ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আওয়ামী লীগের সংবাদ সম্মেলন

যিনি জঙ্গী লালন-পালন করেন তার সঙ্গে কিসের ঐক্য

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ৪ জুলাই ২০১৬

যিনি জঙ্গী লালন-পালন করেন তার সঙ্গে কিসের ঐক্য

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ রাজধানীর গুলশানের ক্যাফেতে জঙ্গী হামলার ঘটনায় দলমত নির্বিশেষে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সন্ত্রাসবিরোধী জাতীয় ঐক্যের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। দলটি বলছে, যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গ ত্যাগ এবং অতীত ভুলের জন্য অনুশোচনা করলেই তার সঙ্গে ঐক্যের ব্যাপারে ভাবা যেতে পারে। রবিবার রাজধানীর ধানম-িতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপি নেত্রীর বক্তব্যের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানাতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ঐক্যের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, অবশ্যই জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজন আছে। এটা আমরাও মনে করি। কিন্তু জাতীয় ঐক্য হবে কার সঙ্গে? যিনি জঙ্গী লালন-পালন করেন, জঙ্গীদের পৃষ্ঠপোষকতা করছেন, সন্ত্রাসী কর্মকা-কে পৃষ্ঠপোষকতা করছেন- তার সঙ্গে? তাহলে তার (খালেদা জিয়া) সঙ্গে কীভাবে জাতীয় ঐক্য সম্ভব? আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, বিএনপি নেত্রী আগে যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গ ত্যাগ করুক। অতীত ভুলের জন্য অনুশোচনার বহির্প্রকাশ করুক। তাহলে ওনার সঙ্গে জনগণের ঐক্য হতে পারে। আমাদের ঐক্য হতে পারে। কারণ জাতীয় ঐক্য আমরাও চাই। এক প্রশ্নের জবাবে হানিফ বলেন, খালেদা জিয়ার কথার মধ্যে অনেক বিভ্রান্তি আছে। উনি কখন কি বলেন ঠিক নেই। তার কথা পরস্পরবিরোধী। আরেক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বাংলাদেশে আইএস ও আল-কায়েদা বলে কিছু নেই। এদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আইএস বা আল-কায়েদার সম্পর্কও নেই। এরা সকলে জামায়াতের বিভিন্ন সংগঠনের নামে সরকারকে বিব্রত করা এবং বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র বানানোর ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছেন। হানিফ বলেন, আজ (রবিবার) খালেদা জিয়া বেশ কিছু ভাল কথা বলেছেন। কিন্তু ওই বক্তব্য শুনে দেশবাসীর সঙ্গে আমরাও অবাক হয়েছি। কারণ তিনি বলেছেন কোন বিবেকবান মানুষ এ সকল হত্যাকা- ঘটাতে পারে না। তার এই কথাগুলো সুন্দর ও মূল্যবান। কিন্তু এসব কথা বলছেনটা কে? যিনি একবছর আগেও সরকার বিরোধী হরতাল ধর্মঘটের ডাক দিয়ে পেট্রোলবোমা ও আগুন সন্ত্রাসের মাধ্যমে ২২১ জন মানুষকে হত্যা করেছেন। বাংলাদেশের মানুষ সেগুলো ভুলে যায়নি। আর এখন ওনি এসব বলছেন কিসের আশায়? ওনি এখন মনে করেন, মানুষ হত্যা কোন বিবেকবান মানুষের কর্মকা- নয়। তাহলে তখন ওনি মানুষ হত্যা করেছিলেন কিসের ওপর ভিত্তি করে? যেটা জাতির কাছে এখনও প্রশ্ন থেকে গেছে? খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে হানিফ বলেন, বাংলাদেশে সকল সন্ত্রাসী কর্মকা-ের উৎস হচ্ছেন বেগম জিয়া। আমরা তার সময়ে বাংলা ভাইদের উত্থান দেখেছি। একই দিনে একই সঙ্গে ৬৩ জেলায় ৫শ’ বোমা হামলার ঘটনার মধ্য দিয়ে দেশে জঙ্গী-সন্ত্রাসীদের উত্থান দেখেছি। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা দেখেছি। প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী এস এম কিবরিয়াসহ আহসানউল্লাহ মাস্টারকেও হত্যা করা হয়েছিল তারই সময়ে। আর এই সবগুলো ঘটনাই হয়েছিল বেগম জিয়ার সময়ে। কিন্তু এ ঘটনাগুলোর ব্যাপারে খালেদা জিয়া এখন পর্যন্ত অনুতপ্ত বা অনুশোচনা প্রকাশ করেননি। এমনকি মাদারীপুরে স্কুল শিক্ষক হত্যাকা- চেষ্টায় জড়িত সন্ত্রাসী ফাহিমের পক্ষ নিয়ে আরেকবার প্রমাণ করেছেন তিনি সন্ত্রাসী কর্মকা-ের পক্ষে। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা নিরলসভাবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু সেই প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করছেন কে? বেগম খালেদা জিয়া নিজেই। তিনি ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য সন্ত্রাসী কর্মকা-ের মাধ্যমে জনগণকে বিপর্যস্ত করতে একের পর এক ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছেন। খালেদা জিয়ার বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি আরও বলেন, খালেদা জিয়ার এই আহ্বান সকলের কাছেই অবাক করার বিষয় হয়েছে। যদি এই কথাগুলো খালেদা জিয়ার অন্তরের কথা হয়, তাহলে তিনি অতীত উপলব্ধি নিয়ে আগামীর পথ চলা শুরু করবেন। খালেদা জিয়া যদি অতীত কর্মকা-ের ওপর অনুতপ্ত হয়ে এই কথাগুলো বলে থাকেন তাহলে জাতি আশাবাদী হবে। আর যদি যুদ্ধাপরাধী- জঙ্গী-সন্ত্রাসীদের সঙ্গ ত্যাগ না করে এমন সুন্দর সুন্দর কথা বলে থাকেন তাহলে তিনি পুনরায় জাতির সঙ্গে প্রতারণা করছেন। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের আহমদ হোসেন খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি, ফরিদুন্নাহার লাইলী, ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, ডাঃ বদিউজ্জামান ভুঁইয়া ডাবলু, আবদুস সাত্তার এমপি, এস এম কামাল হোসেন প্রমুখ। হামলাকারীর পরিবার দায় এড়াতে পারে না- ড. হাছান ॥ আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, গুলশানে রেস্তরাঁয় সন্ত্রাসী হামলাকারীরা কোন মাদ্রাসায় পড়ুয়া ছাত্র ছিল না। দেশ-বিদেশের নামকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ছিল। সবাই সমাজের উচ্চবিত্ত শ্রেণীর সন্তান। তাই হামলাকারী পরিবারগুলো কোনভাবেই এ দায় এড়াতে পারে না। কোমলমতি সন্তানটি কোথায় যাচ্ছে, কার সঙ্গে মিশছে- এগুলো নজর রাখতে তিনি অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আজকে যারা ইসলামের নামে মানুষ হত্যা করছে, তারা মুসলিম জাহান ও মানবতার শত্রু। গুলশানে যারা হামলা করেছে তারা ইসলামের গায়ে কালিমা লেপন করেছে। তবে এটি কেবল বিপথগামী কিছু তরুণের দিয়ে ঘটিত হত্যাকা- নয়, এটি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ। রবিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গুলশানে সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে আয়োজিত এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। কমিশনার হাসিবুর রহমান মানিকের সভাপতিত্বে বাংলাদেশ স্বাধীনতা পরিষদ আয়োজিত সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন ফজলুল হক, জিন্নাত আলী জিন্নাহ, অরুণ সরকার রানা, এমএ করিম প্রমুখ।
×