ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ভাষা আন্দোলনে ভূমিকা

প্রকাশিত: ০৪:৫১, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

ভাষা আন্দোলনে ভূমিকা

নামটি ইংরেজী। লিটল ম্যাগাজিন, সংক্ষেপে লিটল ম্যাগ। বাংলায় ভাবার্থ করলে দাঁড়ায় ছোট কাগজ। প্রশ্ন চলে আসে- ছোট কাগজ তা আবার কি! বাংলা ভাষা শেখার জন্য আগে শিশু শিক্ষা বা বর্ণমালা পাঠ করতে হয়। তারপর লেখা শুরু। ছোট কাগজের বৈশিষ্ট্য অনেকটা তেমনই। সাহিত্যের সকল অঙ্গনের হাতে খড়ি ছোট কাগজ। দেশে ও বিদেশে বরেণ্য অনেক সাহিত্যিকের সূচনা স্থানীয়ভাবে অনিয়মিত প্রকাশিত লিটল ম্যাগাজিনে। গত শতকের প্রথম দশকেই উপমহাদেশে বাংলা ভাষায় ছোট কাগজের যাত্রা শুরু। তবে চর্যাপদ ছোট কাগজ আরও অনেক আগের। গত শতকের পঞ্চাশের দশকেই ঢাকার সেদিনের কয়েক তরুণ লিটল ম্যাগ প্রকাশের উদ্যোগ নিয়ে ভাষা আন্দোলনের প্রতিবাদের নতুন মাত্রা যোগ করে। ওই সময় ঢাকার কয়েকটি দৈনিক পত্রিকার ভূমিকা ভাষা আন্দোলনের অনুকূলে ছিল না। তখন শক্তিশালী ভূমিকা নেয় লিটল ম্যাগ। তারই ধারাবাহিকতায় ষাটের দশকের শুরুতে বগুড়ায় সেদিনের কয়েক তরুণ উদ্যোগ নেয় ছোট কাগজ প্রকাশের। যাদের অনেকেই আজ আর নেই। তার কিছুদিন পর লিটল ম্যাগের স্রোতধারার ঢেউ নেমে আসে। ১৯৬৭ সালের জানুয়ারি মাসে ফের শুরু হয় ছোট কাগজের জোয়ার। ওই বছর মহাদেব সাহা, কাজী রব ও ফারুক সিদ্দিকী ‘বিপ্রতীক’ নামে অনিয়মিত কবিতা পত্রিকা প্রকাশ করেন। যা ছাপা হয় বগুড়া লিথো প্রেসে। একই বছর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ও মনোজ দাশগুপ্ত যৌথভাবে সম্পাদনা করেন পদধ্বনি নামে কবিতাপত্র। দীর্ঘ সময় ধরে অনিয়মিতভাবে লিটল ম্যাগ পদধ্বনি প্রকাশিত হয়। ১৯৬৭ সালের অক্টোবর মাসে নূর মোহাম্মদ তালুকদার ও নুরুল হকের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় ‘স্বরক্ষেপ’ নামের ছোট কাগজ। শাহনূর খান ও আরেফ উল ইসলামের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় ‘অবেলা’ ১৯৬৮ সালের আগস্ট মাসে। ওই বছর অক্টোবর মাসে প্রকাশিত হয় স. ম. হেদায়েতুল্লাহ সাইফুল ইসলাম ও রেজাউল কবির চৌধুরীর সম্পাদনায় ‘অপরাহ্ণ’ নামের লিটল ম্যাগ। এই কাগজ ছাপা হয় শাহী প্রেসে। ১৯৬৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মুহম্মদ শহীদুল্লাহর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় ‘লাল সূর্য’। তারপর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ লেখকদের নিয়ে কয়েকটি লিটল ম্যাগাজিন প্রকাশ করেন। যার মধ্যে অন্যতম বিভিন্ন কবিদের নিয়ে ‘কবি কথা’। তিনটি সংখ্যা প্রকাশের পর জীবনানন্দ সংখ্যা, কবি আবুল হাসান সংখ্যা, ফারুক সিদ্দিকী সংখ্যা প্রকাশ করেন। ওই সময়ে সাহিত্যিকদের মিলন বন্ধনের জন্য গড়ে তোলেন ‘সাহিত্য জিজ্ঞাসা’ নামের সাহিত্য সংগঠন। যা আজও তিনি টিকিয়ে রেখেছেন। এই সংগঠনের মুখপত্র হিসেবে আজও অনিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে সাহিত্য প্রাঙ্গন নামের ছোট কাগজ। এর দুটি সংখ্যা উৎসর্গ করা হযেছে প্রয়াত কাজী রব ও মনোজ দাশগুপ্তকে। প্রায় একই সময়ে বগুড়ার সাহিত্যাঙ্গনে অবদান রাখেন বজলুল করিম বাহার। তার কবিতা গল্প উপন্যাস প্রবন্ধ পাঠক সমাদৃত হয়েছে। আজও তিনি সাহিত্যের প্রতিটি ধারায় বিচরণ করছেন। ষাটের দশকে বগুড়ার লেখকদের সঙ্গে ঢাকার প্রথিতযশা সাহিত্যিকগণের সংযোগ ছিল। আব্দুল মান্নান সৈয়দ, জ্যোতি প্রকাশ দত্ত, মহাদেব সাহা, কবি আতাউর রহমান, শেখ আতাউর রহমান, আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, কবি নির্মলেন্দু গুণ প্রমুখের সঙ্গে লিটল ম্যাগ দিয়েই সাহিত্যের সেতুবন্ধন রচিত হয়। আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের বাড়ি বগুড়া। এই ক্ষেত্রে তিনি বড় ভূমিকা পালন করেন। ষাটের দশক থেকে সত্তরের দশকের অনেকটা সময় পর্যন্ত বগুড়ায় সাতমাথার কাছে বেণীপুর বুক হাউস সাহিত্যিকদের পদচারণায় মুখরিত ছিল। অনেক লিটল ম্যাগের উৎস ছিল বেণীপুর বুক হাউস। তার স্বত্বাধিকারী আবুল হোসেন আগা (আগা ভাই নামে পরিচিত) ছিলেন নিবেদিত সাহিত্যসেবী। বেণীপুর বুক হাউস ও আগা ভাই না থাকেল বগুড়ার সাহিত্য অঙ্গন এত সমৃদ্ধ হতো না, এমনটিই মনে করেন প্রবীণ সাহিত্যিকগণ। Ñসমুদ্র হক, বগুড়া থেকে
×