ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের গুলিতে গতবছর ১১৩৪ জন নিহত

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ১০ জুলাই ২০১৬

যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের গুলিতে গতবছর ১১৩৪ জন নিহত

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সর্বোচ্চসংখ্যক কৃষ্ণাঙ্গ তরুণ পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে। ২০১৫ সালে দেশটিতে মোট এক হাজার ১শ’ ৩৪ জন লোক পুলিশের হাতে নিহত হয়। এদের বেশিরভাগই কৃষ্ণাঙ্গ। এর মধ্যে প্রথম পাঁচ মাসেই নিহত হয় প্রায় ৪শ’ জন লোক। এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, ২০১৫ সালের প্রথম পাঁচ মাসে যুক্তরাষ্ট্রে দিনে দু’জনের বেশি লোক পুলিশের গুলিতে নিহত হয়। নিহতদের মধ্যে সমবয়সী শ্বেতাঙ্গর তুলনায় কৃষ্ণাঙ্গ তরুণের সংখ্যা পাঁচগুণ বেশি। সম্প্রতি দ্য গার্ডিয়ানের এক জরিপে এ তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বহুল প্রচারিত পত্রিকা ওয়াশিংটন পোস্টের অপর এক খবরে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের গুলিতে নিহতের এ সংখ্যা গত এক দশকের মধ্যে দ্বিগুণ। খবরে বলা হয়েছে, গেল বছর পুলিশের গুলিতে যারা নিহত হয়েছে বর্ণের বিচারে এদের অর্ধেক শ্বেতাঙ্গ আর ধর্মের দিক থেকে এদের অর্ধেক সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্য। তবে নিহতদের দুই-তৃতীয়াংশ হয় কৃষ্ণাঙ্গ অথবা যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত হিসপানিক সম্প্রদায়ের সদস্য। খবরে আরও বলা হয়েছে, প্রথম পাঁচ মাসে নিহতদের মধ্যে ২০ জন নারী রয়েছে। আর নিহতদের মধ্যে ৪৯ জন ছিল নিরস্ত্র লোক। নিহতদের গড় বয়স ১৬ থেকে ৮৩ বছরের মধ্যে। নিহতদের মধ্যে আট শিশু রয়েছে। এদের বয়স ১৮ বছরের নিচে। খবরে উল্লেখ করা হয়েছে, পুলিশের কবল থেকে পালানোর সময় এদের অনেককে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। ওদিকে, ২০১৫ সালের এ হত্যাকা-ে মাত্র তিনটি ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের আইন কর্মকর্তাদের দাবি, এর মধ্যে অনেক হত্যার ঘটনা এড়ানো যেত। তবে মার্কিন পুলিশের দাবি, গুলি চালানো ছাড়া তাদের সামনে আর কোন বিকল্প ছিল না। এসব হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে সাবেক মার্কিন পুলিশ প্রধান জিম বোয়ারম্যান বলেন, এ ধরনের হত্যাকা-ের খবর গণমাধ্যমে খুব কমই প্রচারিত হয়েছে। বর্তমানে ওয়াশিংটনভিত্তিক একটি অলাভজনক পুলিশ ফাউন্ডেশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন জিম বোয়ারম্যান। ওয়াশিংটন পোস্টকে তিনি বলেন, আমরা যদি এসব হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে না পারি তবে এসব হত্যাকা-ের ঘটনা কমিয়ে আনতে পারব না। মানবাধিকারকর্মী ও হোয়াইট হাউসের পুলিশবিষয়ক টাস্কফোর্সের সদস্য ব্রিটনি প্যাকনেট বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে মহামারী আকারে বেড়ে চলা এসব হত্যাকাণ্ডের সবচেয়ে বেশি শিকার হচ্ছে কৃষ্ণাঙ্গ তরুণরা। আর এসব ঘটনায় আমরা অনেক সম্ভাবনাময় তরুণকে হারাচ্ছি বলে তিনি উল্লেখ করেন। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ডালাসে মিকা জনসন (২৫) নামে এক বন্দুকধারীর গুলিতে পাঁচ পুলিশ নিহত ও ১২ জন গুলিবিদ্ধ হয়। পরে শুক্রবার ভোরে পুলিশের রোবট দিয়ে বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হলে জনসনের মৃত্যু হয়। এদিকে তার বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে বোমা তৈরির উপাদান, রাইফেল, গোলাবারুদ ও যুদ্ধবিষয়ক একটি জার্নাল পাওয়া গেছে। ৯/১১-এর পর যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর বন্দুকধারীদের সবচেয়ে ভয়াবহ হামলার ঘটনা। এর আগে মিনেসোটা ও লুইজিয়ানা অঙ্গরাজ্যে পুলিশের গুলিতে দুই কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তি নিহত হওয়ার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বিক্ষোভের সময় পুলিশের ওপর চোরাগোপ্তা গুলি চালানো হয়। ডালাসের পুলিশপ্রধান ব্রাউন দাবি করেছেন, ওই বন্দুকধারীকে আত্মসমর্পণ করানোর জন্য একজন মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে আলোচনা চলছিল। তখন জনসন জানিয়েছিলেন, পুলিশ যেভাবে সম্প্রতি কিছু কৃষ্ণাঙ্গকে গুলি করে হত্যা করেছে, সেসব নিয়ে তিনি ক্ষুব্ধ ছিলেন। তিনি বলেছেন, জনসন কৃষ্ণাঙ্গদের জীবনযাপন নিয়ে হতাশ ছিলেন। সম্প্রতি পুলিশের গুলিতে কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তির নিহত হওয়ার ঘটনায় তিনি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। শ্বেতাঙ্গদের নিয়েও তার মধ্যে হতাশা কাজ করছিল। তিনি বলেছেন, তিনি শ্বেতাঙ্গদের বিশেষ করে শ্বেতাঙ্গ পুলিশদের হত্যা করতে চান। তিনি বলেছেন, তিনি কোন দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নন এবং তিনি একাই এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। জনসন এক সময় মার্কিন সেনাবাহিনীতে ছিলেন এবং আফগানিস্তান ও ইরাকে কাজ করেছেন। পেন্টাগন জানিয়েছে, সেনাবাহিনীতে থাকার সময়ে তার বিরুদ্ধে কখনও কোন অভিযোগ ওঠেনি।
×