অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বিদ্যুতের আলোর আশা স্বপ্নেও আসেনি কখনও। ক’দিন আগেও সন্ধ্যার পর ঘণ্টাখানেক কুপি বা হারিকেন জ্বালানো হতো। এরপর অন্ধকারে থাকতে হতো সারা রাত। প্রয়োজনে একটু জ্বালানো হলেও আবার কুপি নিভিয়ে রাখা হতো। এটি ছিল নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলার উমার ইউনিয়নের উমরপুর হঠাৎপাড়া প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের প্রান্তিক মানুষের জীবনচিত্র।
কিন্তু আজ সে সময়ের পরিবর্তন হয়েছে। পরিবর্তন হয়েছে সেসব এলাকার মানুষের চিন্তা চেতনার। নবায়নযোগ্য জ্বালানির মাধ্যমে বিদ্যুত পৌঁছানো সম্ভব না হলেও সোলারের মাধ্যমে ঘরে ঘরে পৌঁছানো হয়েছে বিদ্যুতের আলো। সেখানে আজ সরকারী খরচে বিদ্যুত পেয়ে তারা আনন্দিত ও উচ্ছ্বসিত।
জীবনের এক অপরিহার্য অনুষঙ্গ বিদ্যুত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিশন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রতিটি বাড়িতে বিদ্যুত পৌঁছানোর অঙ্গীকার নিয়ে বিকল্প হিসেবে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে সোলার প্যানেল স্থাপনের। আর এটির মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রতিটি ঘরে বিদ্যুতের আলো পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে। ফলে বিদ্যুতের সুবিধা ভোগ করছেন প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রান্তিক মানুষ।
প্রত্যন্ত এ উমরপুর হঠাৎপাড়া গ্রামে প্রায় ১২০টি পরিবারের বসবাস। গ্রামটি ছিল দীর্ঘদিন বিদ্যুতবিহীন। গত দুই মাস আগ থেকে সোলার প্যানেলের মাধ্যমে সুইচ টিপলেই বিদ্যুতের আলো পাচ্ছেন তারা। তাদের আর কেরোসিন কিনে কুপি বা হারিকেন জ্বালানের প্রয়োজন হচ্ছে না। ২৪ ঘণ্টায় সোলারের আলো ব্যবহার করা হচ্ছে। সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা পড়াশুনা করতে পারছে। সেইসঙ্গে মোবাইলে চার্জ ও ১২ ভোল্টের মর্টারের মাধ্যমে ফ্যানের বাতাসও পাওয়া যাচ্ছে। বিদ্যুতের কল্যাণে আজ বদলে গেছে দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক দৃশ্যপট এবং শিক্ষা ব্যবস্থা। বদলে গেছে জীবনযাত্রা।
নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী জাকিয়া সুলতানা জানায়, আগে হারিকেনের আলোতে রাত জেগে পড়াশুনা করতে কষ্ট হতো। এছাড়া গরমের সময় হতো আরও সমস্যা। হারিকেনের তাপ ও মিটমিটে লাল আলোয় চোখের ওপর চাপ পড়ত। মাথাও ব্যথা করত। এখন সোলার আলোতে রাত জেগে পড়তে পারছি। ভালও লাগছে।
আদিবাসী জাচিনতা হেম বলেন, আগে প্রতিমাসে প্রায় ২০০-২৫০ টাকার মতো কেরোসিন কিনতে খরচ হতো। তারপরও সারারাত অন্ধকারে থাকতে হতো। খরচ বাঁচাতে ছেলেমেয়েদের দিনের আলোতেই পড়তে হতো। এখন সম্পূর্ণ বাড়িই আলোময় হয়ে থাকছে।
ধামইরহাট উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ইসরাফিল হোসেন বলেন, এ উপজেলায় এ বছর ১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা সোলার স্থাপনে বরাদ্দ ছিল। এখানে বিদ্যুতবিহীন ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ ৬৯৭টি দরিদ্র পরিবারে সোলার প্যানেলের মাধ্যমে বিদ্যুত সংযোগ প্রদান করা হয়েছে। ফলে দারিদ্র্যের হার কমতে শুরু করেছে। সেইসঙ্গে শিক্ষার প্রসারও ঘটছে।
নওগাঁ জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা এ কে এম মান্নান বলেন, বাংলাদেশের কোথাও অন্ধকার থাকবে না। সব স্থানে বিদ্যুতের আলো পৌঁছানো হবে। গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিদ্যুত পৌঁছানো হবে। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। তবে সোলারের সুফল এবং কুফল আছে। সুফলটা হচ্ছে ওয়ারেন্টি আছে।
তিনি আরও বলেন, বাজারের তুলনায় ‘ইডকল’ কর্তৃক অনুমোদিত সোলার প্যানেলের খরচ কিছুটা বেশি ধরা হয়েছে। সরকার আগামীতে এ প্রকল্পের বিষয়টিকে মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নেয়ার অনুরোধ করেছেন এ কর্মকর্তা। এতে দাম কিছুটা হলেও কমের মধ্যে আসবে।
২০১৬-১৭ অর্থবছরে জেলায় টিআর ও কাবিটা প্রকল্পের আওতায় প্রায় ২০ কোটি ৫ লাখ ১৬ হাজার টাকা ব্যয়ে সোলার প্যানেল ও রাস্তায় ল্যাম্প পোস্টের কাজ করা হয়।