ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নীলফামারীতে মরিচের দাম কম, উৎপাদন খরচ উঠছে না কৃষকের

প্রকাশিত: ২০:৪০, ৮ জুলাই ২০১৬

 নীলফামারীতে মরিচের দাম কম, উৎপাদন খরচ উঠছে না কৃষকের

স্টাফ রিপোর্টার,নীলফামারী ॥ নীলফামারী ডিমলা,জলঢাকা ও ডোমার উপজেলায় মরিচের বা¤পার ফলন হলেও উপযুক্ত মূল্যে বিক্রি করতে না পারায় হতাশায় ভুগছেন মরিচ চাষীরা। এবারে ভাল জাতের মরিচ বীজ চারা তৈরী করে সঠিক সময়ে মরিচ রোপন করায় ও প্রতিকুল আবহাওয়ার কারনে আশানুরূপ মরিচ ফলন হয়েছে। বাজারে মরিচ উপযুক্ত মূল্যে বিক্রি করতে না পেরে আনন্দের বদলে হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন মরিচ চাষীরা। বর্তমানে বাজারে কাঁচা মরিচ প্রতি মন ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। জানা যায় ওই তিন উপজেলায় প্রায় সাড়ে তিন হাজার হেক্টর জমিতে মরিচ চাষ করে চাষীরা। গত বছর মরিচের দাম বেশী পাওয়ায় এবার কৃষকরা বেশী জমিতে মরিচ চাষ করায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশী জমিতে মরিচ চাষ হয়েছে। কৃষকরা জানায়, মরিচ ক্ষেত একটি দীর্ঘ মেয়াদী রবি শস্য মরিচ গাছ মরে না যাওয়া পর্যন্ত প্রতি সপ্তাহে ২ বার প্রতি বিঘা জমিতে ৪/৬ মন মরিচ সংগ্রহ করা সম্ভব। ডিমলা সদর ইউনিয়নের কুমার পাড়া গ্রামের সেরাজুল ইসলাম (৫৫), জানায়, গত বছর মরিচের দাম বেশী পাওয়ায় এবারে তিনি ১ একর জমিতে মরিচ চাষ করেছেন। এতে তার খরচ হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। আর এ পর্যন্ত তিনি মরিচ বিক্রি করেছেন ১৫ হাজার টাকা। পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়নের আবু বক্কর সিদ্দিক (৬০) জানায়, চলতি মৌসুমে তিনি ২ বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করেছেন আর মরিচ চাষে খরচ হয়েছে ১৫ হাজার টাকা। মরিচের বা¤পার ফলন হলেও গত ২ সপ্তাহে মরিচ বিক্রি করেছেন ৫ হাজার টাকা। অথচ গত বছর ঐ পরিমাণ কাঁচা মরিচ তিনি বিক্রি করেছেন ১৮/২০ হাজার টাকা। না। একই অবস্থায় জলঢাকা ও ডোমার উপজেলায়।ফলন বা¤পার হলেও তা বিক্রি করে উৎপাদন খরচও উঠছে না। জেলার মানুষের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাচ্ছে এ এলাকার মরিচ। উৎপাদন বেশি হলেও মরিচ সংরক্ষণের কোনো উপায় নেই। ফলে বেকায়দায় পড়েছেন এলাকার মরিচ চাষিরা। অপরদিকে, এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে মধ্যসত্ত্বভোগীরা হাতিয়ে নিচ্ছে অঢেল মুনাফা। ডোমারের বিভিন্ন হাট-বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়।ডোমার উপজেলার ছোট রাউতা হাটে মরিচ বিক্রি করতে আসা পাঙ্গা গ্রামের কাশেম আলীর ছেলে কৃষক রফিকুল ইসলাম (৩২) জানান, তিনি এবার এক বিঘা জমি থেকে তিন দফায় মরিচ পেয়েছেন ২২ মণ। কিন্তু দাম না থাকায় বেকায়দায় পড়ে ২০০ টাকা মণ দরে তিনি মরিচ বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন। কারণ মরিচ সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা তার নেই। তিনি আরও জানান, মরিচ বিক্রি করে চার হাজার চারশ টাকা পেয়েছেন। অথচ এক বিঘা জমিতে মরিচ উৎপাদনে তার ব্যয় হয়েছে প্রায় ১০ হাজার টাকা।একই অভিযোগ জলঢাকা উপজেলার গোলনা ইউনিয়নের নবাবগঞ্জ গ্রামের বশির উদ্দিনের ছেলে মরিচ চাষি তৈয়ব আলীর (৪০)।তিনি উন্নত জাতের মরিচ বিন্দু আবাদ করেও লাভ করতে পারছেন না। কারণ দাম নেই বাজারে। তিনি ৭ শতক জমি থেকে ফলন পেয়েছেন ৭ মন। নাটোরের বাগাতিপাড়ার ব্যবসায়ী নেকাব সর্দার (৪৫) জানান, ডোমারের ছোট রাউতা, চিলাহাটি বাজার, ডিমলার বাবুর হাট, ডাঙ্গার হাট ও জলঢাকার বঙ্গবন্ধু হাটে প্রচুর মরিচের আমদানি হয়।এসব হাট থেকে মরিচ কিনে ঢাকার কারওয়ান বাজার, চট্রগ্রাম, নাটোরসহ দেশের বিভিন্ন হাটবাজারে বিক্রি করা হয়। মরিচ কেনা থেকে শুরু করে বিক্রি করা পর্যন্ত সব খরচ বাদ দিয়ে মণ প্রতি তাদের মুনাফা হয় ২০০ টাকার বেশি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নীলফামারীর উপ-পরিচালক গোলাম মোঃ ইদ্রিস জানান, চলতি মৌসুমে জেলায় মরিচের বাম্পার ফলন হয়েছে। উৎপাদন বেশী হওয়ায় বাজারে দাম কমে গেছে। ফলে মরিচ চাষিরা মরিচ বেঁচে লোকসান না হলেও বেশী মুনাফা করতে পারছেনা। তিনি বলেন এবার দেশের বিভিন্ন স্থানেও মরিচের ভাল ফলন হয়েছে।
×