ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিশ্বকাপজয়ী ফরাসি দলের সদস্যরা আজ কে কোথায়?

প্রকাশিত: ২৩:০২, ৬ জুলাই ২০১৬

বিশ্বকাপজয়ী ফরাসি দলের সদস্যরা আজ কে কোথায়?

অনলাইন ডেস্ক ॥ ফ্রান্স ফুটবল যত দিন থাকবে, টিমটাও নিশ্চিত অবিস্মরণীয় থেকে যাবে। জিনেদিন জিদানের ফ্রান্স। আটানব্বইয়ের বিশ্বজয়ী ফ্রান্স। বর্তমান প্রজন্ম দুর্দান্ত খেলছে, কোয়ার্টার ফাইনাল পাঁচ গোলে জিতে দু’দিন পর ইউরো সেমিফাইনাল খেলতে নামবে। কিন্তু সে সব আর জিদানদের ঐতিহ্যের প্রাসাদে আঁচড় কাটতে পারছে কই? অথচ স্বপ্নের সেই ফ্রান্স টিমের কেউ কেউ ফুটবলের সঙ্গে আর যোগাযোগ রাখেন না। কেউ আবার আড়ালে সরে গিয়েছেন নিজের ইচ্ছেয়। ফাবিয়ান বার্থেজ: টাক মাথা, গাট্টাগোট্টা ফরাসি গোলকিপারকে মনে আছে? গোলপোস্টের নীচে তাঁর নড়াচড়া, চিত্কার-চেঁচামেচি ফ্রান্স ’৯৮-এর পরিচয়পত্র উঠেছিল। অথচ সেই বার্থেজ এখন আর ফুটবল নিয়ে বাঁচেন না। মোটরস্পোর্ট তাঁর নতুন প্রেম। দেশে যখন ইউরো কাপ চলছে, তখন বার্থেজ চলে গিয়েছিলেন লে মান্স মোটরসাইকেল রেসে যোগ দিতে। গ্রিজম্যানরা কেমন খেলছেন, তা তাঁকে আর উত্তেজিত করে না। বরং অক্লেশে বলে দিতে পারেন, “পরে হাইলাইটস দেখে নেব। মোটরস্পোর্টের পাশে কিছু দাঁড়ায় নাকি!” বিয়েন্তে লিজারাজু: আঠারো বছর আগে সঁজেলিজে দিয়ে তাঁর কাপ নিয়ে হেঁটে যাওয়ার দৃশ্য আজও ফুটবল-প্রেমীদের মনে আছে। কিন্তু বার্থেজের মতো লিজারাজুও আর ফুটবলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন না। খেলা ছেড়ে দেওয়ার পর একটা সময় দোটানায় ছিলেন ভবিষ্যৎ নিয়ে। ফিটনেস লেভেল ঠিক রাখতে কোন দিকে যাওয়া উচিত, বোধগম্য হচ্ছিল না। একবার ভেবেছিলেন, শীতকালীন অলিম্পিক্সে নামবেন। পরে ঠিক করেন নাহ্, ব্রাজিলিয়ান যুযুত্সু শেখা ভাল। এবং এক ফরাসি ব্ল্যাক বেল্টকে ধরে-টরে এনে এক বছরের মধ্যে ইউরোপ চ্যাম্পিয়ন! ইয়োরি দোরকোয়েফ: ফ্রান্সেই আর থাকেন না এই মিডফিল্ডার। মেজর লিগ সকারে নিউ ইয়র্ক রেড বুলস দিয়ে ফুটবল কেরিয়ার শেষ এবং তার পরই যুক্তরাষ্ট্রে ফুটবলের উন্নতিসাধনে নেমে পড়া শুরু। নিউ ইয়র্কেই খুলে ফেলেছেন ইয়োরি দোরকোয়েফ ফাউন্ডেশন। ফুটবল একমাত্র নয়, দোরকোয়েফ ফাউন্ডেশন মার্কিন শিশুদের ফিজিক্যাল এডুকেশন, স্বাস্থ্য, অ্যাথলেটিসিজম সব কিছু নিয়ে কাজ করছে। দিদিয়ের দেশঁ: বিশ্বজয়ী টিম সতীর্থদের মধ্যে এই মুহূর্তে সবচেয়ে হাইপ্রোফাইল দায়িত্বে ব্যস্ত। সাদা চুলের কঠোর ফরাসি কোচ নানা সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়ে ইতিমধ্যে দেশে হইচই ফেলে দিয়েছেন। আপাতত ফরাসি হেডস্যর জার্মানি সেমিফাইনাল নিয়ে ব্যস্ত। জিনেদিন জিদান: নতুন করে কিছু বলার দরকার পড়ে কী? ফ্রান্সের হয়ে খেলা ছেড়েছেন বহু দিন, কিন্তু ফ্রান্স তাঁকে ইউরোয় বারবার মনে করাচ্ছে। প্যারিস, মার্সেই বিভিন্ন জায়গায় ফ্যান জোনে ম্যাচ শুরুর আগে তাঁকে দেখানো হচ্ছে দৈত্যপর্দায়। বর্তমানে রিয়াল মাদ্রিদ কোচ, ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর গুরু। লিলিয়ঁ থুঁর: ফ্রান্সের হয়ে সর্বাধিক ম্যাচ খেলেছেন, সম্ভবত সর্বাধিক বিতর্কেও জড়িয়েছেন। হৃদযন্ত্রের সমস্যার কারণে মাঠের যুদ্ধ থেকে সরে যেতে হয়েছিল, কিন্তু মাঠের বাইরের যুদ্ধে থুঁরকে কে থামাবে? বর্ণবিদ্বেষের বিরুদ্ধে তীব্র লড়াই চালাচ্ছেন। ফরাসি মন্ত্রী নিকোলাস সারকোইয়ের বিরুদ্ধাচারণ করার সাহস দেখিয়েছিলেন। কাতালান ভাষা আন্দোলনে নেমেছেন। দাবি তুলেছেন, উত্তর কাতালানিয়াকে ফ্রান্স থেকে আলাদা করা হোক, স্বাধীনতা দেওয়া হোক। তাঁর ফাউন্ডেশনও আছে, যারা আজও লড়ে বর্ণবিদ্বেষের বিরুদ্ধে। স্তেফান গুভিরাচ: রোনাল্ডোর ব্রাজিলের বিরুদ্ধে কাপ ফাইনালে নেমেছিলেন, কিন্তু গোল পাননি। সত্যি বললে, ’৯৮ বিশ্বকাপেই গোল পাননি। বিশ্বজয়ী ফ্রান্সের সবচেয়ে অচেনা মুখ, লোকে তাঁকে বারবার ভুলে যায়। গুভিরাচও চান, ভুলে যাক! ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ খেলার সময় বিক্ষিপ্ত ব্রিটিশ মিডিয়া তাঁকে নিয়ে একবার লিখেছিল ফ্রান্সের সর্বকালের জঘন্যতম স্ট্রাইকার। শুনে এতটাই আঘাত পান গুভিরাচ যে, ফুটবল থেকেই সরে যান। ফিরে যান নিজের ছোট শহরে, বন্ধুর সঙ্গে শুরু করে দেন সুইমিং পুল তৈরির ব্যবসা। ভাবা যায়, ফ্রান্সের বিশ্বজয়ী টিমের সদস্যকে এখন বছরে অন্তত পঁচিশটা সুইমিং পুল তৈরি করতে হয়! এমানুয়েল পেতিত: সোনালি চুলের মিডফিল্ডারকে নিয়ে আর্সেনাল সমর্থকদের গানটা মনে আছে? হি ইজ ফ্রেঞ্চ, হি ইজ কুইক, হিজ নেম ইজ আ পর্নো ফ্লিক, ইমানুয়েল...। ফরাসি অভিনেত্রী আগাথে দে লা ফন্তেকে বিয়ে করে তীব্র শোরগোল ফেলে দিয়েছিলেন। এখন ইউরোতে, ফুটবল-পণ্ডিত, আই টিভি-র হয়ে নিয়মিত বিশ্লেষণে বসছেন। ফ্রাঙ্ক লেবফ: বার্থেজের মতো ইনিও টাক মাথার, কিন্তু অবসরের পর মোটরস্পোর্ট নয়, হলিউড সিনেমা করেছেন! সিনেমার ভূত এখনও মাথা থেকে মোটেও নামেনি, অভিনয়টাও মন্দ করেন না। স্টিফেন হকিংয়ের বায়োপিক, ‘থিওরি অব এভরিথিং’-এ তাঁকে ডাক্তারের ভূমিকায় দেখা গিয়েছে! ক্রিশ্চিয়ান কারেম্বু: ফুটবল ছাড়ার পরেও ফুটবলের সঙ্গে যুক্ত। গ্রিসের ক্লাব অলিম্পিয়াকোসের প্রশাসনিক দায়িত্বে। অঁরি। অঁরি বিবিসি-র হয়ে চুটিয়ে এখন ইউরো কভার করছেন। লঁরা ব্লাঁ। বছর চারেক আগে পর্যন্ত ফ্রান্সের দায়িত্বে ছিলেন, কিন্তু আহামরি কোনও সাফল্য দিতে পারেননি। তবে এখনও শিরোনামে। শোনা যাচ্ছে ইস্তফা দেওয়া রয় হজসনের চেয়ারে জেরারদের মতো তিনিও এক দাবিদার। ওহ্, আর একজনের কথা লেখা হল না। আটানব্বইয়ের ফরাসি কোচ এইমে জাঁক। দেশকে বিশ্বকাপ দেওয়ার পরে বেশ কয়েক বছর ফরাসি ফুটবলের ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করেছেন। কিন্তু অবসরের পর আর ফুটবলের সঙ্গে জড়িত নেই। কোনও খবর পাওয়া যায় না। সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
×