ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

১০ প্রকল্প বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৪:১৫, ৪ জুলাই ২০১৬

১০ প্রকল্প বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে

এম শাহজাহান ॥ প্রস্তাবিত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে প্রধানমন্ত্রী ‘শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগ’ খাত দশ প্রকল্প বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। রূপকল্প-২১ সামনে রেখে এসব প্রকল্পের সফল বাস্তবায়ন হলে দেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে নতুন মাইলফলক রচিত হবে বলে মনে করছে সরকার। একই সঙ্গে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তর হওয়ার স্বপ্নপূরণ হবে এসব প্রকল্পের সফল বাস্তবায়নে। এসব উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে-একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচী, ঘরে ঘরে বিদ্যুত, কমিউনিটি ক্লিনিক ও শিশু বিকাশ, নারীর ক্ষমতায়ন, আশ্রয়ণ, শিক্ষা সহায়তা, ডিজিটাল বাংলাদেশ, পরিবেশ সুরক্ষা ও বিনিয়োগ বিকাশ। জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উদ্যোগে নেয়া এই দশ কর্মসূচীকে ব্র্যান্ডিং করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এতে সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হয়েছে দারিদ্র্য বিমোচনে দক্ষতা অর্জনে আয়বর্ধক কর্মসূচী হিসেবে নেয়া একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পকে এগিয়ে নেয়া এবং দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণে বিনিয়োগ বিকাশ কর্মসূচীর সফল বাস্তবায়ন। একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পটি আগামী জুলাই মাসে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক হিসেবে সারাদেশে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে। মূলত দেশের দরিদ্র্য মানুষকে স্বল্পসুদে ঋণ দিয়ে স্বকর্মসংস্থান সৃষ্টিতে এই ব্যাংক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। পাশাপাশি দরিদ্র্য মানুষকে সঞ্চয়ে উৎসাহিত করতে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক বিশেষ স্কিম গ্রহণ করবে। এতে করে এনজিওগুলোর ক্ষুদ্র ঋণের যন্ত্রণা থেকে রক্ষা পাবে সাধারণ মানুষ। এই প্রকল্পটি সফল করতে সরকারের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণে বিনিয়োগ বিকাশ কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর এই উদ্যোগের ফলে দেশে বিনিয়োগের খরা কাটবে বলেও সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। ‘বিনিয়োগ বিকাশ’ বহির্বিশ্বে এমনভাবে ব্র্যান্ডিং করা হবে যাতে বিদেশীরা এদেশে বিনিয়োগ এগিয়ে আসেন। এছাড়া দেশী উদ্যোক্তাদেরও আস্থা ফিরিয়ে বিনিয়োগে উৎসাহিত করা হবে। জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর একান্ত আগ্রহে এই দশ কর্মসূচী গ্রহণ করেছে সরকার। এই কর্মসূচী দ্রুত বাস্তবায়ন ও ব্র্যান্ডিং সংক্রান্ত বিষয়গুলোর সমন্বয় করছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। এ প্রসঙ্গে প্রস্তাবিত বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জানিয়েছেন, গত সাত বছরে বিভিন্ন খাতে যেসব উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে তার মধ্যে অনেকগুলো উদ্যোগই প্রধানমন্ত্রীর চিন্তা-প্রসূত, যা ইতোমধ্যে ‘শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগ’ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর এসব উদ্যোগ বাস্তবায়নে বিশেষ অগ্রাধিকার দিচ্ছি। তিনি বলেন, এগুলোর সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশেল আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে একটি নতুন মাইলফলক রচিত হবে। জানা গেছে, কর্মসূচীগুলো বাস্তবায়ন করা গেলে ঘোষিত সময়ের মধ্যে রূপকল্প-২১ এর স্বপ্নপূরণ এবং দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে শেখ হাসিনার দৃঢ় অঙ্গীকার ও বিভিন্ন গণমুখী উদ্যোগের মধ্যে এই দশ ক্ষেত্রকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গবর্নেন্স ইনোভেশন ইউনিট সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এই দশ প্রকল্প বাস্তবায়নে জন্য কৌশল নির্ধারণ ও পরিকল্পনা গ্রহণে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, বিদ্যুত বিভাগ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করা হবে। জানা গেছে, অগ্রাধিকার খাত হিসেবে চিহ্নিত এসব প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্টদের কাছে চিঠিও দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় মনে করছে, দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তর এবং এসডিজি অর্জনে এসব খাতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। এ সম্পর্কিত প্রধামন্ত্রীর কার্যালয়ের চিঠিতে বলা হয়েছে, জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যের (এসডিজি) মূল ভাবনার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সার্বজনীন মানব উন্নয়ন চিন্তার ব্যাপক মিল রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন ভাবনা কার্যকরভাবে উপস্থাপন করে সকল কর্মকা-ে বিভিন্ন স্তরের নাগরিকগণের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণের মাধ্যমে ২০২১ সালের মধ্যে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত মধ্যম আয়ের বাংলাদেশ গড়া সম্ভব হবে। এদিকে, বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণে ইতোমধ্যে সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বিনিয়োগের প্রধান বাধাগুলো কি তা চিহ্নিত করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এসব বাধা দূর করে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ বাড়ানো হবে। এ লক্ষ্যে জাতীয় শিল্পনীতিও বিনিয়োগবান্ধব করা হয়েছে। এছাড়া ভারত, চীন, জাপান ও কোরিয়ার বিনিয়োগ বাড়াতে ওই দেশগুলোর জন্য পৃথক অর্থনৈতিক অঞ্চল সংরক্ষণ করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেছেন। এছাড়া দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়নে ৩০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের অনুমোদন দিয়েছে সরকার। শুধু তাই নয়, দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ বাড়াতে আগামী পনের বছরে সারাদেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হবে। এর ফলে দেশের রফতানি আয় বৃদ্ধি পাবে অতিরিক্ত ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে প্রায় ১ কোটি মানুষের।
×