ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মারুফ রায়হান

ঢাকার দিনরাত

প্রকাশিত: ০৬:১৯, ৫ জুলাই ২০১৬

ঢাকার দিনরাত

ঈদের ঠিক আগে কয়েকটা দিন ঢাকা থাকে অন্যরকম। ঈদের অব্যবহিত পরেও থাকে অন্যরকম। চিরচেনা ঢাকাকে চেনা যায় না, যানজটের ধকল সয়ে তিন ঘণ্টার পথ সেই সময় পেরুনো যায় মাত্র পঁয়তাল্লিশ মিনিটে। ঢাকার বাতাসে তখন শ্বাস নিতে কষ্ট হয় না। এসবই হয়ে থাকে ঢাকা জনচাপমুক্ত হওয়ায়, আর ছুটিতে কলকারখানা বন্ধ থাকায়, রাস্তায় গাড়ির পরিমাণ লক্ষ্যযোগ্যভাবে কমে আসায়। তবে ঢাকার বাইরে থেকে ঢাকায় বসত গড়ে তোলা প্রায় কোটি মানুষ ঢাকা ছেড়ে গেলে নগরীর প্রাণভোঁমরাটি কি কেঁদে ওঠে না! তাতে কি ছন্দপতন আসে না? ঢাকা তাই প্রতীক্ষায় থাকে ঈদের ছুটি ফুরোনোর। শহর থেকে সাময়িকভাবে অনুপস্থিত মানুষগুলোকে স্বাগত জানানোর জন্য তার ব্যাকুলতা ক্রমশ বাড়ে। দুঃস্বপ্নের ঢাকা ঢাকা এখন দুঃস্বপ্ন দেখছে। হায় খোদা, এইসব দুঃস্বপ্ন যেন সত্যি না হয়। দুঃস্বপ্ন এক: রাজধানীর জমজমাট একটি শপিং মল। চানরাতের কেনাকাটা চলছে। দোকানি-ক্রেতা সবার মধ্যেই এক ধরনের তাড়া কাজ করছে। কাল ঈদ। শেষ মুহূর্তে কিনে নিতে হবে পছন্দের পোশাক বা অন্য কিছু। দোকানিরও এই ঈদের শেষ মওকা, যতটা সম্ভব মুনাফা তুলে নেয়া চাই। আচমকা বিকট শব্দে শপিং মলটির প্রধান ফটক বন্ধ করে দেয়া হলো। একই সঙ্গে শুরু হলো গুলির শব্দ। একদল জঙ্গী অল্প সময়ের ভেতরেই শপিং মলটির কর্তৃত্ব নিয়ে নিল। তারপর... দুঃস্বপ্ন দুই: ও মন রমজানের এই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদÑ গানটি বাজছে নগরীর বিভিন্ন স্থানে। পাজামা-পাঞ্জাবি পরিহিত ছেলেবুড়ো সবাই চলেছে ঈদগাহের দিকে। নগরীর একেক স্থানে একেক জায়গায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কোথাও মসজিদ প্রাঙ্গণে, কোথাও ময়দানে, কোথাও বা প্রধান সড়কের ওপর। ছোট্ট একটা মাঠে ঈদের জামাত মাত্র শুরু হয়েছে। বোমার শব্দে কেঁপে উঠল গোটা ময়দান। আত্মঘাতী পাঁচ যুবক মাঠের বিভিন্ন দিক থেকে বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে! আতঙ্কিত মানুষই দুঃস্বপ্নের শিকার হয়। তা জেগে হোক কিংবা নিদ্রায়। আমাদের বসবাসের শহর ঢাকা থেকে আতঙ্ক দূরীভূত না হওয়া পর্যন্ত এ ধরনের দুঃস্বপ্নের অবসান হবে না। ফুলের বাগানে সাপ গুলশান শব্দের অর্থ ফুলের বাগান। ঢাকার এই এলাকাটি অভিজাত পাড়া হিসেবে স্বীকৃত বহু আগে থেকেই। বিদেশী দূতাবাসে কর্মরত অনেকেরই বাসভবন এখানে। এখানে বিষধর সাপরূপী জঙ্গীরা বড় ধরনের হত্যাযজ্ঞ চালাবেÑ এটা কি আমরা কল্পনাও করেছিলাম? যে শহর বিদেশী মেহমানদের যতœআত্তির জন্য ভালবাসা অর্জন করেছে সেখানে তিন তিনটি দেশের নাগরিকরা নৃশংসভাবে খুন হলেন! ঢাকা মহানগরীর অনেক সুনাম রয়েছে। এই নগরীর মানুষেরা মানবিক, কর্মঠ এবং প্রাণপ্রাচুর্যে ভরপুর। আবার অনেক বদনামও কুড়িয়েছে রাজধানী। এর জন্য দায়ী খুব বেশি মানুষ তো নয়। তবে গত শুক্রবার রাতে ঢাকার যে ভাবমূর্তি দাঁড়াল সেটা মেরামত করতে ঢের সময় নেবে। ঢাকার দিন ও রাত যে আর আগের মতো রইলো নাÑ এই সত্যটি আমরা বারবার অনুভব করব। কিন্তু তবু আমরা ফুলের বাগানে সাপের হিসহিস আর শুনতে চাইবো না, চাইবো ফুলের সৌন্দর্য ও সৌরভ। সেজন্য গোটা ঢাকাবাসীকেই সতর্ক, সচেতন ও সক্রিয় হতে হবে। অভিভাবকদের প্রতি সন্তান জঙ্গী হোকÑ এমনটা কি চান কোন অভিভাবক? না, চাইতে পারেন না। তাই সন্তানের প্রতি খেয়াল রাখা পিতামাতার অবশ্য কর্তব্য। গুলশানের রক্তাক্ত অধ্যায়ের পর ফেসবুকে বেশ ক’জন ব্যক্তির পোস্টে অভিভাবকসুলভ উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ফুটে উঠেছে। সেখান থেকে কিছু পোস্ট তুলে দিচ্ছি এখানে। আইন পেশায় যুক্ত মিতু মারুফা লিখেছেন : বাংলাদেশের প্রত্যেকটি পরিবারের প্রতিটি বাবা মার কাছে অনুরোধ থাকবে তাঁরা যেন সদ্য বড় হওয়া অর্থাৎ কৈশোর থেকে যৌবনে পদার্পণকারী নিজ নিজ ছেলেমেয়ে বিশেষ করে ছেলেদের সঙ্গে এককভাবে, পরিবারগতভাবে সমন্বিত উপায়ে গভীর এ্যাটাচমেন্ট ধরে রাখেন। পরিবারের বড় ছেলেদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক খোঁজ এবং যোগাযোগ ধরে রাখা আবশ্যকীয়। ‘...আমার ছেলে হঠাৎ বের হয়ে কোথায় গেল? দীর্ঘসময় বাসায় নেই কেন?‘ -এ প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে নিতে হবে সঙ্গে সঙ্গেই। পারিবারিক আলোচনায় ইদানীং আগ্রহী নয় কিংবা নিজেকে স্বতন্ত্র করে রাখার প্রবণতা, চিন্তায় মগ্নতা, অনলাইনে নিবিড় একাগ্রতা- এ বিষয়গুলোর ভিত্তিতে নিয়মিত পর্যবেক্ষণে রাখা জরুরী। ছেলেদের কাছ ছাড়া করে রাখা যাবে না। এসব আধিপত্য দেখাতে গেলে বাবা মারা নিগৃহীত হতে পারেন বলে ধরে নিলাম, তাতে কিছু যায় আসে না। স্বীয় সন্তানের ভ্রান্ত পথে চলে যাবার পথটুকু রুখে দেবার দায়িত্ব আমার, আপনার সকলের। প্রমিথিউস বাউন্ড নামটির আড়ালে রয়েছেন কবি সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ। অস্ট্রেলীয়া প্রবাসী এই কবিবন্ধুটি লিখেছেন : অনেকেই বলছেন যে ভালবাসার, ভাল-থাকার অভাব এই তরুণদের খুনি বানিয়ে তুলেছে। কিন্তু তারা খেয়াল করছেন না যে এদের সিংহভাগ মাদ্রাসার বা এতিমখানার ছেলে নয়, এরা আপনার আমার, মানে মধ্যবিত্ত ঘর থেকেই আসছে। আর একদিনে এক পলকে এরা বদলে যায়নি। এদের পরিবার-পরিজন ঠিকই খেয়াল করেছে তাদের ছেলের বদলে যাওয়া, ঠিকই বুঝেছে তারা দুধকলা দিয়ে কালসাপ পুষছে... তারা কিছু করেছে? ছেলেকে বাঁচাতে, ছেলের হাত থেকে আরও অনেক মানুষকে বাঁচাতে? দোহাই... যারই ঘরে ছেলেপুলে আছে, একটু নজর রাখুন তাদের উপর, ওদের মধ্যে বদলের লক্ষণগুলো দেখামাত্র কিছু করুন। কিছু করতে না-পারলে পুলিশে অন্তত জানান (যদিও তাতে কিছু না- হওয়ার কথা) বা সব ব্যর্থ হলে কোন খবরের কাগজে বা এমনকি ফেসবুকে তার কথা প্রচার করুন। ছেলেকে বাঁচাতে গিয়ে তাকে মারবেন না, তার হাতে আরও মানুষকেও... জেগে উঠুন বাবা-মা-ভাই-বোন... শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত ড. মাসুদুজ্জামান লিখেছেন : প্রায় একই ধরনের দুটি ছবি– কিন্তু কী মারাত্মক বৈপরীত্য! দুই সন্তান, দুই ছেলে, দুই মা (একজনের সঙ্গে বাবাও আছে)। ছেলে দুটি প্রায় সমবয়সী। পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ডও প্রায় একই– দু’জনই ধনী পরিবারের ইংরেজী স্কুলে পড়া শিক্ষার্থী। কিন্তু এদের একজন আরেকজনকে কী নির্মমভাবে মেরে ফেলল! দুই মা-ই এখন সন্তানহারা। আমাদের বাবা-মায়েদের কী ভেবে দেখার সময় আসেনি কারা এই প্রজন্মকে নিশ্চিহ্ন করে দিচ্ছে! যে ছেলে তারই সমবয়সী একজনকে মারতে পারে, তার বাবা-মা বা অভিভাবকদের কিভাবে সন্তানকে মানুষ করা উচিত? কি শিক্ষা তাদের দেয়া উচিত? কিন্তু বাবা-মা-ই যদি পরিবারের মধ্যে ধর্মীয় উগ্রতার পরিবেশ তৈরি করে ফেলেন, তাহলে সন্তান যে একদিন সেই পথেই ধাবিত হবে, সেটা তারা কবে বুঝতে পারবেন? কথাসাহিত্যিক মঈনুল আহসান সাবেরের লেখায় নিরাপত্তা ব্যবস্থার ফাঁক নিয়ে তীব্র অসন্তোষ ফুটে উঠেছে। তিনি লিখেছেন : শুনি, দেখিও বটে, কাঁচাবাজারের ব্যাগও মাঝেমাঝে পরীক্ষা করে দেখা হয়, সন্দেহজনক কিছু আছে কি না। বইমেলায় ঢোকার সময় হার্টের অসুখের স্প্রের টিউব নিয়ে বেশ বিপাকে পড়েছিলাম — এটা কী, হ্যাঁ? অথচ এতগুলো তাজা বয়সের ছেলে এত অস্ত্র এত গোলাবারুদ নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে একসঙ্গে নির্বিঘেœ এক রেস্তোরাঁয় ঢুকে পড়ল! তাও বিশেষ নিরাপদ এলাকায়! এই দেশ কোনদিকে এগোচ্ছে, এই দেশে কী হতে যাচ্ছে, এসবের দায় কার বা কার কার, এই প্রশ্ন যেমন অস্থির করে তোলে, তেমন ওই প্রশ্নও এড়িয়ে যেতে পারি না, যারা জিম্মি করল অতগুলো মানুষকে তারাও তাদের অস্ত্র কি অদৃশ্য ছিল গন্তব্যে না পৌঁছানো পর্যন্ত? দুই বীর রবিউল ও সালাহউদ্দিন গুলশানে জঙ্গীদের গুলিতে নিহত সৎ, নিষ্ঠাবান পুলিশ কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম শুধু ভাল অফিসারই ছিলেন না, সামাজিক, মানবিক কাজও করতেন। দেশকে ভালবাসতেন, দেশের জন্য কিছু করার প্রয়াসে ইতালির সুখের জীবন ছেড়ে চলে এসেছিলেন নিজ দেশে। পড়াশোনা শেষ করে রবিউল ইসলাম পাড়ি জমিয়েছিলেন ইতালিতে। দুই বছর ছিলেন। ইতালিতে ভালই ছিলেন। পরে দেশের টানে ফিরে আসেন জন্মভূমিতে। ৩০তম বিসিএস পাস করার পর ২০১২ সালের ৩ জুন যোগ দেন পুলিশ বিভাগে। সৎ ও নিষ্ঠাবান অফিসার হিসেবে তাঁর সুনাম ছিল। রবিউল ইসলামের ছয় বছরের ছেলে সাজেদুল ইসলাম সামি সাংবাদিকের কাছে বলল, ‘বাবা পুলিশের চাকরি করে। চোর, ডাকাত, খারাপ মানুষদের ধরে ধরে জেলে পাঠায়।’ সামির ধারণা, ঈদের আগেই ওর জন্য জামাকাপড় নিয়ে বাবা বাড়িতে আসবেন। রবিউলের আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী উম্মে সালমা জ্ঞান হারাচ্ছেন ক্ষণে ক্ষণে। মানুষের বিপদে এগিয়ে যেতেন ওসি সালাহউদ্দিন। বাবার মৃত্যুর পর ভাইবোনদের কাছে তিনি ছিলেন পিতৃতুল্য। ভাইবোনের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচ যোগাতেন। দরিদ্র প্রতিবেশীদের ঈদের সময় নতুন জামা দিতেন। মসজিদ-মাদ্রাসায় দান করতেন। তাঁর সবচেয়ে বড় গুণ ছিল মানুষের বিপদে এগিয়ে যাওয়া। এই মানুষটি ওসি সালাহউদ্দিন খান লুই। শুক্রবার রাতে গুলশানে জঙ্গীদের গুলিতে এমন মানুষটির মৃত্যুতে এখন কাঁদছে তাঁর জন্মস্থান গোপালগঞ্জ এবং প্রথম কর্মস্থল ও শ্বশুরবাড়ি বান্দরবান। নিহত ওসির ছোট ভাই মোহাম্মদ আলী খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার ভাই নিরপরাধ মানুষ। তিনি সব সময় ভাল কাজের সঙ্গে থাকতেন। বিভিন্ন মসজিদ-মাদ্রাসায় দান-অনুদান করতেন। মিরপুর থানায় মসজিদ নির্মাণ করেছেন। তিনি একজন আল্লাহওয়ালা লোক ছিলেন। ইশরাতের জন্য এলিজি ইশরাতের সঙ্গে ঠিক বন্ধুত্ব ছিল না। তবে তিনি ছিলেন আমার কয়েকজন বন্ধুর বন্ধু। শিল্প-সংস্কৃতি অঙ্গনে যাতায়াতের কারণে কবি-শিল্পীদের অনেকের সঙ্গেই ছিল তার বন্ধুতা। শুক্রবার রাতে জঙ্গী হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে একজন তার উদ্বেগ প্রকাশ করলেন সতর্কতার সঙ্গে ইশরাতের নাম না নিয়ে যে, আমাদের এক বন্ধু ওই স্প্যানিশ রেস্তোরাঁয় আছেন। সকালে এই প্রাণোচ্ছ্বল নারীর অপমৃত্যু সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেল। তারপর একের পর এক ইশরাতকে নিয়ে শোকগাথা রচিত হতে থাকল। কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকায় ইশরাত হত্যার বিষয়টি মর্মস্পর্শীভাবে এসেছে। সেখানে লেখা হয়েছেÑ ‘আর কয়েক মুহূর্ত পরে মেরে ফেলা হবে তাঁকে। ইশরাত আখন্দের পাশে দাঁড়িয়ে দুই জঙ্গী তখনও নিজেদের মধ্যে মৃদু তর্ক চালিয়ে যাচ্ছে। নাম জানতে চেয়েছিল তারা। ‘ইশরাত’ শুনে একজন বলেছিল, ‘‘ও বাঁচার জন্য ধর্মের নাম (মুসলিম নাম) নিচ্ছে। মুসলমান হলে হিজাব পরেনি কেন? মাথায় কাপড় নেই কেন?’’ হিজাব পরার অভ্যেসটা ছোট থেকেই ছিল না ঢাকার একটি আর্ট গ্যালারির প্রাক্তন প্রধান ইশরাতের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই প্রাক্তনীর উচ্চশিক্ষা অস্ট্রেলিয়ায়। ওই আর্ট গ্যালারি ছাড়াও কাজ করেছেন বিভিন্ন সংস্থার উচ্চ পদে। নিজে শিল্পী। আবার মিউজিক ভিডিওয় অভিনয়ও করেছেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় কফি খেতে গিয়েছিলেন গুলশনের হোলি আর্টিজেন বেকারিতে। জঙ্গীদের নাগাল এড়িয়ে পালানো ওই কাফের এক কর্মী খুব কাছ থেকে দেখেছিলেন ইশরাতের শেষ মুহূর্তগুলো। তিনিই জানিয়েছেন, ইশরাতের দিকে এগিয়ে আসা জঙ্গীর প্রথম প্রশ্নই ছিল, ‘‘তোমার মাথায় হিজাব নেই কেন?’’ ইশরাত তাকে জানান, তিনি বাংলাদেশেরই নাগরিক। তবে কোনও দিনই হিজাব পরেননি। এর পরেই তাঁর নাম জানতে চাওয়া এবং তা নিয়ে দুই জঙ্গীর আলোচনা। মিনিটখানেকের একটু বেশি সময় ধরে ব্যাপারটা গড়ায়। এই সময়ে তৃতীয় এক জঙ্গী এসে বলে, ‘আমাদের হাতে কিন্তু বেশি সময় নেই।’ জঙ্গীর ধারালো অস্ত্র নেমে আসে তখনই। ইশরাত পড়ে থাকেন কফির কাপে মুখ থুবড়ে।’ ঈদের দিন অনুরোধ ও আবেদন ঈদের দিন কী রান্না করবেন? কোন পোশাক পরবেনÑ সকালে কোনটা, সন্ধ্যায় কোনটা? বৃষ্টি হলে কী করবেন, না হলেও বা কী করণীয়? কোথায় বেড়াতে যাবেন? ইত্যাদি ইত্যাদি গালগল্পে পত্রিকার বিনোদন পাতা আর টিভির হরেক অনুষ্ঠান ভরপুর। হয়ত এসবেরও দরকার আছে, পাঠক ও দর্শক আছে। আমি বলতে চাইছি ভিন্ন কথা। আপনি নিকটজনের সান্নিধ্যে মহানন্দে ঈদ করছেন। অথচ অনেকেরই ঢাকা ছেড়ে যাওয়া হয়নি নানা কারণে। তার ঈদ নিরানন্দ মেশা এমন বন্ধু কিংবা পরিচিতজনের কাছে আপনার একটি টেলিফোনই হয়ে উঠতে পারে মহা খুশির ব্যাপার। আমার পরিবারের সবার জন্য নতুন পোশাক হয়েছে। খুব কাছেরই কোন বস্তিতে ঈদ এসেছে বছরের বাকি ৩৬৪ দিনের মতোই। হঠাৎ আপনি সেখানে গেলেন কয়েকটা নতুন পোশাক নিয়ে। অচেনা বালক কিংবা মধ্যবয়সী কোন নারীর হাতে তুলে দিলেন তার কাছাকাছি মাপের কোন পোশাক। কেমন হবে? দেখুন ট্রাই করে তাদের আনন্দ আর হাসি দেখে আপনার নিশ্চয়ই মনে হবে, অপরকে সুখ দিতে পারলে এক ধরনের তৃপ্তি আর সুখ নিজের মনে এসেও ধরা দেয়। হাসপাতালে দুস্থদের ওয়ার্ডে যান দোকান থেকে দু’তিন পদের কেনা খাবার নিয়ে। কুড়িজনের জন্যই নিন খাবারটা। ঈদের দিন অনেক রোগীরই কাটে স্বজনদের মুখ দেখার আশায়। অথচ তার সেই আশা পূরণ হয় না। না, আমি কোন মানবিক গল্প ফাঁদার চেষ্টা করছি না। বিশ্বাস না হয়, একবার গিয়েই দেখুন হাসপাতালে। দু’হাতে কয়েকটা খাবারের প্যাকেট নিয়ে। ঈদের দিন আপনার এই ‘বেড়ানোটি’ কিছুটা অস্বস্তিকর ও বেহুদা মনে হলেও আমার আবেদনে সাড়া দিয়ে যদি কাজটি আপনি করেন তাহলে আপনার অন্য ধরনের একটি অভিজ্ঞতা হবেÑ সেটা জোর দিয়েই বলতে পারি। মানুষ মানুষের জন্য। ঈদের আনন্দ যদি কিছুটা বাড়িয়ে নেয়া যায় অন্যকে আনন্দ দিয়ে তাহলে সেটা তো আপনি করতেই পারেন। ঈদ মোবারক। ঈদের ছুটিতে নিরাপদে থাকুন। ০৩ জুলাই ২০১৬ সধৎঁভৎধরযধহ৭১@মসধরষ.পড়স
×