ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সাফল্যের আনন্দে ভাসছে মেরিনার্স

প্রকাশিত: ০৭:০২, ৩ জুলাই ২০১৬

সাফল্যের আনন্দে ভাসছে মেরিনার্স

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ১৯৭২ সালে জন্ম হয় ঢাকা মেরিনার ইয়াংস ক্লাবের। খেলাধুলার পাশাপাশি ক্লাবটি বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজেও সম্পৃক্ত হয়ে প্রশংসিত। হকি, হ্যান্ডবল, বাস্কেটবল, ভলিবল, টেবিল টেনিস, ক্রিকেটসহ বিভিন্ন খেলায় অংশ নিয়ে সফলতা অর্জন করলেও হকিতে সাফল্য পেল এবারই প্রথম। যদিও হকি অঙ্গনে মেরিনার বরাবরই প্রতিষ্ঠিত শক্তি। ১৯৮৮ সালে দলটি প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়। মেরিনার ইয়াংস সম্পর্কে একটি কথা প্রচলিত রয়েছে। এখানে যারা খেলোয়াড়, তারাই কর্মকর্তা। আবার যারা কর্মকর্তা, তারাই খেলোয়াড়! অর্থাৎ নেতৃত্ব নিয়ে কোন ভেদাভেদ নেই। ক্লাবের সদস্যরা একটি পরিবারের মতো কাজ করেন। এটা হয়েছে মূলত ক্লাবটি একটি মহল্লাকে কেন্দ্র করে পরিচালিত হয় বলে। মেরিনার ইয়াংস ক্লাবের স্থায়ী ঠিকানা হয়েছে ১৯৯৪ সালে মতিঝিল ঝিলপাড় মসজিদের পাশে। পূর্ববর্তী সময়ে এ ক্লাবের কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে বিভিন্ন কর্মকর্তা-সদস্যদের বাসার ড্রয়িং রুম, অফিস বা হোটেল-রেস্টুরেন্টে বসে। সাপ্তাহিক সন্দ্বীপ পত্রিকা অফিস দীর্ঘদিন মেরিনারের অস্থায়ী কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। প্রথমবারের মতো প্রিমিয়ার হকি লীগে চ্যাম্পিয়ন হওয়াতে উৎসবের জোয়ারে ভাসছে মেরিনার্স। আবাহনী-মোহামেডান-ঊষার পর মেরিনার্স বরাবরই ছিল চতুর্থ শক্তি। কিন্তু এখন তারা চতুর্থ শক্তি নয়, বরং শীর্ষ পর্যায়ের শক্তি। ১৯৮৮ সালে দ্বিতীয় বিভাগ হকি লীগে চ্যাম্পিয়ন হয়ে প্রথম বিভাগে উন্নীত হয় মেরিনার্স। ১৯৮৯ সালে মেরিনার্সের প্রথম বিভাগের প্রথম ম্যাচে অধিনায়ক ছিলেন মঈনউদ্দিন ভুঁইয়া। ম্যানেজার ছিলেন বদরুল ইসলাম দীপু। তারা উভয়েরই অভিন্ন কণ্ঠ, ‘খুব ভাল লাগছে মেরিনারের এই সাফল্যে। আশাকরি তারা আগামীতে এমন আরও সাফল্য পাবে।’ ক্লাবের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক হাসানউল্লাহ খান রানাও একসময় এই ক্লাবের হয়ে খেলেছেন। ছিলেন গোলরক্ষক। তার ভাষ্য, ‘হকির এ সাফল্যে আরামবাগে একটা নতুন উদ্দীপনা এসেছে। আমরা এ সাফল্য অব্যাহত রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করবো। ঈদের পরে আনুষ্ঠানিকভাবে খেলোয়াড়দের সংবর্ধনা দেয়া হবে। হাতে তুলে দেয়া হবে প্রতিশ্রুত দশ হাজার ডলারের অর্থ। আমাদের হকি কমিটির চেয়ারম্যান ও এলাকার কমিশনার মমিনুল হক সাঈদকে ধন্যবাদ জানাই আমাদের সর্বাত্মক সমর্থন দেয়ার জন্য। আর আমরা দ্বিতীয় বিভাগ হকি লীগে ক্লাবের খেলোয়াড় তৈরির একটি পাইপলাইন তৈরির জন্য আরেকটি দল গঠনের চিন্তা করছি।’ ক্লাবের জার্মান কোচ গেরহার্ড পিটার বলেন, ‘আমাকে মেরিনার যে উদ্দেশ্যে এখানে এনেছে, তা সফল হওয়াতে ভীষণ খুশি। এ জন্য কৃতিত্ব খেলোয়াড়দের। তারা কঠোর পরিশ্রম করেছে। শেষ ম্যাচে আমি কখনই হাল ছেড়ে দেইনি। ছেলেদেরও সেটাই বুঝিয়েছি। সেই মোতাবেক তারা খেলেছে এবং দুই গোলে পিছিয়ে থেকেও জয় ছিনিয়ে এনেছে।’ দলের অধিনায়ক মামুনুর রহমান চয়ন বলেন, ‘ক্লাব ম্যানেজমেন্টের আন্তরিকতা, কোচের উন্নতমানের প্রশিক্ষণ, আমার পরিশ্রমÑ সব মিলিয়েই এই শিরোপা। আর এটা মেরিনারের প্রথম শিরোপা। তাই আনন্দটাও অন্যরকম। আশাকরি আমরা আরও এমন সাফল্য পাবো।’ উল্লেখ্য, শুক্রবার মওলানা ভাসানী হকি স্টেডিয়ামে ইতিহাস রচনা করছে ঢাকা মেরিনার ইয়াংস ক্লাব। প্রিমিয়ার হকি লীগের (সুপার সিক্সের শেষ ম্যাচ) ‘অলিখিত ফাইনালে’ প্রতিপক্ষ ঊষা ক্রীড়া চক্রকে ৩-২ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় আরামবাগের এই ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটি। তারা টানা দ্বিতীয়বারের মতো শিরোপা দেয়নি ঊষাকে। আর প্রথমবারের মতো লীগ শিরোপা জেতে মেরিনার্স। শুধু লীগ নয়, ঘরোয়া হকিতে এর আগে তারা কখনই কোন শিরোপা জেতেনি (কেবল ২০০৩ সালে রানার্সআপ হয়েছিল ক্লাব কাপ হকিতে)! লীগে এর আগে মেরিনার দু’বার রানার্সআপ হয়েছিল ২০০৬ ও ২০১০ সালে।
×