ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কলেজ পেরোনোর সার্টিফিকেট নেই, তবুও ডাক এল নাসার

প্রকাশিত: ২১:০২, ৬ জুলাই ২০১৬

 কলেজ পেরোনোর সার্টিফিকেট নেই, তবুও ডাক এল নাসার

অনলাইন ডেস্ক॥ মার্কশিটে একশোতে একশো পাননি কোন দিনই। প্রথাগত শিক্ষা বলতে যা বোঝায়, তার তাও নেই। কলেজের গণ্ডি পেরোনোর সার্টিফিকেট হাতে নেই বলে, নাসা তাকে মোটা বেতনও দেয় না। উপার্জন অল্প, তাই খুব মেপে চলতে হয়। এই ৭৯ বছর বয়সেও ক্যালিফোর্নিয়ার পাসাডেনায় নাসার জেট প্রোপালসন ল্যাবরেটরিতে (জেপিএল) এখনও তাকে প্রতিদিন আসতে হয়। আট ঘণ্টার ডিউটি, আধা ঘণ্টার লাঞ্চ ব্রেক। জেপিল-এ আসা আর বেরিয়ে যাওয়ার সময় প্রতিদিনই নাসার দেওয়া আইডেনটিটি কার্ডটা তাঁকে ‘ইন’ আর ‘আউট’ পাঞ্চ করতে হয়। না হলে এই ৭৯ বছর বয়সেও বেতন কাটা যাবে। তিনি সুসান ফিনলে। এই সৌরজগতের সবচেয়ে বড় আর সবচেয়ে বিপজ্জনক গ্রহ বৃহস্পতিকে জয় করার জন্য যার মুখাপেক্ষী হয়েছে নাসা। ভারতীয় সময় মঙ্গলবার ভোরে বৃহস্পতির কক্ষপথে ঢুকে পড়ে মহাকাশযান জুনো। প্রথম যে সিগন্যাল বা ‘টোন’টা পাঠিয়েছিল তা দেখা, শোনা ও বোঝার দায়িত্বটা ছিল এই ফিনলে-র কাঁধেই। নাসার কন্ট্রোল রুম থেকে জুনোর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, ‘ভাল আছো তো? ঠিক মতো পৌঁছেছো? ঝামেলা হচ্ছে না তো পথে?’ পৃথিবী থেকে বৃহস্পতির দূরত্বটা তো বড় কম নয়! তাই আমাদের পাঠানো বার্তা জুনোর কাছ যেতে আর তা ডিকোড করে জুনোর পাঠানো পাল্টা বার্তা আমাদের কাছে পৌঁছতে তো সময় লাগবেই। লেগেও ছিল। উত্তেজনা-উৎকণ্ঠায় যখন সেকেন্ড-মিনিট মাপছি আমরা, সেই সময়েই, মঙ্গলবার ভোরে জুনোর সিগন্যাল এসে পৌঁছেছিল আমাদের কাছে— ‘ভাল আছি। ভাল ভাবে পৌঁছেছি। পথে দেরি হয়নি, ঝামেলাও হয়নি কোন।’ কিন্তু, সেই সিগন্যাল ঠিকঠাক বোঝার মতো দক্ষতা সকলের থাকে না। অন্তত নাসার হাতে আপাতত আর কেউই নেই ৭৯ বছর বয়সের এই ফিনলে ছাড়া। তাই, ফিনলেকেই দেওয়া হয়েছিল জুনো মিশন তদারকির ভার। ২০০৪-এ মঙ্গলে স্পিরিট এবং অপরচুনিটি এই দুটো রোভার মহাকাশযানের পাঠানো সিগন্যালও ডিকোড করেছিলেন এই ফিনলে। ২০১২ সালে মঙ্গলে কিউরিওসিটি নেমেও ফিনলেকে প্রথম পাঠিয়েছিল প্রথম বার্তাটা। বেঁচে থাকলে ২০২১-এ মঙ্গলে যে আর একটা রোভার মহাকাশযান পাঠাবে নাসা, তারও পৌঁছানোর সংবাদ শোনার দায়িত্বটা পাবে ফিনলে। মঙ্গলবার পাসাডেনার জেপিএল থেকে হোয়াটস্‌অ্যাপে ফিনলে ভারতের জনপ্রিয় বাংলা গণমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকাকে বলেন, ‘‘নাসার জন্মের আগে থেকেই আমি মহাকাশ গবেষণায় মেতে আছি। ১৯৫৮-এ আমি প্রথম এসেছিলাম জেপিএল-এ। তখনও নাসার জন্মই হয়নি। কম্পিউটার ইঞ্জিয়নিয়ারিং-এ সহকারী হিসেবে কাজ করতাম। তার পরেই আমেরিকা মহাকাশে পাঠাল তার প্রথম উপগ্রহ এক্সপ্লোরার-ওয়ান। তার ছ’মাস পর মার্কিন কংগ্রেসে সিদ্ধান্ত নিল, তৈরী করা হবে নাসা। আমার দুই ছেলে মেয়ে। ছেলে মেয়েদের একটু দেখতে মাঝে ছ’মাসের জন্য নাসা ছেড়ে গিয়েছিলাম। ফিরে আসি ৬৯-এ। ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি নিতে ঢুকেছিলাম কলেজে। কিন্তু, ছেলে মেয়ের লেখাপড়ার জন্য নিজের পড়া শেষ করতে পারিনি। ডিগ্রি নেই আমার। তাই বেতনও পাই কম। ওভারটাইম দিয়ে নাসা অবশ্য আমাকে পুষিয়ে দেয়। এখনও কার্ড পাঞ্চ করে ঢুকতে হয় আর আট ঘণ্টা থাকতে হয়। এটাই শুধু সম্মানে লাগে! কী করব, ডিগ্রি নেই যে আমার!’’ ডিগ্রি নেই বলে, হয়তো লক্ষ্মীর অভাব আছে ফিনলে-র ঘরে! কিন্তু, সেই ফিনলের ভরসাতেই লক্ষ্মীলাভের লক্ষ্যে বৃহস্পতিতে পৌঁছে গেল নাসা। সভ্যতার গুরুগ্রহ বৃহস্পতিকে জয় করল এক বৃদ্ধার হাত ধরেই! সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা
×