ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

সোশ্যাল মিডিয়ায় ভারতের ইমামদের জঙ্গীবিরোধী প্রচার

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ১০ জুলাই ২০১৬

সোশ্যাল মিডিয়ায় ভারতের ইমামদের জঙ্গীবিরোধী প্রচার

ইসলামের নামে জঙ্গীদের সন্ত্রাসমূলক প্রচারের সবচেয়ে বড় মঞ্চ ফেসবুক-টুইটার-হোয়াটসএ্যাপের মতো সোশ্যাল মিডিয়া। এবার সেই মঞ্চকে ব্যবহার করেই সন্ত্রাসবিরোধী পাল্টা প্রচারের ডাক দিচ্ছেন প্রভাবশালী মুসলিম ব্যক্তিত্বরা। পবিত্র ঈদের ঠিক পরের দিন, শুক্রবার থেকেই ফেসবুক-টুইটারকে হাতিয়ার করে এ পাল্টা প্রচার শুরু হয়েছে। ভারতের বর্ধমানের কালনায় ‘জঙ্গী নির্মূলে ইসলামের দোয়া’ শীর্ষক একটি খবর ‘এই সময়’-এ প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই, বিভিন্ন মসজিদের ইমাম এবং মুসলিম সংগঠনগুলোর হাত ধরে তা ভাইরাল হতে শুরু করেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়? ইসলাম মানুষ খুনের কথা বলে না? ইসলামের নাম ব্যবহার করে যারা এ সব করছে তারা মুসলিম নয়- জঙ্গীদের নিন্দা করে এমন পোস্টের পাশাপাশি ওই দিন সকাল থেকেই ‘এই সময়’-এর ওয়েবপেজ পোস্ট, টুইট আসা শুরু হয়? আর অল্প সময়ের মধ্যেই তাতে লাইক, শেয়ার, রিটুইটের বন্যা বইতে শুরু করে? কালনার মজলিশ সাহেবের ঈদগাহ মসজিদের ইমাম মাওলানা মহম্মদ তৈয়ব শেখের তরফে শুরু হওয়া এ সন্ত্রাসবিরোধী পোস্টের আহ্বান ছড়িয়ে পড়তে সময় লাগেনি? বিভিন্ন সংখ্যালঘু সংগঠন তো বটেই, দিনের শেষে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে অন্যতম প্রভাবশালী হিসেবে খ্যাত বর্ষীয়ান মাওলানা কারি ফজলুর রহমান থেকে শুরু করে টিপু সুলতান মসজিদের শাহী ইমাম মাওলানা মুফতি সৈয়দ মহম্মদ নুর-উর রহমান বরকতী কিংবা ফুরফুরা শরিফের পীরজাদা ইব্রাহিম সিদ্দিকী- সকলেই সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করে এ পাল্টা প্রচারের অভিনবত্বের প্রশংসা করার পাশাপাশি নিজেরাও একই আহ্বান জানানোর কথা বলেছেন? তাদের সম্মিলিত বক্তব্যের নির্যাস- জঙ্গীরা যে মঞ্চ ব্যবহার করে, এবার সেই মঞ্চকে ব্যবহার করেই বুঝিয়ে দেয়া হবে, সব ধর্মের মতো ইসলামও শান্তির কথাই বলে, সন্ত্রাস বা হত্যার অনুমতি দেয় না? ইমামের এ বার্তা যুব সম্প্রদায়ের মধ্যেও ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে? তারাও চাইছেন ইসলামের নামে সন্ত্রাস দূর হোক? কালনার যুবক টগর শেখ, উত্তর গোয়াড়ার বাসিন্দা ইমরান শেখ বলেন, ফেসবুকে ‘এই সময়’-এর খবর আমরাও শেয়ার করেছি? কারণ ইমাম সাহেবের বার্তা ছড়িয়ে পড়ুক- এটাই চাই? আমরা শান্তি চাই? অল ইন্ডিয়া মাইনরিটি এ্যাসোসিয়েশনের কালনা শাখার সম্পাদক নুর আলম বলেন, সোশ্যাল সাইটগুলোতে ভিডিও, ছবি আপলোড করে যুব সম্প্রদায়ের মগজধোলাই করছে জঙ্গীরা? ওই সাইটগুলোতে আমাদেরও পাল্টা বার্তা ছড়িয়ে দিতে হবে? তবেই ওরা নির্মূল হবে? যুব সম্প্রদায় যে এ ব্যাপারে উৎসাহী হয়েছে, সেটা দেখে ভাল লাগছে? সন্ত্রাসবিরোধী এ ফেসবুক প্রচারে গলা মেলাতে উৎসাহী মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে অন্যতম প্রভাবশালী হিসেবে খ্যাত বর্ষীয়ান মাওলানা কারি ফজলুর রহমান? তিনি বলেন, এর চেয়ে ভাল মাধ্যম আর কিছু হতে পারে না? আমিও পরিবার-পরিজনের যুবাদের সাহায্য নিয়ে একই পথে হাঁটার ব্যাপারে আগ্রহী? কোরান-হাদিস থেকে উদ্ধৃতি তুলে দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করব- কোনটা ঠিক আর কোনটা বেঠিক? ইসলামের সঙ্গে যে সন্ত্রাসের সম্পর্ক থাকতে পারে না, সেই বার্তা ইন্টারনেটের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার আহ্বান আমিও সকলকে জানাচ্ছি? একই বক্তব্যের প্রতিফলন কলকাতার টিপু সুলতান মসজিদের শাহী ইমাম বরকতী সাহেবের গলাতেও? তার বক্তব্য- ফেসবুক-টুইটারের ব্যাপারগুলোয় আমি সড়গড় নই? কিন্তু আমার ছেলে করে? তবে জানি, লাখো লোকের কাছে এর মাধ্যমে নিমেষে পৌঁছে যাওয়া যায়? তাই ছেলের সাহায্য নেব? কালনার ইমাম সাহেব যে কাজ শুরু করেছেন, তাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া উচিত আমাদের সকলের? ফুরফুরা শরিফের পীরজাদা ইব্রাহিম সিদ্দিকী বলেন, এবার তারাও ফেসবুক-টুইটারের মাধ্যমে জঙ্গীবিরোধী প্রচার চালাতে শুরু করবেন? তার কথায়- ইসলামের নাম করে সন্ত্রাস চালাচ্ছে যারা, তারা মুসলিম হতে পারে না? তারা যেহেতু সোশ্যাল সাইটগুলো ব্যবহার করে, তাই ওদের পাল্টা জবাব দেয়ার জন্য এটাই সেরা মাধ্যম? বৃহস্পতিবার ঈদের দিন কালনার প্রাচীন মজলিশ সাহেবের ঈদগাহ মসজিদে নামাজ শেষে দোয়া পাঠের সময় ইমাম মাইকে ‘বাংলাদেশের সন্ত্রাসবাদীরা বেঁচে থাকলে তাদের সাজা চেয়ে’ দোয়া করেন? ইমামের সেই দোয়ায় সায় দেন মসজিদে উপস্থিত হাজার দশেক নামাজি? মসজিদের ইমাম মাওলানা মহম্মদ তৈয়ব শেখের প্রায় ২০ মিনিটের দোয়া পাঠে সিংহভাগেই ছিল সন্ত্রাসবাদীদের প্রতি নিন্দা আর তাদের নির্মূল করার আবেদন? শুক্রবার সে খবর ‘এই সময়’-এ প্রকাশিত হওয়ার পরই ব্যাপক সাড়া পড়ে যায়? ফেসবুক-টুুইটার-হোয়াটসএ্যাপ মারফত তা ভাইরাল হতে শুরু করে? অল ইন্ডিয়া মাইনরিটি এ্যাসোসিয়েশনের কালনা শাখার সদস্য জাভেদ আরফিন মণ্ডল সকালেই সংগঠনের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ রুহুল আমিনকে পাঠিয়ে দেন সেই খবরের ওয়েবপেজ? প্রতিক্রিয়ায় সৈয়দ রুহুল আমিন জানান, সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট এখন গণমাধ্যমের কণ্ঠ? সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই? জঙ্গীরা যে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলোকে হাতিয়ার করে, সেই সাইটগুলো ব্যবহার করেই ওদের বিরুদ্ধে বার্তা দিতে হবে? হোয়াটসএ্যাপের মাধ্যমে সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশনের রাজ্য সম্পাদক কামরুজ্জামানকেও ওই খবরের অনলাইন প্রতিলিপি পাঠিয়ে দেন জাভেদ আফরিন মণ্ডল? কালনা আঞ্জুমান মসজিদ ও মজলিশ শাহ সোসাইটির সভাপতি শাহনাওয়াজ উদ্দিন মণ্ডল বলেন, চারদিকে সন্ত্রাসবাদী হামলা হচ্ছে? আর এর সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে নবীন প্রজন্মের শিক্ষিত ছেলেরা? তাই তাদের কাছে শান্তির বার্তা দেয়া প্রয়োজন? ইমামের মুখ দিয়ে সেই বার্তা বের হলে তার গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে? পবিত্র ঈদের দিন ইমাম সেই বার্তাই দিয়েছেন? সেই খবর প্রকাশ করার জন্য ‘এই সময়’কে ধন্যবাদ জানাচ্ছি? তিনি জানান, খবরটি আরও ছড়িয়ে পড়ার স্বার্থেই সোশ্যাল মিডিয়াকে হাতিয়ার করা প্রয়োজন? -সূত্র : এই সময়
×