ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

‘জঙ্গী হামলায় পাকিস্তান হাইকমিশন জড়িত’

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ৪ জুলাই ২০১৬

‘জঙ্গী হামলায় পাকিস্তান হাইকমিশন জড়িত’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গুলশানে দেশের ইতিহাসের ভয়াবহ জঙ্গী হামলার প্রেক্ষাপটে অবিলম্বে পাকিস্তান হাইকমিশনের ওপর নজরদারি বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগার গ্রান্ড ইমাম আল্লামা ফরীদ উদ্দিন মাসঊদ। একই সঙ্গে তিনি জামায়াত নিষিদ্ধের দাবি তুলে বলেছেন, জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে বিলম্ব করলে সরকারের জন্য তা বুমেরাং হবে। জামায়াতের সন্ত্রাসীরাই এ হামলা চালাতে পারে। জঙ্গীবাদবিরোধী লক্ষাধিক আলেমের স্বাক্ষর গ্রহণের সময়ও তারা বাধা দিয়েছিল। এরা ইসলাম, দেশ ও মানবতার শত্রু। জঙ্গীবাদবিরোধী লক্ষাধিক আলেমের ফতোয়া জারির অন্যতম এ উদ্যোক্তা ও বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার চেয়ারম্যান আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ রবিবার আলেম সমাজের সঙ্গে রাজধানীতে আয়োজিত এক সভায় এসব কথা বলেন। রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গী হামলার ঘটনার প্রেক্ষাপটে খিলগাঁর ইকরা বাংলাদেশ কমপ্লেক্স মসজিদে আয়োজিত আলোচনাসভায় আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ ধর্মের নামে চালানো জঙ্গীবাদী কর্মকা-ের তীব্র প্রতিবাদ জানান। তিনি বলেন, ইসলামের নামে জঙ্গীবাদ ও আত্মঘাতী হামলা ‘হারাম, জঘন্য অপরাধ ও অবৈধ’। ধর্মের নামে সন্ত্রাসকারী, জঙ্গী, গুপ্তহত্যাকারীদের জানাজা পড়াও হারাম। ইসলাম এদের কখানই শহীদের মর্যাদা দেয় না বরং যারা জঙ্গীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে মারা যাবেন তারা শহীদের মর্যাদা পাবেন। বাংলাদেশে জঙ্গীবাদী কর্মকা-ের পেছনে ঢাকায় পাকিস্তান হাইকমিশনের সম্পৃক্ততার অভিযোগ এনে তিনি বলেন, অবিলম্বে পাকিস্তান হাইকমিশনের ওপর নজরদারি বাড়াতে হবে। ধর্মের নামে যে জঘন্য অপরাধ করা হয়েছে তার নিন্দা করার মতো ভাষা আমাদের নেই। আমরা এক লাখ উলামায়ে কেরাম জঙ্গীবাদী এই হামলার নিন্দা জানাচ্ছি। সাহাবায়ে কেরাম জিহাদ করেছেন বিশৃঙ্খলা দমনের জন্য, আর আজকাল এরা জিহাদের নামে ফেতনা সৃষ্টি করছে। নির্মম এই হত্যাকা-ের আগে জঙ্গীরা আল্লাহু আকবার ধ্বনি তোলায় অসৎ উদ্দেশ্য সম্পর্কে ফরীদ উদ্দিন মাসঊদ বলেন, নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবার বলে এ রকম অন্যায় হত্যা ইসলাম কখনই সমর্থন করে না। নৃশংস হত্যায় আল্লাহর নাম ব্যবহার করা আরও জঘন্য অপরাধ। যারা আল্লাহু আকবার বলে হামলা সংঘটিত করেছে তারা মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নামকে চরম অবমাননা করেছে। এসব জঙ্গীর বিরুদ্ধে জনগণকে সচেতন করতে হবে। সারাদেশের আলেম-উলামাদের সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদবিরোধী ভূমিকা নেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, হামলাকারীরা বলছে, তারা ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে চায়। কিন্তু ইসলাম কী বলে তারাবির নামাজ বাদ দিয়ে নিরীহ মানুষ হত্যা কর? সন্ত্রাসীরা রমজানের পবিত্রতা লঙ্ঘন করেছে। বিদেশীরা আমাদের মেহমান, তাদের এভাবে হত্যা করা ন্যক্কারজনক। আমরা তীব্র নিন্দা জানাই। জঙ্গী সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লাখো আলেমের ফতোয়া ও তাতে জামায়াত-শিবিরের বাধা প্রদান সম্পর্কেও কথা বলেন দেশের এ বিশিষ্ট ইমাম। বলেন, অবিলম্বে জামায়াত নিষিদ্ধ করতে হবে। সরকার যদি তা করতে বিলম্ব করে তবে তা সরকারের জন্য বুমেরাং হবে। জামায়াতের সন্ত্রাসীরাই এ হামলা চালাতে পারে। এ কথা ভুলে গেলে চলবে না, জঙ্গীবাদবিরোধী লক্ষাধিক আলেমের স্বাক্ষর গ্রহণের সময়ও তারা বাধা দিয়েছিল। বিশাল এ কাজ করার সময় জামায়াত, শিবিরসহ সকল জঙ্গীবাদী গোষ্ঠীÑ আমরা জেহাদের বিরুদ্ধে কাজ করছি এই অপবাদ তুলে ফেসবুকসহ সামাজিক মাধ্যম সমূহে নানা ধরনের অপপ্রচার চালিয়েছে। ইসলামের নাম ব্যবহার করে কতিপয় সন্ত্রাসী গোষ্ঠী নিজেদের হীনস্বার্থ চরিতার্থের উদ্দেশ্যে মহাগ্রন্থ কোরান ও হাদিসের অপব্যাখ্যা দিয়ে বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাস ও আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। এরা ইসলামের কেউ নয়। এরা ইসলামের শত্রু। মানুষের চোখে ইসলামকে এরা একটা বর্বর নিষ্ঠুর ও সন্ত্রাসী ধর্মরূপে চিত্রিত করছে। জিহাদ ও সন্ত্রাস একই জিনিস নয়। জঙ্গীদের অনেকেই ‘জিহাদী’ বললেও তারা আসলে সন্ত্রাসী। ইসলাম সন্ত্রাস সমর্থন করে না। আর যারা বেহেশত পাওয়ার আশায় আত্মঘাতী হামলা করছে, বলছে মরলে শহীদ বাঁচলে গাজী, তারা কোরান ও হাদিসের আলোকে বেহেশত পাবে না। তাদের স্থান নিশ্চিত দোজখে। ‘মুসলিম সমাজে বসবাসকারী অমুসলিমকে যদি কেউ হত্যা করে সে বেহেশতের গন্ধও পাবে না। অমুসলিমদের গির্জা, প্যাগোডা, মন্দির ইত্যাদি উপাসনালয়ে হামলা করা ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম, অবৈধ ও কঠোর শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
×