ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

দশ যুবক রহস্যজনক নিখোঁজ, টনক নড়েছে অভিভাবকদের

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ১০ জুলাই ২০১৬

দশ যুবক রহস্যজনক নিখোঁজ, টনক নড়েছে অভিভাবকদের

আরাফাত মুন্না ॥ গুলশানে রেস্তরাঁয় হামলার পর নিখোঁজ সন্তানদের বিষয়ে টনক নড়ছে অভিভাবকদের। হলি আর্টিজান রেস্তরাঁয় হামলাকারীদের কয়েক মাস ধরে নিখোঁজ থাকার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর ১০ যুবকের সন্ধান চেয়ে তাদের ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তারা। একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে, এ ১০ যুবকের সন্ধান পেতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তাও চেয়েছে পরিবারগুলো। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে ওই সব পরিবারের পরিচয় প্রকাশ করেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ ১০ জন ছাড়া নতুন কারও নিখোঁজ থাকার খবর তাদের কাছে নেই বলে পুলিশ সূত্র জানিয়েছে। অন্যদিকে, শোলাকিয়ায় ঈদ জামাতের মাঠের কাছে গোলাগুলির মধ্যে নিহত সন্দেহভাজন হামলাকারী আবীর রহমানও চার মাস ধরে নিখোঁজ ছিলেন। তার সন্ধান চেয়ে ঈদের আগের দিনই থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিল পরিবার। অপরদিকে, গুলশানে রেস্তরাঁয় হামলাকারীদের প্রায় সবাই গত কয়েক মাস ধরে নিখোঁজ ছিল। পুলিশ এবং পরিবারের সদস্যদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, হামলার দিনই কথিত ইসলামিক স্টেট-সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইট ‘আমাক’-এর বরাত দিয়ে সাইট ইন্টেলিজেন্স যে পাঁচ আক্রমণকারীর ছবি প্রকাশ করে তার মধ্যে চারজনই নিখোঁজ ছিল। নিখোঁজ ১০ যুবক হলেনÑ ঢাকার তেজগাঁওয়ের মোহাম্মদ বাসারুজ্জামান, বাড্ডার জুনায়েদ খান (পাসপোর্ট নম্বর-এএফ ৭৪৯৩৩৭৮), চাঁপাইনবাবগঞ্জের নজিবুল্লাহ আনসারী, ঢাকার আশরাফ মোহাম্মদ ইসলাম (পাসপোর্ট নম্বর-৫২৫৮৪১৬২৫), সিলেটের তামিম আহমেদ চৌধুরী (পাসপোর্ট নম্বর-এল ০৬৩৩৪৭৮), ঢাকার ইব্রাহীম হাসান খান (পাসপোর্ট নম্বর-এএফ ৭৪৯৩৩৭৮), লক্ষ্মীপুরের এটিএম তাজউদ্দিন (পাসপোর্ট নম্বর-এফ ০৫৮৫৫৬৮), ঢাকার ধানম-ির জুবায়েদুর রহিম (পাসপোর্ট নম্বর-ই ১০৪৭৭১৯), সিলেটের মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ ওজাকি (পাসপোর্ট নম্বর-টিকে ৮০৯৯৮৬০) ও জুন্নুন শিকদার (পাসপোর্ট নম্বর-বিই ০৯৪৯১৭২)। এদিকে, নিখোঁজ সন্তানের খোঁজে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে অভিভাবকদের দেয়া ছবির ইব্রাহীম হাসান খান গত বছরের ১২ জুন বন্ধুকে নিয়ে গিয়েছিলেন গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে। তার যে ছবি টেলিভিশন ও পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে তা দেখে বন্ধুরা নিশ্চিত করেছেন, এটাই তার ফেসবুক এ্যাকাউন্টে থাকা ছবি। ফেসবুকে তিনি শেষ পোস্ট দেন ২০১৫ সালের ১৩ জুলাই। সেখানে কোরানের আয়াত দিয়ে পোস্ট দিয়েছেন ইব্রাহীম। ইব্রাহীমের ফেসবুকে গিয়ে তার বন্ধু তালিকা থেকে একজনের কাছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ছবি দিয়ে কোনটি ইব্রাহীম জানতে চাইলে তিনি শনাক্ত করেন। ওই বন্ধু আরও জানান, যে ছবি দেয়া হয়েছে সেটি তার কিশোর বয়সের ছবি। ইব্রাহীম স্কুলে থাকতে সৌদি আরবে বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে পড়ালেখা করেছেন। এরপর দেশে ফিরে আসেন। তার নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে বন্ধুরা কিছু জানাতে পারেননি। তবে তার চালচলন এবং জীবনযাপন দেখলে অন্য ধরনের কিছু সন্দেহ করার সুযোগ ছিল না বলে উল্লেখ করেন তারা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক বন্ধু বলেন, সম্প্রতি ইব্রাহীমকে ফেসবুকে বার্তা পাঠানোর পর বার্তাটি তিনি দেখেছেন বলে ‘সিন’ লেখা এলেও কোনও উত্তর দেননি তিনি। গত ১ জুন শুক্রবার গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে একদল অস্ত্রধারী ঢুকে দেশী-বিদেশী অন্তত ৩৩ অতিথিকে জিম্মি করার পর ২০ জনকে হত্যা করে। হামলাকারীদের ছবি সাইট ইন্টেলিজেন্স প্রকাশ করার পর তাদের সঙ্গে মিল দেখে পরিচিতজনরা পুরনো ছবি পাশাপাশি রেখে শেয়ার করতে থাকেন। এর মধ্য দিয়ে পাঁচ হামলাকারীরই পরিচয় জানা সম্ভব হয়, যাদের মধ্যে স্কলাসটিকার সাবেক ছাত্র রোহান ইমতিয়াজ ও বর্তমান ছাত্র মীর সামেহ মুবাশ্বের এবং নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র নিবরাস ইসলাম গত কয়েক মাস ধরে নিখোঁজ বলে পরিবারের ভাষ্য। অপর দুই হামলাকারী বগুড়ার ধুনটের শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল এবং শাজাহানপুর উপজেলার চোপিনগর ইউনিয়নের মোঃ খায়েরুজ্জামানও কয়েক মাস ধরে পরিবারের যোগাযোগের বাইরে ছিলেন বলে তাদের স্বজনরা জানান। তাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর জেলার আর কোনও যুবক নিখোঁজ আছেন কি-না তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে বগুড়ার পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান জানিয়েছিলেন। এদিকে, র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদও পরিবারের কোনও সদস্য নিখোঁজ থাকলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তা জানাতে অনুরোধ করেন। চার মাস নিখোঁজ ছিল আবীর ॥ আবীরের নিখোঁজের বিষয়ে ঈদের আগের দিন পরিবারের পক্ষ থেকে রাজধানীর ভাটারা থানায় একটি জিডি করা হয় বলে ওই থানার ওসি নুরুল মোত্তাকিন জানান। তিনি বলেন, গত ৬ জুলাই আবীরের বাবা সিরাজুল ইসলাম ছেলে নিখোঁজের বিষয়ে থানায় জিডি করেন। গত ১ মার্চ থেকে আবীর নিখোঁজ বলে জানান তিনি। এতদিন পর জিডি করার কারণ জিজ্ঞাসা করেছিলেন বলে জানান ওসি। জবাবে সিরাজুল ইসলাম বলেন, বিদেশে যাওয়া নিয়ে রাগ করে ছেলে বাসা থেকে বেরিয়েছিল। ও মালয়েশিয়ায় যেতে চেয়েছিল, আমি বলেছিলাম দুই ভাই অস্ট্রেলিয়ায় থাকে সেখানে যাও। এ নিয়ে কথা কাটাকাটির পর বাসা থেকে বেরিয়ে যায়। ভেবেছিলাম মালয়েশিয়ায় গেছে, নিজেই ফিরে আসবে। কিন্তু গুলশানে হামলার পর মনে সন্দেহ হওয়ায় থানায় এসেছি। ২২ বছর বয়সী আবীর নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ’র শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন। গত ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে হামলাকারীদের একজন নিবরাস ইসলামও ঢাকার এই বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। তিনিও কয়েক মাস ধরে নিখোঁজ ছিলেন।
×