ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রোনালদো বনাম বেল

প্রকাশিত: ২০:৫৭, ৫ জুলাই ২০১৬

 রোনালদো বনাম বেল

অনলাইন ডেস্ক॥ একটু-আধটু বন্ধুত্ব থাকতে পারে। কিন্তু গলায়-গলায় ভাব তাঁদের নেই। ছিল না কখনোই। মাদ্রিদের ড্রেসিংরুমে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর লকারটা যেখানে, গ্যারেথ বেলেরটা তার তিনটি লকার পরে। দুজনের মাঝে টনি ক্রুস, হামেস রদ্রিগেজ আর করিম বেনজমার লকার। ভালদেবেবাসের ডাইনিং রুমে তাঁদের পাশাপাশি বসতে দেখা গেছে কদাচিৎ। হাসিমুখে দুজনকে গল্প করতে দেখাটা আরও বিরল। উৎসব-পার্বণে দুজন শুভেচ্ছার খুদে বার্তা আদান-প্রদান করেন বলেও শোনা যায়নি কখনো। খুব ভালো বন্ধু তাই তাঁদের বলা যাবে না। তবে তাঁরা এটাও প্রমাণ করেছেন, খুব ভালো বন্ধু না হয়েও খুব ভালো সতীর্থ হওয়া যায়। নইলে কি আর রোনালদোর মতো খেলোয়াড় বলেন, ‘বেল রিয়াল মাদ্রিদে আসার পর আমি আরও ভালো খেলতে পারছি।’ ঠিক একই কথা বেল না বললেও এটা বলেছেন অনেকবার, রোনালদোর মতো খেলতে পারলে তিনি খুশিই হতেন। বন্ধুত্ব অল্প হোক কিংবা বেশি, সেটা আপাতত ভুলে যেতে হচ্ছে দুই রিয়াল মাদ্রিদ তারকাকেই। লিওঁতে কাল ইউরোর প্রথম সেমিফাইনালে রোনালদোর পর্তুগালের মুখোমুখি হচ্ছে বেলের ওয়েলস। মুখোমুখি হবেন বিশ্বের সবচেয়ে দামি দুই ফুটবলার। বেল টটেনহামে থাকতে ইউনাইটেড ও রিয়ালের রোনালদোর মুখোমুখি হয়েছেন। তবে দেশের জার্সিতে এবারই প্রথম। ওয়েলস কোচ ক্রিস কোলম্যানও এরই মধ্যে বলে দিয়েছেন, ‘দুই দলই জানে কী করতে হবে। সুতরাং এখানে যদি কোনো বন্ধুত্বের ব্যাপার থাকে, সেটি ম্যাচ শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত দূরে সরিয়ে রাখতে হবে। এখন তো আমাদের সঙ্গে ওদের লড়াই।’ দুই তারকার নামের ভারেই লড়াইটা যতটা না পর্তুগাল-ওয়েলসের, তার চেয়ে বেশি রোনালদো-বেলের হয়ে গেছে। প্রথম সেমিফাইনালের আবহসংগীত হিসেবে তাই ‘রোনালদো বনাম বেল’ রাগিণীই বাজছে কয়েক দিন ধরে। এ মুহূর্তে অবশ্য সেই আবহসংগীতে বেল-রাগটাই বেশি উচ্চগ্রামে শোনা যাচ্ছে। প্রথমবারের মতো ইউরো খেলতে এসেই ওয়েলস যে সেমিফাইনালে জায়গা নিয়ে ইতিহাস গড়েছে, তাতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন বেল। গোলও করেছেন তিনটি। তবে বেল বারবারই বলছেন—শুধু তাঁর একার কৃতিত্বে এত কিছু হয়নি, এটা দলগত চেষ্টার ফসল। ওয়েলসের দলীয় সংহতিটা যে কত বেশি সেটি বোঝাতে বলেছেন, ‘আমাদের দলের ঐক্য এতটাই যে মনে হচ্ছে সবাই ছুটি কাটাতে এসেছি।’ এত বড় তারকা হয়েও নিজেকে দলের বাকি সবার সমান্তরালে রাখা, বেলের এই গুণটাই মুগ্ধ করছে কোচ ক্রিস কোলম্যানকে, ‘ও খুব ভালো মানুষ, দারুণ মানুষ। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে সে আরও পরিণত হচ্ছে কিন্তু মানুষ হিসেবে আগের মতোই আছে। খুব শান্ত, এত মনোযোগ পেয়েও তার মাথা ঘুরে যাচ্ছে না।’ রোনালদোর ফর্মটা অবশ্য এই টুর্নামেন্টে উত্থান-পতনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। আইসল্যান্ডের সঙ্গে পর্তুগালের ১-১ ড্র ম্যাচে কিছু করতে না পেরে খেপে ওঠেন প্রতিপক্ষের কৌশল নিয়ে। তারপর অস্ট্রিয়ার বিপক্ষে পেনাল্টি মিস। সব সমালোচনার জবাব দিয়ে হাঙ্গেরির বিপক্ষে পরের ম্যাচেই জোড়া গোল করে দলকে তুলে আনেন নকআউট পর্বে। ক্রোয়েশিয়া ও পোল্যান্ডের বিপক্ষে পরের দুই ম্যাচে আবার খোলসবন্দী রোনালদো। হিসাবমতো ওয়েলসের বিপক্ষে সেমিফাইনালে তাঁর জ্বলে ওঠার কথা। পর্তুগিজ অধিনায়কের সামর্থ্য জানা আছে ওয়েলস কোচ কোলম্যানেরও। তবে সেটি নিয়ে তিনি কিন্তু খুব বেশি চিন্তিত নন, ‘আমি আমার ডিফেন্ডারদের অনুশীলন করাতে পারি কীভাবে তাকে থামাতে হবে। কিন্তু এর পরও রোনালদোর সামর্থ্য আছে বিশেষ কিছু করার। এটাই ভয়ের ব্যাপার। তবে আশার কথা হচ্ছে, আমাদের দলেও তেমন একজন (বেল) আছে। এটাই দুই দলকে সমান করে দিচ্ছে।’ আগামীকাল ম্যাচের পর অবশ্য দুই দল আর সমান থাকবে না। একটা দল এগিয়ে যাবে, এগিয়ে যাবেন রোনালদো-বেলের যেকোনো একজন। এএফপি, রয়টার্স। মুখোমুখি তাঁরা দুজন দেশের হয়ে এই প্রথম হলেও ক্লাবের হয়ে এর আগে পাঁচবার মুখোমুখি হয়েছেন রোনালদো-বেল। সেই পাঁচটি ম্যাচ গ্যারেথ বেল খেলেছেন টটেনহামের হয়ে। রিয়ালের এই দুই সতীর্থের মুখোমুখি লড়াইয়ে অবশ্য রোনালদো পরিষ্কার ব্যবধানে এগিয়ে ইউনাইটেড ৫-২ টটেনহাম প্রিমিয়ার লিগ ২০০৮-০৯ ২-০ গোলে এগিয়ে গিয়েও ম্যাচটা হেরেছিল টটেনহাম। ইউনাইটেডের ৫ গোলের ২টি করেছিলেন রোনালদো। বেল শেষ সময়ে নেমেছিলেন বদলি হিসেবে। ইউনাইটেড ২: ১ টটেনহাম এফএ কাপ ২০০৮-০৯ ওল্ড ট্রাফোর্ডে প্রথম দেখা, এফএ কাপের চতুর্থ রাউন্ডে। কেউই গোল করতে পারেননি, দুজনকেই তুলে নেওয়া হয় দ্বিতীয়ার্ধে। ইউনাইটেড ০(৪)-০(১) টটেনহাম কার্লিং কাপ ২০০৮-০৯ কার্লিং কাপের ফাইনালে নির্ধারিত সময় গোলশূন্য। রোনালদো শুরু থেকে খেললেও বেল নেমেছিলেন অতিরিক্ত সময়ে। টাইব্রেকারে হারে টটেনহাম। রিয়াল মাদ্রিদ ৪-০ টটেনহাম চ্যাম্পিয়নস লিগ ২০১০-১১ বার্নাব্যুতে কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগ। বেল শুরু থেকে খেললেও নীরব ছিলেন। রিয়ালের ৪ গোলের একটি রোনালদোর। রিয়াল মাদ্রিদ ১-০ টটেনহাম চ্যাম্পিয়নস লিগ ২০১০-১১ হোয়াইট হার্ট লেনে দ্বিতীয় লেগেও বেলকে খুঁজে পাওয়া যায়নি, রিয়ালের জয় রোনালদোর একমাত্র গোলে।
×