ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

নারায়ণগঞ্জে লাঞ্ছিত সেই শিক্ষকের কর্মস্থলে যোগদান

প্রকাশিত: ২৩:৫২, ১০ জুলাই ২০১৬

নারায়ণগঞ্জে লাঞ্ছিত সেই শিক্ষকের কর্মস্থলে যোগদান

নিজস্ব সংবাদদাতা, নারায়ণগঞ্জ ॥ অবশেষে নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার কল্যান্দি এলাকার পিয়ার লতিফ সাত্তার উচ্চ বিদ্যালয়ের লাঞ্ছিত সেই প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত দীর্ঘ প্রায় দুই মাস পর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে রবিবার সকাল ৯টায় তার কর্মস্থলে যোগদান করেছেন। কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে পুলিশ পাহারায় পূর্বের কর্মস্থলে স্বপদে ফিরে এসে শ্যামল কান্তি ভক্ত এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, অশুভ শক্তির পরাজয় হয়ে সত্যের শুভ জয় হয়েছে। অন্যদিকে তার যোগদানের মধ্য দিয়ে বিদ্যালয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। চলতি বছরের ১৩ মে ধর্মীয় অবমামনার অপবাদ দিয়ে নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার কল্যান্দি এলাকার পিয়ার লতিফ সাত্তার উচ্চ বিদ্যালয়ের লাঞ্ছিত প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে প্রথমে স্কুল কমিটির লোকজন ও স্থানীয় জনতা মারধর করেন। পরে নারায়ণগঞ্জ-৫ (শহর ও বন্দর) আসনের জাতীয় পার্টি দলীয় সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমান জনতার সামনেই তাকে কানধরে উঠবস করান এবং হাতজোর করে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করান। পরে আহত শ্যামল কান্তি ভক্তকে শহরের খানপুরে নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তার পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে তাকে উন্নত চিকিৎসার গত ২০ মে পুলিশের পাহারায় শ্যামল কান্তি ভক্তকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত ৯ জুন চিকিৎসা শেষে তিনি পুলিশ পাহারায় নারায়ণগঞ্জ শহরের নগর খানপুরের বাসায় উঠেন। এদিকে ঘটনার পরদিন বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদ ওই প্রধান শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করেন। লাঞ্ছিত শিক্ষক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৬ মে সেই বহি:স্কারাদেশ গ্রহণ করেন। ঘটনার পর দেশব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি হলে প্রতিবাদের ঝড় উঠে। সরকারের উচ্চ পর্যায়ে সাংসদ সেলিম ওসমানের কর্মকান্ডের সমালোচনাসহ নিন্দা জানানো হয়। পাশাপাশি বিভিন্ন মহল থেকে সংসদ সদস্য পদ থেকে বহিস্কারসহ তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিষয়টি তদন্ত করে পরবর্তীতে শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে পূণর্বহালের নির্দেশ দেয়। রবিবার শ্যামল কান্তি ভক্ত তার কর্মস্থলে যোগদানের পর শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে উৎসবমূখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। দীর্ঘদিন পর প্রধান শিক্ষককে বিদ্যালয়ে ফিরে পেয়ে শিক্ষার্থীরাও আনন্দ প্রকাশ করেন। শ্যামল কান্তি ভক্ত বিদ্যালয়ে পুণরায় যোগদানের পর তার সহকর্মী শিক্ষকবৃন্দ তাকে সাদরে গ্রহণ করে আনন্দ প্রকাশ করেছেন। বিদ্যালয়ের ধর্মীয় শিক্ষক ও শিক্ষক প্রতিনিধি সৈয়দ মো. বোরহানুল ইসলাম আনন্দ প্রকাশ করে শ্যামল কান্তি ভক্তকে সব ব্যাপারে সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন। এদিকে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে দীর্ঘ দুই মাস পর বিদ্যালয়ে পূর্বের কর্মস্থলে যোগদানের পর এক প্রতিক্রিয়ায় শ্যামল কান্তি ভক্ত জানান, তিনি স্বাভাবিক নিয়মে কাজ করে যেতে আগ্রহী। তিনি মনে করেন তার কর্মস্থলে ফিরে আসা সত্যের জয় হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে যোগদানের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, বিদ্যালয়ের স্বার্থে আগের মতোই তিনি তার দায়িত্ব পালন করবেন। বন্দর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নুরুল আমিন বিদ্যালয়ে শ্যামল কান্তি ভক্তের যোগদানের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, বিদ্যালয়ের পরিবেশ স্বাভাবিক রয়েছে। বন্দর থানার ওসি আবুল কালাম সেই শিক্ষক স্কুলে যোগদানের কথা স্বীকার করে জানান, সাদা পোশাকে পুলিশ পাহারায় সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত যোগদান করে স্কুলে উপস্থিত ছিলেন। এ সময় পরিবেশ সম্পুর্ণ শান্ত ছিল।
×