ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

গুলশানে হামলার শিকার হতে পারতেন তারুশির ভাইও

প্রকাশিত: ২১:৪৮, ৭ জুলাই ২০১৬

গুলশানে হামলার শিকার হতে পারতেন তারুশির ভাইও

অনলাইন ডেস্ক ॥ রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত ভারতীয় তরুণী তারুশি জৈনের সঙ্গে তার ভাইও থাকতে পারতেন সেই রাতে। হয়ত ছোট বোনের মতো তারও এমনই পরিণতি হতো! চলে যেতেন না ফেরার দেশে! কিংবা পরিস্থিতি ভিন্নও তো হতে পারতো! তারুশির শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে ফুঁপিয়ে-ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে ভাই সঞ্জিত জৈনের বরাতে তার চাচা কৃষাণ জৈন সংবাদমাধ্যমকে এসব কথা বলেন। তাদের পুরো পরিবার জুড়ে এখন কেবলই হাহাকার। ভারতের উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের ফিরোজাবাদ জেলার গুরগাঁওয়ে এই অনুষ্ঠানে চাচা কৃষাণ বলেন, কানাডা থেকে সঞ্জিত কিছু দিন আগে ভারতে আসেন। তবে তিনি বাংলাদেশে যেতেন কিন্তু ভিসা পাননি। হয়ত ভিসা পেলে বোনের সঙ্গে সে রাতে ওই রেস্টুরেন্টেও তার অবস্থান হতে পারতো। সেক্ষেত্রে হয়ত পরিস্থিতি অন্য রকম হয়ে যেতো। এমনও হতে পারতো যে, নিজে একা তার বোনকে সেই রেস্টুরেন্টে যেতে দিতেন না ভাই। আর সবচেয়ে বড় কথা তারা যেখানে থাকতেন সেখান থেকে রেস্টুরেন্টের দূরত্ব খুব বেশি নয়। তারুশি ও তার ভাই সঞ্জিত জৈনের জন্ম হংকংয়ে। পড়াশোনা করেছেন ঢাকার আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে। সেখান থেকে উচ্চ শিক্ষার জন্য যান যুক্তরাষ্ট্রে। তারুশির বাবা সঞ্জীব জৈন। তিনি ফিরোজাবাদের বিশিষ্ট চুড়ি-বালার ব্যবসায়ী। তিনি জানিয়েছেন, দেশের বাইরে সব সময় লেখাপড়া করলেও তার সন্তানরা বেশ ভারতীয় ঢঙের। দেশীয় সংস্কৃতির ধারণ তাদের মধ্যে বিদ্যমান। চলতি বছরের জুনের শুরুর দিক থেকে তারুশি ঢাকার ইস্টার্ন ব্যাংকে ইন্টার্নশিপ করেছিলেন। ঢাকার আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে পড়ালেখা করা তারুশির পরিকল্পনা ছিল অর্থনীতিতে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করা। বাবা সঞ্জীব বলেন, মৃত্যুর আগে তারুশি তার ফেসবুকে লিখেছিলেন, রমজানে রাতের খাবার খেতে বন্ধুদের সঙ্গে সেখানে (হলি আর্টিজানে) যাচ্ছি। কিন্তু তার যে এই যাওয়া আর ফেরার হবে না সেটি কেই বা আঁচ করতে পেরেছিলেন! তারুশির বাবা মেয়ের সঙ্গে অনেকগুলো ভ্রমণ স্মৃতির কথা তুলে ধরেন। এটি চিরদিনের জন্য তার কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে বলেও মত দেন। বলেন, যতদিন বেঁচে থাকবেন স্মৃতিগুলো ততদিন মনে দাগ কেটে থাকবে। বছর বছর বিশেষ দিনগুলোতেও ওই সব স্মৃতি কাতর করে তুলবে। কিন্তু তখন তিনি নিজেকে কী করে সামলাবেন! এমন নির্মম মৃত্যু কি কাম্য ছিল! অন্যদিকে, তারুশির মা বারবার মেয়ের জন্য কেঁদে কেঁদে মুর্ছা যাচ্ছেন। তাকে ধরে রাখা যাচ্ছে না। একবার ভাই, একবার বাবা এসে ধরে সামলাচ্ছেন মাকে। তারুশি জৈনের মৃত্যুতে শুধু তার পরিবার নয়, পুরো ভারত সরকারের পক্ষ থেকে গভীর শোক-সমবেদনা জানানো হয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ এক টুইটে জানিয়েছেন, গভীর দুঃখের সঙ্গে আমাকে এই খবর জানাতে হচ্ছে যে, সন্ত্রাসীরা তারুশি জৈনকে হত্যা করেছে। ঢাকার সন্ত্রাসী হামলায় যাদের জিম্মি করা হয়েছিল, তাদের মধ্যে ছিল ভারতীয় নাগরিক তারুশি। তারুশি জৈনের বাবা সঞ্জীব জৈনের সঙ্গেও কথা বলেছেন বলে জানান সুষমা।
×