ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অফিস আদেশ

কোন শিক্ষার্থী টানা ১০ দিন অনুপস্থিত থাকলে সরকারকে জানাতে হবে

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ১১ জুলাই ২০১৬

কোন শিক্ষার্থী টানা ১০ দিন অনুপস্থিত থাকলে সরকারকে জানাতে হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কোন শিক্ষার্থী প্রতিষ্ঠানে ১০ দিনের বেশি অনুপস্থিত থাকলে তার বিষয়ে যাবতীয় তথ্য জানাতে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে সরকার। বাড়ি থেকে পালিয়ে জঙ্গীবাদে জড়ানোর একের পর এক তথ্য প্রকাশের পর রবিবার সচিবালয়ে এক সভা শেষে সরকারের এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে একটি অফিস আদেশও জারি করেছে। আদেশে বলা হয়েছে, কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে টানা দশ দিনের বেশি শিক্ষার্থী অনুপস্থিত থাকলে তার তালিকা করে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে জমা দিতে হবে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষকে। পড়াশোনার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের অন্যান্য কার্যক্রমের দিকে খেয়াল রাখার জন্যও শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সভাপতিত্বে সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় এ সভা। পরে মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘কোন ছাত্র ১০ দিন বা তার বেশি অনুপস্থিত আছে কি না- তার তালিকা পাঠাতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে ছেলে-মেয়েদের মধ্যে কোন অস্বাভাবিকতা আছে কি না। গত ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গী হামলার পর সশস্ত্র বাহিনীর অভিযানে নিহত ছয়জনের মধ্যে পাঁচজনের ছবি প্রকাশ করেছিল আইএস, যারা গত কয়েক মাস নিখোঁজ ছিল বা পরিবারের যোগাযোগের বাইরে ছিল বলে স্বজনরা জানিয়েছেন। এরপর ঈদের দিন কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় পুলিশের গুলিতে নিহত যুবকও গত মার্চ থেকে নিখোঁজ ছিল বলে পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় জিডি করা হয়। এই ছয়জনের মধ্যে চারজনই ব্যয়বহুল বিভিন্ন ইংরেজী মাধ্যমের স্কুলে লেখাপড়া করেছে। তাদের দুইজন ঢাকার নামী বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ছাত্র ছিল, একজন ছিল ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের। গুলশান ও শোলাকিয়ায় সন্ত্রাসী হামলার প্রসঙ্গ তুলে শিক্ষামন্ত্রী নাহিদ বলেন, যে ঘটনা ঘটে গেল সবাইকে বিস্মিত করেছে। এটা মর্মান্তিক ও দুঃখজনক, যা কখনও কাম্য ছিল না। এসব ঘটনা নিয়ে ‘খুবই উদ্বিগ্ন’ জানিয়ে তিনি বলেন, বিষয়গুলোতে তুলনামূলক সচ্ছল পরিবারের ছেলে-মেয়েরা যেগুলোতে লেখাপড়া করে বা ইংরেজী মাধ্যমের স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বেশি যুক্ত হয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন, খুবই চিন্তিত। যেহেতু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছেলে-মেয়েরা যুক্ত হয়েছে তাই আমাদের বাড়তি দায়িত্ব অবশ্যই আছে। পরে ঢাকা কলেজের একাদশ শ্রেণীর নবীনবরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, স্বার্থান্বেষী কুচক্রী মহল শান্তির ধর্ম ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের একটি অংশকে বিভ্রান্ত করার ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। এ ধরনের ধর্মের লেবাসধারী রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রকারীদের প্রতিহত করতে শিক্ষামন্ত্রী ছাত্র-শিক্ষক, অভিভাবকসহ সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের নিয়মিত লেখাপড়া নিশ্চিত করার পাশাপাশি শিক্ষক ও অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে উঠতি বয়সী শিক্ষার্থীদের আচার-আচরণ, চলাফেরার প্রতি বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে কারও গতিবিধি সন্দেহজনক মনে হলে তাকে পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানাতে হবে। কারও সন্তান নিখোঁজ হলে থানায় জিডি করে রেডিও, টেলিভিশন, পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে প্রচারের ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানান। শিক্ষামন্ত্রী আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিখোঁজ ব্যক্তিদের সন্ধান লাভে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একটানা ১০ দিনের বেশি অননুমোদিতভাবে অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের খোঁজ-খবর নেয়ার জন্য তিনি শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান। তবে অযথা কাউকে হয়রানি করা যাবে না বলে শিক্ষামন্ত্রী সতর্ক করে দেন। শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী গতিশীল নেতৃত্বে দেশ যখন সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে চলেছে তখনই স্বাধীনতার পরাজিত শক্তি ও তাদের দোসররা দেশকে একটি অস্থিতিশীল রাষ্ট্রে পরিণত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। দেশ ও জাতির স্বার্থে এ ঘৃণ্য অপশক্তিকে প্রতিরোধ করতেই হবে। ঢাকা কলেজ মিলনায়তনে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. এসএম ওয়াহিদুজ্জামান, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান এবং বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সভাপতি আই, কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকারও বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোঃ মোয়াজ্জম হোসেন মোল্লাহ। উল্লেখ্য, সম্প্রতি আরও ১০ যুবকের সন্ধান চেয়ে তাদের প্রতি ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তাদের অভিভাবকরা। এরা হলেন- ঢাকার তেজগাঁওয়ের মোহাম্মদ বাসারুজ্জামান, বাড্ডার জুনায়েদ খান (পাসপোর্ট নম্বর- এ এফ ৭৪৯৩৩৭৮), চাঁপাইনবাবগঞ্জের নজিবুল্লাহ আনসারী, ঢাকার আশরাফ মোহাম্মদ ইসলাম (পাসপোর্ট নম্বর-৫২৫৮৪১৬২৫), সিলেটের তামিম আহমেদ চৌধুরী (পাসপোর্ট নম্বর-এল ০৬৩৩৪৭৮), ঢাকার ইব্রাহীম হাসান খান (পাসপোর্ট নম্বর-এ এফ ৭৪৯৩৩৭৮), লক্ষ্মীপুরের এ টিএম তাজউদ্দিন (পাসপোর্ট নম্বর- এফ ০৫৮৫৫৬৮), ঢাকার ধানম-ির জুবায়েদুর রহিম (পাসপোর্ট নম্বর-ই ১০৪৭৭১৯), সিলেটের মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ ওজাকি (পাসপোর্ট নম্বর-টি কে ৮০৯৯৮৬০) ও জুন্নুন শিকদার (পাসপোর্ট নম্বর-বি ই ০৯৪৯১৭২)।
×