অনলাইন ডেস্ক॥ জার্মানিতে আশ্রয় নেয়া সিরীয় শরণার্থী সততার এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তিনি একটি পুরনো আলমারি থেকে প্রায় দেড় কোটি টাকা পাওয়ার পরও সেগুলো আত্মসাৎ করার চেষ্টা করেননি। বরং যথাযথ কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দিয়েছেন। এ ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেছে জার্মান পুলিশ ও প্রশাসন।
গতবছরের শেষ নাগাদ জার্মান পাড়ি জমান মোহাম্মদ এম নামের ওই শরণার্থী। ২৫ বছরের ওই যুবক সম্প্রতি সে দেশের নর্থ রিহিনে-ওয়েস্টফালিয়া রাজ্যের মিনডেন শহরের এক নতুন ফ্লাটে ওঠেন। ফ্লাটটি সাজানোর জন্য তিনি একটি দাতব্য সংস্থার কাছ থেকে কিছু পুরনো আসবাবপত্র উপহার পেয়েছিলেন। এগুলোর মধ্যে একটি কাঠের আলমারিও ছিল। তিনি সেটি বাড়ির দেয়ালে স্থাপন করার সময় এর মধ্যে ১ লাখ ৫০ হাজার ইউরো খুঁজে পান। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার মূল্য ১ কোটি ৩০ লাখ ২৯ হাজার ৬৭৯ টাকা। এই অর্থের ৫০ হাজার ছিল নগদ। বাকি ১ লাখ ইউরো ছিল সঞ্চয় বইতে।
মোহাম্মদ প্রথমে ভেবেছিলেন এগুলো হয়ত নকল মুদ্রা। নইলে অত টাকা কি কেউ এভাবে ফেলে রাখে! কিন্তু নেটে অনুসন্ধান চালিয়ে দেখেন এগুলো আসল ইউরো। এরপর তিনি জার্মানির অভিবাসন কর্তৃপক্ষের কাছে ছুটে যান এবং সমুদয় অর্থ হস্তান্তর করেন। নিজের মাতৃভূমি ছেড়ে আসা নি:স্ব ওই যুবকের মনে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ কোনো লোভের সঞ্চার করেনি। তার সততার এই ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর গোটা জার্মানিতে আলোড়ন তৈরি হয়েছে।
মোহাম্মদ জার্মানিতে আশ্রয় নিয়েছেন গতবছরের অক্টোবরে। তার পরিবার এখনও সিরিয়াতেই রয়েছে। এই বিপুল পরিমাণ অর্থ ফেরত দেয়া সম্পর্কে তিনি জার্মান সংবাদ মাধ্যম বিল্ডকে বলেন,‘আল্লাহ আমাকে অন্যের সম্পদের ওপর লোভ করা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। তাই আমি কখনই অন্যের জিনিসের ওপর লোভ করিনি। এজন্যই এই অর্থ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফেরত দিয়েছি।’
পুলিশ বলছে, সাধারণত: অল্প পরিমাণ অর্থ ফেরত দেয়ার ঘটনা দেখা যায়। কিন্তু দেড় কোটি টাকা ফেরত দেয়ার ঘটনা এর আগে দেখা যায়নি। এ সম্পর্কে পুলিশের এক মুখপাত্র বলেন,‘ওই যুবক একটি বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তার প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা বেড়ে গেছে।’ পুলিশ এখন ওই টাকার প্রকৃত মালিককে খুঁজছে।
তবে অত টাকা ফেরত দিলেও খোয়া যাওয়া ওই দেড় লাখ ইউরোর ৩ ভাগ তিনি খুঁজে পাওয়ার ফি হিসেবে পাচ্ছেন। কেননা জার্মানিতে এটাই আইন।