ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ক্রীড়া তারকাদের ঈদ ভাবনা

প্রকাশিত: ০৬:২২, ৫ জুলাই ২০১৬

ক্রীড়া তারকাদের ঈদ ভাবনা

রুমেল খান ॥ ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে আনন্দ। বছরে দু’বার আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা মেতে ওঠেন ঈদের বিমলানন্দে। ক্রীড়াবিদরাও এর বাইরে নন। ব্যস্ত ক্রীড়াসূচীর বাইরে ঈদের ছুটি পেলেই তারা বর্তে যান। চেষ্টা করেন পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব সবাইকে নিয়ে ঈদের ছুটি কাটাতে। দেশের কয়েকজন জনপ্রিয় ক্রীড়া তারকার এবারের ঈদ-উল ফিতরের কর্মপন্থা, পরিকল্পনা কিÑ জানা যাক সে কৌতূহল। সাবিনা খাতুন (ফুটবল) ॥ বিদেশের (মালদ্বীপ) কোন ক্লাবে গিয়ে খেলা বাংলাদেশের প্রথম মহিলা ফুটবলার হলেন সাবিনা খাতুন। এখন কোন খেলা না থাকায় ঈদ কাটাতে আগেভাগেই চলে গেছেন গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরায়। ঈদ পালন সম্পর্কে সাবিনা বলেন, ‘তেমন কোন পরিকল্পনা নেই। পরিবারের সবার সঙ্গে সময় কাটাবো। সারা বছরই তো শপিং করি, তাই এখনও কিছু কেনা হয়নি। ঈদের দিন বা তার পরের দিন এলাকার বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে পারি।‘ শৈশবের সঙ্গে বড়বেলার ঈদের কি কোন পার্থক্য খুঁজে পান? ‘ছোটবেলার ঈদে আনন্দ ছিল অনেক বেশি। এখন ততটা নেই। আগের ঈদগুলোই বেশি ভাল ছিল।’ ঈদের সালামি প্রসঙ্গে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের কৃতী ফরোয়ার্ড সাবিনার ভাষ্য, ‘ছোটবেলায় প্রচুর সালামি পেতাম, এখন প্রচুর সালামি দিতে হয়।’ আরমিন আশা (শূটার) ॥ জাতীয় শূটার আরমিন আশা ক’দিন আগেই জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু করেছেন। হ্যাঁ, বিয়ে করেছেন তিনি। কক্সবাজার নিবাসী ব্যবসায়ী স্বামীকে নিয়ে কাটছে সুখের সংসার। সেই অর্থে বিয়ের পর এটা তার প্রথম ঈদ। অথচ ঈদ করতে হচ্ছে স্বামীকে ছাড়া। কেন? ‘হ্যাঁ, এবারও বাবার বাড়ি নারায়ণগঞ্জে ঈদ করব। স্বামী ঈদের দিন কক্সবাজারেই থাকবে। আমাদের এখানে আসবে ঈদের পরদিন। তবে শ্বশুরবাড়ির সবাইকে খুব মিস করব। এবারের ঈদে সবার জন্য প্রচুর শপিং করেছি। সালামিও দেব সবাইকে। ছোটবেলার সঙ্গে বড়বেলার ঈদের আনন্দের কোন তুলনাই হয় না। ছোটবেলায় কত সালামি পেতাম, আর এখন সালামি দিতে হবে অনেক টেনশনে থাকি, হা হা হা!’ ডালিয়া আক্তার (হ্যান্ডবল) ॥ জাতীয় হ্যান্ডবলার ডালিয়া আক্তার এবার ঈদ পালন করবেন মাদারীপুরে গ্রামের বাড়িতে। আজ ওখানে গিয়ে পৌঁছাবেন তিনি। নিজের জন্য তো বটেই, পরিবারের সবার জন্যও প্রচুর শপিং করেছেন তিনি, ‘ভাগ্নে-ভাতিজাদের জন্য শপিং করেছি।’ ওখানকার সাবেক হ্যান্ডবলার, নতুন হ্যান্ডবলারদের সঙ্গে দেখা করা, পরিবারকে সময় দেয়া ... এগুলোই হচ্ছে ডালিয়ার ঈদ পরিকল্পনা। ছোটবেলার সঙ্গে বড়বেলার ঈদের পার্থক্য? ‘অনেক পার্থক্য। তখনকার ঈদের আনন্দের সঙ্গে এখনকার ঈদের আনন্দের তুলনা করা যাবে না। তখন সালামি পেতাম, এখন সালামি দিতে হয়। আগে মা-বাবা ছিলেন, এখন নেই। তবে আনন্দ এখনও আছে। তবে আনন্দের প্রেক্ষাপটটা বদলে গেছে আর কি!’ মামুনুর রহমান চয়ন (হকি) ॥ বাংলাদেশ জাতীয় হকি দলের ‘পেনাল্টি কর্নার স্পেশালিস্ট’ খ্যাত ডিফেন্ডার মামুনুর রহমান চয়নের জন্য এবারের ঈদ অনেক স্পেশাল। কারণ? ‘ঢাকা মেরিনার ইয়াংস ক্লাব তাদের ২৮ বছরের ইতিহাসে যেকোন পর্যায়ে এই প্রথম চ্যাম্পিয়ন (লীগ শিরোপা) হলো, আর সেই দলের অধিনায়ক হচ্ছি আমি। তাই এবারের ঈদ আমার জন্য বিশেষ আনন্দের। আমি ইতোমধ্যে নিজেদের বাড়িতে (ফরিদপুরে) চলে এসেছি। এখানে আসার পর থেকেই সবাই হকিতে সাফল্য পাওয়ার জন্য আমাকে অভিনন্দন জানাচ্ছে। ঈদের পর ক্লাব আমাদের সংর্বধনা দেবে এবং সবাইকে আট লাখ টাকা বোনাস অর্থ পুরস্কারও দেবে।’ এবারের ঈদে নিজের জন্য বরাবরের মতোই পাঞ্জাবি, স্যান্ডেল কিনেছেন। মা-বাবা ও ছোট বোনের জন্যও শপিং করেছেন। ঈদের দিনে এলাকার বন্ধুদের সঙ্গে চুটিয়ে আড্ডা দেয়ার পরিকল্পনা আছে চয়নের। সবশেষে বললেন, ছোটবেলায় ঈদে সালামি পেতে মুখিয়ে থাকতাম। এখন আর সেই সৌভাগ্য হয় না। এখন উল্টো দিতে হয়। তবে এর মাঝেও আনন্দ আছে।’ শাপলা আক্তার (শাটলার) ॥ জাতীয় শাটলার শাপলা আক্তারের গ্রামের বাড়ি পাবনায়। বরাবরই ওখানে ঈদ পালন করে থাকেন তারকা এই ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড়। কিভাবে কাটাবেন এবারের ঈদ? ‘মা-বাবা-বোনের জন্য ড্রেস নিয়েছি। ঈদের দিন সকালে এলাকার একটি মসজিদে নামাজ পড়তে যাব। ওখানে মহিলাদের জন্য ব্যবস্থা করা আছে। ঠিক করেছি ঈদে পরিবারের সবাইকে বেশি করে সময় দেব। ঈদের ক’দিন পর পরিবারের সঙ্গেই ঘুরতে বের হব। কোথায় যাব, সেটা এখনও ঠিক করা হয়নি।’ শৈশবের ঈদ প্রসঙ্গে বলেন, ‘ছোটবেলায় ড্রেস কিনে তা লুকিয়ে রাখতাম, যেন আগেভাগেই তা কেউ দেখে না ফেলে। সালাম করলেই টাকা পাওয়া যেত। এখনও পাওয়া যায়। তবে আমি পাই না, বরং দিই!’ মাবিয়া আক্তার সীমান্ত (ভারোত্তোলক) ॥ ভারতের গুয়াহাটি ও শিলংয়ে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ এসএ গেমসে বাংলাদেশের হয়ে প্রথম স্বর্ণপদক জিতে নিজে কেঁদে ও দেশের মানুষকে আবেগের বন্যায় ভাসিয়েছিলেন ভারোত্তোলক মাবিয়া আক্তার সীমান্ত। সেই সীমান্তর এবারের ঈদটা কেমন কাটবে? জনকণ্ঠকে সীমান্ত জানান, ‘এসএ গেমসে স্বর্ণজয়ের পর এটা আমার জন্য স্পেশাল ঈদ। অনেক বছর পর এই ঈদে আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে অনেক উপহার পাব। তাদেরও চেষ্টা করব কিছু দিতে।’ ঈদের দিন প্রিয় খালার বাসায় ঘুরতে যাবেন সীমান্ত। ছোটবেলায় কেমন ঈদ পালন করতেন? ‘যখন পিচ্চি ছিলাম, তখন সাজুগুজু করে ঘুরতাম, খেলাধুলা করতাম, মেলায় যেতাম। এখন ইচ্ছে থাকলেই সব জায়গায় যাওয়া হয় না, এখন বান্ধবীদের সঙ্গে আড্ডা দিয়েই সময় কাটাই আর কি! আসলে ছোটবেলার ঈদের যে মজাটা, সেটা খুবই মনে পড়ে।’
×