘটনায় সম্পৃক্ত। যারা ধর্মকে ব্যানারে রেখে অপরাজনীতির সঙ্গে জড়িত। একটি প্রশ্ন উঠেছে, সম্প্রতি চট্টগ্রামে একজন এসপিপতœীর নৃসংশ হত্যাকা-ের পর পুলিশ প্রধান একেএম শহীদুল হক জানিয়েছিলেন দেশের দুটি জঙ্গী সংগঠন সক্রিয়। একটি জেএমবি ও অপরটি আনসারুল্লাহ বাংলা টিম। এছাড়া অপরাপর যে জঙ্গী সংগঠনগুলোর গজিয়ে উঠেছিল সেগুলোর অগ্রযাত্রা রুখে দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এখন তদন্তে বেরিয়ে আসবে গুলশান ট্র্যাজেডির সঙ্গে কারা জড়িত। যদিও এ ঘটনায় দায়-দায়িত্ব আইএস স্বীকার করেছে বলে বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশ পেয়েছে। কিন্তু আইএসের এ দাবি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এখনও গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। কেননা, ওই ধরনের প্রমাণ এখনও মেলেনি।
×