ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নর্থ সাউথ ভার্সিটির সন্দেহভাজন সেই শিক্ষকসহ দুজন এখন কোথায়-রহস্য দানা বাঁধছে

গুলশান-শোলাকিয়া হামলায় অংশ নেয় কত জঙ্গী?

প্রকাশিত: ০৬:০০, ১১ জুলাই ২০১৬

গুলশান-শোলাকিয়া হামলায় অংশ নেয় কত জঙ্গী?

শংকর কুমার দে ॥ রাজধানীর গুলশান ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় সন্ত্রাসী হামলায় অংশগ্রহণকারী জঙ্গীদের অনেকেই এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। তবে এই দুটি সন্ত্রাসী হামলায় মামলা হয়েছে, তবে কতজন জঙ্গী সদস্য অংশ নিয়েছে তা এখনও স্পষ্ট নয়, অন্ধকারে রয়েছে তদন্তকারী পুলিশ ও গোয়েন্দারা। দেশে আরও জঙ্গী হামলা হতে পারে এমন আশঙ্কা করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যাপক প্রস্তুতির নির্দেশ দিয়ে জঙ্গীবিরোধী গ্রেফতার অভিযান জোরদার করা হয়েছে। পলাতক জঙ্গীরা যাতে সীমান্ত পেরিয়ে পার্শ্ববর্তী চলে যেতে না পারে সেজন্য সীমান্তে সতর্কবার্তা পাঠানো হয়েছে। সারাদেশে গত এক বছরে নিখোঁজের সংখ্যা প্রায় ১৩৭ জন, যার মধ্যে ৭৭ জনের তথ্য মিলেছে ও ১০ জনের প্রোফাইল পেয়েছে পুলিশ। এদিকে গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তরাঁয় জঙ্গী হামলার ঘটনায় আটক নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক আবুল হাসনাত রেজাউল করিম ও কানাডা প্রবাসী তাহমিদ হাসিব খান কোথায় তা নিয়ে রহস্যের জট পাকাচ্ছে। পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে এ খবর জানা গেছে। সূত্র জানান, গুলশানে হলি আর্টিজান ক্যাফেতে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় গুলশান থানায় মামলায় কত জঙ্গী অংশ নিয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। যৌথবাহিনীর অভিযানের সময়ে যে পাঁচ জঙ্গীসহ ছয়জন মারা গেছে তাদের আসামি থেকে বাদ দিয়ে মামলার এজাহারে আসামির ঘরে উল্লেখ করা হয়েছে অজ্ঞাত সংখ্যক। হলি আর্টিজানে হামলার ঘটনায় গত ৪ জুলাই সন্ত্রাসবিরোধী আইনে যে মামলাটি দায়ের করা হয় সেখানে কোন জঙ্গীকে এজাহারের আসামি করা হয়নি। এমনকি এজাহারের বয়ানেও কোন আসামির নাম উল্লেখ করেননি মামলার বাদী গুলশান পুলিশের ইন্সপেক্টর সালাহউদ্দীন মিয়া। ফলে কত জঙ্গী হলি আর্টিজানের হামলায় অংশ নিয়েছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো এখনও জানে না। এতে কতজন জঙ্গী হামলায় অংশ নিয়েছিল সে সম্পর্কে এখনও স্পষ্ট হতে পারেনি তদন্তকারীরাও। তবে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ধারণা, ৮ থেকে ১০ জঙ্গী ওইদিনের হামলায় অংশ নিয়েছিল। এদের মধ্যে ৫ জঙ্গী অভিযানের সময়ে নিহত হয়। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র জানায়, গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জঙ্গী হামলার সময়ের যে ভিডিও ফুটেজে দেখেছেন তাতে ঘটনার দিন রাত সোয়া আটটায় দিকে পিঠে ব্যাক প্যাক ঝুলিয়ে প্রথমে ২ জঙ্গী হেঁটে ‘আল্লাহু আকবর’ ধ্বনি দিয়ে ৭৯ নম্বর রোডের হলি আর্টিজান রেস্তরাঁয় প্রবেশ করতে দেখা গেছে। তাদের পিছু পিছু আরও ৩ জন জঙ্গী একই কায়দায় পিঠে একজন ব্যাক প্যাক ঝুলিয়ে ক্যাফেতে ঢোকে। পরে লম্বা আকৃতির আরও একজন জঙ্গী হলি আর্টিজানের প্রবেশপথে গিয়ে দাঁড়ায়। এর পরই গুলির আওয়াজ শুরু হয়। কিছুক্ষণ পর হলি আর্টিজানের কাছে একটি মাইক্রোবাস আসে। লম্বা আকৃতির ছেলেটি দ্রুত মাইক্রোবাসে উঠে চালকের পাশের আসনে বসে। পরে মাইক্রোবাসটি ৭৯ নম্বর সড়কের কাছে চার রাস্তার মোড়ে এসে দাঁড়ায়। লম্বা আকৃতির যুবকটি মাইক্রোবাস থেকে নেমে চার রাস্তার মোড়ে দাঁড়ায়। সেখানে আরও দুইজন যুবক পূর্ব থেকেই অপেক্ষা করছিল। এদের একজনের পরনে ছিল পাঞ্জাবি ও মাথায় টুপি। তিনজন যুবকদের একজনকে মোবাইল ফোনে কথা বলতে দেখা যায়। ভিডিও ফুটেজে তিন যুবকের মধ্যে অস্থিরতা পরিলক্ষিত হয়েছে। কিছুক্ষণ পর পুলিশের একটি মোবাইল পিকআপ চার রাস্তার পাশ দিয়ে ৭৯ নম্বর সড়কে প্রবেশ করে। এরপরই ওই ৩ যুবক উধাও হয়ে যায়। ভিডিও ফুটেজ দেখে গোয়েন্দারা ধারণা করছে, ৩ যুবকই হচ্ছে জঙ্গী। হলি আর্টিজানে প্রবেশ করা জঙ্গীদের কাভার দিতেই তারা আশপাশে অবস্থান করছিল। এই ৩ জঙ্গীকেই ভিডিও ফুটেজ থেকে শনাক্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে গোয়েন্দারা। জঙ্গীরা মাইক্রোবাসে না অন্য কোন বাহনে এসেছিল তা জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। হলি আর্টিজানে যে ৫ জন জঙ্গী মারা গেছে তাদের পরিচয় ইতোমধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এরা হলো স্কলাসটিকা স্কুলের সাবেক ছাত্র মীর সামিহ মোবাশ্বের, মালয়েশিয়ার মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নিব্রাস ইসলাম, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, আন্দালিব আহমেদ ও রায়হান মিনহাজ। বাকি যে ৩ জঙ্গী বাইরে অবস্থান করছিল তাদের অদ্যাবধি শনাক্ত করা যায়নি। তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের ইন্সপেক্টর হুমায়ুন ঘটনাস্থল গুলশানের হলি আর্টিজান ক্যাফে পরিদর্শন করেছেন বলে জানা গেছে। গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেন, গুলশানের হলি আর্টিজান ক্যাফের ভিডিও ফুটেজ ও জঙ্গীরা কীভাবে প্রবেশ করেছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তারা গুলশানের বাইরে থেকে এসেছিল না গুলশানের ভেতরেই ছিল সে ব্যাপারেও খোঁজখবর নিচ্ছেন তারা। জঙ্গীরা হলি আর্টিজানে প্রবেশ করার পরই বিদেশীদের পৃথক করে ফেলে। পরে নারকীয় হত্যাকা- চালায়। এই নারকীয় হত্যাকা-ে বিদেশীসহ ২০ জনকে নির্মম ও নৃশংসভাবে হত্যা করে জঙ্গীরা। তবে ১৩ জিম্মিকে উদ্ধার করতে সক্ষম হন সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে কমান্ডো অভিযান পরিচালনাকারী যৌথবাহিনী। অপরদিকে শোলাকিয়া ঈদগাহে জঙ্গী হামলায় মামলা দায়ের হয়েছে। এতে আটক দু’জনসহ আসামি করা হয়েছে অজ্ঞাত কয়েকজনকে। রবিবার পাকুন্দিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ সামছুদ্দিন বাদী হয়ে কিশোরগঞ্জ সদর থানায় মামলাটি দায়ের করেন সন্ত্রাস দমন আইনে। বৃহস্পতিবার ঈদের দিন সকাল ৯টার দিকে কিশোরগঞ্জ শহরের শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের পাশে আজিমুদ্দিন হাইস্কুলের কাছে পুলিশের তল্লাশি পয়েন্টে হামলা চালায় একদল জঙ্গী। ওই সময় তাদের ছোঁড়া হাতবোমার বিস্ফোরণে নিহত হন জহিরুল ইসলাম ও আনসারুল নামে দুই পুলিশ সদস্য, গৃহবধূ ঝর্ণা রানী ভৌমিক ও এক জঙ্গী আবির রহমান। জঙ্গী হামলার সময়ে ঘটনাস্থল থেকে আটক র‌্যাবের হেফাজতে থাকা শরিফুল ইসলাম ওরফে সফিউল ইসলাম ওরফে সাইফুল ইসলামকে (২৩) মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে। মামলায় দ্বিতীয় আসামি করা হয়েছে জাহিদুল হক ওরফে তানিমকে। মামলায় আসামির তালিকা থেকে নিহত জঙ্গী আবির রহমানের নাম বাদ দেয়া হয়েছে। মামলার এজাহারে যে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে তারা কতজন তা এখনও জানে না তদন্তকারী পুলিশ ও গোয়েন্দারাও। গোয়েন্দা সূত্র মতে, শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের কাছে সন্ত্রাসী হামলায় অন্তত ৮ জন অংশ নেয় বলে পুলিশের হাতে আটক আহত সফিউল ইসলাম এক ব্যক্তি দাবি করেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হামলায় অংশ নেয়া তার নিজের বাড়ি দিনাজপুর বলে উল্লেখ করে বলেছেন, সন্ত্রাসী হামলার আগে ঘটনাস্থল রেকি করতে ৩ দিন আগে ২৭ রোজার দিন কিশোরগঞ্জে আসে তারা। কড়া নিরাপত্তায় চিকিৎসাধীন সাফিউল সুস্থ হওয়ার পর তাকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে অনেক তথ্য মিলবে। নিখোঁজের সংখ্যা ১৩৭, তথ্য মিলেছে ৭৭ জনের আর প্রোফাইল হয়েছে ১০ জনের ॥ সারাদেশের উচ্চ শিক্ষিত বিত্তবান ঘরের সন্তানসহ জঙ্গী গোষ্ঠীতে যোগদানের জন্য নিখোঁজ হয়েছেন এমন সংখ্যা কত তা জানার জন্য খোঁজখবর নেয়া শুরু করেছে পুলিশ ও গোয়েন্দারা। গত এক বছরে অন্তত ১৩৭ কিশোর নিখোঁজ হওয়ার খবর পেয়েছে পুলিশ। তবে লোকলজ্জায় অনেকেই পুলিশকে খবর না-দেয়ায় প্রকৃত নিখোঁজের সংখ্যা আরও বেশি বলেই তাদের ধারণা। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার অনেক তরুণ ও যুবক নিখোঁজ থাকার ধারণা থাকলেও অন্তত ৭৭ জনের তথ্য সংগ্রহ করেছে এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এদের মধ্যে ১০ জনের পাসপোর্ট নম্বরসহ যাবতীয় তথ্যও পেয়েছে তারা। পুলিশ, র‌্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থা নিখোঁজ তরুণ-যুবকদের খুঁজে বের করার কাজ শুরু করা হয়েছে। এদের একটা বড় অংশ উচ্চ শিক্ষিত, বিত্তশালী পরিবারের সন্তান। যেসব পরিবারের সদস্য দীর্ঘদিন ধরে নিখোঁজ আছে সেসব পরিবারকে কোন রাখঢাক না রেখে তথ্য দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে পুলিশ। পরিবারগুলোর পক্ষ থেকে সন্তান নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা গোপন রাখার প্রবণতা থাকায় পুলিশ কঠোর হচ্ছে যা লুকোচুরির আশ্রয় নিলে উল্টো পরিবারের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে এমন সতর্ক ও হুঁশিয়ারি করে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, গত তিন বছরে অন্তত ৭৭ তরুণ-যুবক নিখোঁজ হয়েছে বলে সুনির্দিষ্ট তথ্য তাদের কাছে রয়েছে। গোয়েন্দাদের আশঙ্কা, এরা পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে জঙ্গী তৎপরতায় লিপ্ত হতে পারে। তবে প্রকৃত নিখোঁজের সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশি বলেই আশঙ্কা করছে পুলিশ। এদিকে নিখোঁজদের সন্ধান পেতে এরই মধ্যে নানা তৎপরতা শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। নিখোঁজ ৭৭ জনের মধ্যে ১০ জনের পাসপোর্ট নম্বরসহ প্রোফাইল এখন প্রস্তুত রয়েছে। ওই ১০ জনের পরিবারের তরফ থেকেও মিলছে সহযোগিতা। তাদের উদ্ধার করতে বিজ্ঞাপনও দেয়া হচ্ছে। নিখোঁজ ১০ জনের প্রোফাইল ॥ পুলিশের কাছে প্রোফাইল প্রস্তুত রয়েছে এমন নিখোঁজরা হলেনÑ বাড্ডার জুনায়েদ খান (পাসপোর্ট নম্বর-এএফ ৭৪৯৩৩৭৮), তেজগাঁওয়ের বাসারুজ্জামান (পাসপোর্ট নম্বর-এএল ৭৩৮৪৯৮৭), গুলশানের আশরাফ মোহাম্মদ ইসলাম (পাসপোর্ট নম্বর-এএফ ৫২৫৮৪৯৬২৫), ধানম-ির জুবায়েদুর রহিম (পাসপোর্ট নম্বর-ই ১০৪৭৭১৯), পুরান ঢাকার ইব্রাহীম হাসান খান (পাসপোর্ট নম্বর-এএফ ৭৪৯৩৩৭৮); সিলেটের তামিম আহম্মেদ চৌধুরী (পাসপোর্ট নম্বর-এল ০৬৩৩৪৭৮), মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ ওজাকি (পাসপোর্ট নম্বর-টিকে ৪০৯৯৮৬০), জুম্মন শিকদার (পাসপোর্ট নম্বর-বিই ০৯৪৯১৭২); চাঁপাইনবাবগঞ্জের নজিবুল্লাহ আনসারী এবং লক্ষ্মীপুরের এটিএম তাজউদ্দিন (পাসপোর্ট নম্বর-এফ ০৫৮৫৫৬৮)। এসব তরুণ ও যুবক নিখোঁজ হওয়ার পরও অনেকের পরিবার থানায় জিডি করেনি। পরিবারগুলোকে আরও সচেতন হতে আহ্বান জানিয়েছে পুলিশ। একই ধরনের আহ্বান জানানো হচ্ছে তরুণ ও যুবকদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিও। ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতির হিসাব রেখে কারও দীর্ঘ অনুপস্থিতি থাকলে বাসায় যোগাযোগ করে নিখোঁজ জানা গেলে দ্রুত তা স্থানীয় থানায় অবহিত করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে এই মর্মে চিঠি দেয়া হচ্ছে বলে ঘোষণা দিয়েছেন খোদ শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। কে কী বলেছেন নিখোঁজদের বিষয়ে ॥ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল অভিভাকদের কাছে আবেদন করেছেন, ছেলে নিখোঁজ থাকলে পুলিশকে জানান। পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) একেএম শহীদুল হক এরই মধ্যে অভিভাবকদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘পরিবারের কোন সদস্য নিখোঁজ থাকলে সঙ্গে সঙ্গে আমাদের জানান। সমাজের প্রত্যেক মা-বাবার উচিত সন্তানরা কোথায় যায়, কী করে তা সার্বক্ষণিক নজরদারি করা। র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদের মতে, নিখোঁজ যুবকদের খুঁজে বের করার জন্য সংশ্লিষ্ট পরিবারের পক্ষ থেকেও সহায়তা করতে হবে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া পরিদর্শনে এসে নিখোঁজদের পরিবারের সহযোগিতা প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেছেন। পুরস্কৃত করা হবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ॥ গুলশান ও শোলাকিয়ায় জঙ্গীগোষ্ঠীর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনার পর বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করছে সরকার। এর মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সময়মতো সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গী দমনে পারদর্শিতা দেখালে তাদের পুরস্কৃত করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। রবিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমুর সভাপতিত্বে বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয় বলে জানা গেছে। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে জানানো হয়েছে। পুলিশ বাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোকে অত্যাধুনিক অস্ত্র ও সরঞ্জাম দিয়ে সাজানো হবে বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমির হোসেন আমু বলেছেন, ৪৫ চাঞ্চল্যকর মামলার মধ্যে গুলশানে ইতালীয় নাগরিক তাবেলা এবং রংপুরে জাপানী নাগরিক হোশি কুনিও হত্যাসহ ১৫ মামলার চার্জশীট হয়েছে। বকিগুলোর তদন্ত চলছে। দেশের সব মানুষকে সঙ্গে নিয়ে জঙ্গীবাদ দমন করতে চাই। এজন্য দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে একটি সামাজিক বিপ্লব গড়ে তোলা হবে। ঈদের ছুটিতে দুটি ঘটনা ঘটেছে। আরও একটি ঘটনার আশঙ্কা ছিল। এ কারণে আজকের এ বৈঠক। সেই শিক্ষক হাসনাত ও কানাডা প্রবাসী তাহমিদ ॥ গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তরাঁয় জঙ্গী হামলার ঘটনায় আটক নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক আবুল হাসনাত রেজাউল করিম ও কানাডা প্রবাসী তাহমিদ হাসিব খানের অবস্থান নিয়ে রহস্য সৃষ্টি হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান বলেছেন, যাদের উদ্ধার করা হয়েছে তাদের প্রত্যেককেই ছেড়ে দেয়া হয়েছে, কেউ এখন পুলিশের হেফাজতে নেই। শিক্ষক আবুল হাসনাত রেজাউল করিম ও কানাডা প্রবাসী তাহমিদ হাসিব খানও তাদের হেফাজতে নেই বলে জানা গেছে। অন্যদিকে আবুল হাসনাত ও তাহমিদ হাসিব খানের পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা দু’জন স্ব স্ব পরিবারের কাছে ফেরেনি। ৮ দিন পরও তাদের হদিস নেই। হলি আর্টিজানে কমান্ডো হামলার একদিন পর অর্থাৎ গত ৩ জুলাই সেনাবাহিনীর হেফাজত থেকে উদ্ধার পাওয়া ব্যক্তিদের মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এর পর থেকে উদ্ধারপ্রাপ্তদের ৩৬, মিন্টো রোডের গোয়েন্দা দফতরে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ দু’জনের অবস্থান নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনার পর জিম্মিদশার একটি ভিডিওচিত্র সামাজিক সাইটে প্রকাশ পেলে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক হাসনাতের বিরুদ্ধে জঙ্গী হামলায় সম্পৃক্ততার অভিযোগ ওঠে। প্রসঙ্গত, গত ১ জুলাই রাতে গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তরাঁয় দেশী-বিদেশী অতিথিদের জিম্মি করে জঙ্গীগোষ্ঠীর সন্ত্রাসীরা। রাতভর রুদ্ধশ্বাস অভিযানের পর ২ জুলাই সকালে কমান্ডো অভিযান চলে। এতে দেশী-বিদেশী ২০ জিম্মি নিহত হন। হামলাকারী ৬ জন নিহত হন। নিহত হন দুই পুলিশও। এ হামলার রেশ কাটতে না কাটতেই শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতের কাছে টহলরত পুলিশের ওপর হামলা হয়। বিস্ফোরণ, গুলি ও চাপাতির হামলায় নিহত হয় দুই পুলিশসহ চারজন। গুলশান ও শোলাকিয়ার হামলার ঘটনার পর পুলিশের আইজি একেএম শহীদুল হক বলেছেন, হলি আর্টিজানে হামলার সঙ্গে যারা জড়িত ছিল তারাই শোলাকিয়ায় হামলা চালিয়েছে। গুলশানের হামলকারীদের পরিচয় আগে থেকেই পুলিশের কাছে ছিল, শোলাকিয়ার হামলায় নিহত হামলাকারী ও আটক ব্যক্তিরাও জেএমবির তালিকাভুক্ত। নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন জেএমবিই এ দুই হামলা চালিয়েছে।
×