ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

দুর্নীতি ও অনিয়মে লোকসান দিচ্ছে রাজশাহী জুট মিল

প্রকাশিত: ০৪:০১, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

দুর্নীতি ও অনিয়মে লোকসান দিচ্ছে রাজশাহী জুট মিল

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ যন্ত্রপাতি নষ্ট, উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধিসহ নানা কারণে রাজশাহী জুট মিলে প্রতি মাসে লোকসান হচ্ছে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ লাখ টাকা। অব্যাহত লোকসানের কারণে রাষ্ট্রায়ত্ত এই কারখানায় দুই মাসের বেতন ভাতা বকেয়া পড়ায় বাড়ছে শ্রমিক অসন্তোষ। দ্রুত শ্রমিকদের বকেয়া টাকা পরিশোধে কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়া হলে আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মিলটির সিবিএ নেতারা। অবশ্য কর্তৃপক্ষ বলছে, মিলটি লাভজনক পর্যায়ে আনতে বেশ কিছু পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। ১৯৬৯ সালে রাজশাহী নগরীর কাঁটাখালি এলাকায় ৪৯ দশমিক ০২ একর এলাকাজুড়ে স্থাপন করা হয় উত্তরাঞ্চলের একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল কারখানা। কর্তৃপক্ষের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ২শ’ ষাট লুমের এই মিলটিতে প্রতিদিন মোটা ও চিকন বস্তা উৎপাদন হয় ২১ দশমিক ৭৮ মেট্রিক টন। প্রতি মেট্রিক টন মোটা বস্তা উৎপাদনে ১ লাখ এগার হাজার টাকা খরচ হলেও ২৭ হাজার টাকা লোকসান দিয়ে তা বিক্রি হয় ৮৪ হাজার টাকায়, আর চিকন বস্তার ক্ষেত্রে প্রতি মেট্রিক টনে ১ লাখ ৩৭ হাজার খরচ হলেও ১৮ হাজার টাকা লোকসান দিয়ে বিক্রি হয় ১ লাখ ১৯ হাজার টাকায়। সে হিসাবে প্রতিদিন জুট মিলকে লোকসান গুনতে হচ্ছে প্রায় আড়াই লাখ টাকা। মাস শেষে যা গিয়ে দাঁড়ায় ৭০-৮০ লাখে। শ্রমিকদের অভিযোগ, অধিকাংশ যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি পর্যাপ্ত কাঁচামালও মজুদ নেই কারখানাটিতে। ফলে প্রায় দেড় হাজার শ্রমিকের দু’মাসের বেতন-ভাতা বকেয়া পড়েছে। কয়েকজন শ্রমিক বলেন, উৎপাদন কম সুতা ভাল না। মেডিসিন ভাল নাই। মেশিন চলে না । মেশিনে পার্টস ভাল নাই। দুই মাসের বেতন নাই। মিলের ভিতরে দুর্নীতি চলছে। জুট মিলের নাম শুনলে কেউ বাকি দেয় না। এ অবস্থার জন্য মিল কর্তৃপক্ষকে দায়ী করে সিবিএ নেতারা বলছেন, শীঘ্রই শ্রমিকদের বকেয়া টাকা পরিশোধে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ না করলে কঠোর আন্দোলনে নামবেন তারা। কয়েকজন সিবিএ নেতা বলেন, মিল কর্তৃপক্ষ যোগাযোগ করেছে ওপর মহলে তবে কোন টাকা পয়সা দিচ্ছে না। যারা স্টাফ তাদের বেতন কম হয় না। কিন্তু সাধারণ শ্রমিক কেন বেতন পায় না প্রশ্ন তাদের। তবে উৎপাদন খরচ কমাতে আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন, দক্ষ শ্রমিকদের কাজে লাগানো ছাড়াও পাটজাত পণ্যে ভিন্নতা আনতে পারলে এ চিত্র পাল্টে যাবে বলে আশাবাদ প্রকল্প পরিচালকের। তিনি বলেন, ৫০-৬০ দশকের মেশিনগুলো পরিবর্তন করা দরকার। এছাড়া সংস্কার করলেও মেশিনগুলোর দক্ষতা বাড়বে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত জুট মিলে লোকসানের পরিমাণ এক হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। বর্তমানে মিলের গুদামে আড়াইশও টন উৎপাদিত মোটা ও চিকন পাটের বস্তা রয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় তিন কোটি টাকা বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
×