ইরাক যুদ্ধকে অবৈধ আখ্যা দিলেন ব্রিটেনের সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী জন প্রেসকট। তিনি বলেছেন, ২০০৩ সালের মার্চে মার্কিন নেতৃত্বাধীন ইরাক আগ্রাসনে ব্রিটেনের অংশগ্রহণ ছিল একটি ভুল সিদ্ধান্ত। ইরাক যুদ্ধে যুক্তরাজ্যের অংশগ্রহণ সম্পর্কিত চিলকট রিপোর্ট প্রকাশের পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার এখন তোপের মুখে রয়েছেন। খবর বিবিসি ও গার্ডিয়ান অনলাইনের।
সানডে মিরর পত্রিকায় প্রেসকট লিখেছেন, ইরাক যুদ্ধে যাওয়ার ‘বিপর্যয়কর সিদ্ধান্ত’ তাকে আজীবন কষ্ট দেবে। ইরাক যুদ্ধে ব্রিটেনের অংশগ্রহণ নিয়ে বুধবার চিলকট রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। রিপোর্টটি প্রণয়ন করতে সাত বছর লেগে যায়। ওই রিপোর্ট প্রকাশের পর প্রেসকট রবিবার এ বিষয়ে নিজের মতামত তুলে ধরেছেন। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কোফি আনান যেমন বলেছিলেন ইরাক যুদ্ধ অবৈধ, ‘দুঃখ ভারাক্রান্ত মন ও ক্ষোভের সঙ্গে’ সে কথার সঙ্গে এখন প্রেসকটও একমত হয়েছেন। ২০০৩ সালে মার্চে ইরাক যুদ্ধ শুরুর সময় ব্রিটেনের ক্ষমতায় ছিল লেবার পার্টি। অন্য সবার সঙ্গে প্রেসকটও তখন যুদ্ধে যাওয়ার পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন। ওই পার্টির বর্তমান নেতা জেরেমি করবিন যুদ্ধে যোগ দেয়ার জন্য দলের পক্ষ থেকে ক্ষমা চাওয়ার প্রশংসা করেছেন প্রেসকট। যুদ্ধ শুরুর পর তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের প্রতি সংহতি জানিয়ে ব্লেয়ার বলেছিলেন, ‘আপনি যাই করেন, আমরা আপনার সঙ্গে আছি’। ব্লেয়ারের এই উক্তিকে ‘প্রলয়ঙ্করী’ বলেছেন প্রেসকট। চিলকট রিপোর্টে বলা হয়েছে, ব্রিটিশ সৈন্যদের প্রস্তুত না করে যুদ্ধক্ষেত্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এছাড়া যুদ্ধই তখন একমাত্র শেষ বিকল্প ছিল না। প্রেসকট লিখেছেন, ‘ইরাক যুদ্ধে যাওয়ার সিদ্ধান্তের কথা প্রতিদিন আমার স্মরণে থাকবে। বহু ব্রিটিশ সৈন্য এতে জীবন দিয়েছে, আহত হয়েছে। সাদ্দাম হোসেনকে ক্ষমতাচ্যুত করার মাধ্যমে যে প্যান্ডোরার বাক্স খুলে দেয়া হয়েছে ১ লাখ ৭৫ হাজার বেসামরিক লোক জীবন দিয়ে তার মাশুল গুনেছে।’ জন চিলকটের রিপোর্টে ব্লেয়ারের ইরাক যুদ্ধে অংশগ্রহণকে ভুল ও দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ হিসেবে দেখান হলেও যুদ্ধকে অবৈধ বলা হয়নি। ওই যুদ্ধ সম্পর্কে প্রেসকট নিজের পূর্বমত পাল্টে এখন এটিকে অবৈধ বলেছেন। ব্লেয়ারের সমালোচনা করে প্রেসকট বলেন, যুদ্ধের বৈধতা নিয়ে আলোচনার কোন সুযোগ তিনি মন্ত্রিসভার সদস্যদের দেননি। ২০০৪ সালে কোফি আনান বলেছিলেন, ‘শাসক পরিবর্তন করাই ছিল ইরাক যুদ্ধের একমমাত্র উদ্দেশ্য। তাই এই যুদ্ধ অবৈধ।’ তার এই বক্তব্যের সঙ্গে ক্ষোভ ও দুঃখের সঙ্গে সহমত পোষণ করেছেন প্রেসকট। তিনি বলছেন কোফি আনান সঠিক বলেছেন। প্রেসকট বলেছেন, এ্যাটর্নি জেনারেল লর্ড গোল্ডস্মিথ কেবিনেটে এসে বলেছিলেন এই যুদ্ধ বৈধ। কিন্তু তিনি তার দাবির পক্ষে কোন দলিলপত্র উপস্থাপন করতে পারেননি। লেবার পার্টির বর্তমান নেতা জেরেমি করবিন যুদ্ধে ব্রিটেনের অংশগ্রহণের জন্য দলে পক্ষ থেকে ইতোপূর্বে যে ক্ষমা চেয়েছে তাকে ইতিবাচক দৃষ্টিতেই দেখছেন প্রেসকট। তিনিও যুদ্ধে নিহত সৈন্যদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেছেন। যুদ্ধ বিরোধী রাজনীতিক হিসেবে করবিনের পরিচিতি রয়েছে। এছাড়া তিনি ব্লেয়ারের একজন কট্টর সমালোচক। ইরাক যুদ্ধে ১৭৯ ব্রিটিশ সৈন্যের মৃত্যু এবং এর পরবর্তী ছয় বছরে দেড় লাখের বেশি ইরাকী বেসামরিক লোকের মৃত্যুর জন্য ব্রিটেনের অনেকেই চান ব্লেয়ারকে বিচারের মুখোমুখি করা হোক। ব্লেয়ার অবশ্য ইতোপূর্বে নিজের ভুলের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তবে ওই যুদ্ধে অংশগ্রহণ নিয়ে তিনি দুঃখ প্রকাশ করেননি।
ইরাক যুদ্ধ নিয়ে বুধবার লন্ডনে প্রকাশিত চিলকট তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়েছে ২০০৩ সালে মার্কিন নেতৃত্বাধীন ইরাক যুদ্ধে যুক্তরাজ্যের অংশগ্রহণ কোন যৌক্তিক বিবেচনার ভিত্তিতে ছিল না। ইরাক যুদ্ধ তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের জনপ্রিয়তা প্রায় শূন্যের কোটায় নিয়ে আসে। রিপের্টে ভুল তথ্যের ওপর ভিত্তি করে ইরাক যুদ্ধ যাওয়ার জন্য ব্লেয়ারকে দায়ী করা হয়েছে। এজন্য তিনি বিচারের মুখোমুখি হতে পারেন।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: