ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস

প্রকাশিত: ০২:৩২, ২০ অক্টোবর ২০১৭

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ॥ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভূক্ত ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার সকালে ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে ‘ঘ’ ইউনিটের অধীনে প্রথম বর্ষ (স্নাতক) সম্মান শেণির ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষার আগের রাতেই ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা। পরীক্ষা শেষে অনুষ্ঠিতব্য প্রশ্নের সঙ্গে আগের রাতে পাওয়া প্রশ্নপত্রের হবহু মিল পাওয়া গেছে। বিষয়টি নিয়ে রাতেই অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অভিযোগ করেন যে, লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। রাতে পাওয়া প্রশ্নের কপি ও আজকের খুদে বার্তার কপি উভয়ই প্রতিবেদকের কাছে আছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঝড় তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বিভিন্ন মহল। হতাশা প্রকাশ করে পুনরায় ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার দাবীও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তাৎক্ষনিক দেশের বিভিন্ন অনলাইন গণমাধ্যমে একাধিক রিপোর্ট প্রকাশিত হলেও প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি মানতে রাজী নয় বিশবিদ্যালয় প্রশাসন। এখন পর্যন্ত নীরব রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তারা বলছেন, এমন কোনও তথ্য আমাদের কাছে কাছে নেই। বিষয়টি নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এ বছর ঘ ইউনিটে ১ হাজার ৬১০টি আসনের বিপরীতে ৯৮ হাজার ৫৪ জন শিক্ষার্থী আবেদন করে। এই ইউনিটে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য ১ হাজার ১৪৭টি, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের জন্য ৪১০টি ও মানবিক শাখার জন্য ৫৩টি আসন রয়েছে। শুক্রবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ৫৩ ও ক্যাম্পাসের বাইরে ৩৩ কেন্দ্রে এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষার আগে রাত তিনটার দিকে ইংরেজি অংশের ২৪ টি প্রশ্ন ই-মেইলের মাধ্যমে পাঠানো হয়। এছাড়াও ফাঁস হওয়া প্রশ্নের উত্তর পরীক্ষা শুরুর ঘন্টাখানেক আগে শিক্ষার্থীর মোবাইলে ক্ষুদেবার্তা হিসেবে পাঠানো হয়। পরীক্ষার আগে সরেজমিনে গিয়ে মোবাইলে শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের উত্তর পড়তে দেখা গেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক এম আমজাদ আলী বলেন, প্রশ্নপত্র প্রণয়ন থেকে কেন্দ্রে বিতরণ পর্যন্ত এই কাজটি অত্যন্ত গোপনীয়ভাবে করা হয়। যেটা ফাঁস হওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার প্রধান সমন্বয়কারী ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সাদেকা হালিম জনকণ্ঠকে বলেন, পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের কেউ আমাদের কাছে কোন অভিযোগ করেনি। সাংবাদিকরা প্রশ্ন পেলে আমাদের সকালে কেন বলেনি? তারা কেন দুপুর ২টা পর্যন্ত অপেক্ষা করে রিপোর্ট করেছে? বিষয়টি নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। তাই বিষয়টি তদন্ত হওয়া উচিৎ। এদিকে, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সহকারী রেজিস্ট্রার মুনির হোসেনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন চাকরি ও ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে রয়েছে। এ নিয়ে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় একাধিক রিপোর্টও প্রকাশিত হয়েছে। তাঁকে অনুষদ থেকে বদলির সুপারিশ করেছিল সাবেক ডীন অধ্যাপক ড. এ জে এম শফিউল আলম ভূইয়া। কিন্তু অধ্যাপক ড. এ জে এম শফিউল আলম ভূইয়ার সেই অভিযোগকে আমলে নেয়া হয়নি। বরং অভিযুক্ত না সড়িয়ে, অভিযোগকারীকেই ডীনের দায়িত্ব থেকে সড়িয়ে দেয়া হয়। ওই সহকারী রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে গত বছরে ঢাবির 'ঘ' ইউনিট, চলতি বছরের জনতা ব্যাংকসহ কয়েকটি সরকারি চাকরির পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও ক্যাম্পাসের বাইরে দশটি কেন্দ্র থেকে এটিএম কার্ডের মতো দেখতে ডিভাইসের মাধ্যমে জালিয়াতি করায় ১৫ জনকে আটক করা হয়েছে যার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই জন শিক্ষার্থী রয়েছে। আটককৃতদের মধ্যে ১৩ জনকে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধমে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড দেওয়া হয়। ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদ এলাহী এ সাজা দেন। বাকী দুইজনের বিরুদ্ধে সিআইডির সংঘবদ্ধ অপরাধ তদন্ত দল বাদী হয়ে মামলা করবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক এম আমজাদ আলী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। আটক ১৫ জনের মধ্যে পরীক্ষার আগের রাতে পরীক্ষার্থী সংগ্রহ ও ডিভাইস আদান প্রদানের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ ও অমর একুশে হল থেকে দুই জনকে আটক করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টোরিয়াল টিম। তারা হলেন, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রানা ও ফলিত রসায়ন বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল মামুন। বাকীরা হলেন, নূর মোহাম্মদ মাহবুব, ফরহাদুল আলম রাফি, ইশরাক হোসেন রাফী, আব্দুল্লাহ আল মুকিম, রিশাদ কবির ,আছাদুজ্জামান মিনারুল, ইসতিয়াক আহমেদ, জয় কুমার সাহা, রেজওয়ানা শেখ শোভা, মাশুকা নাসরিন, তারিকুল ইসলাম, নাসিরুল হক নাহিদ ও মিরাজ আহমেদ। এদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস, ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট, ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল এন্ড কলেজ, শেখ বোরহান উদ্দীন কলেজ, সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজ, আনোয়ারা বেগম মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয় ও টিচার্স ট্রেনিং কলেজ কেন্দ্র থেকে আটক করা হয়। এম আমজাদ আলী বলেন, পরীক্ষা চলাকালে কয়েকজন পরীক্ষার্থী জালিয়াতির চেষ্টা করেছে। তাদেরকে আটক করা হয়েছে। তাদেরকে ভ্রাম্যমান আদালত এক মাসের কারাদন্ড দিয়েছেন। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইজনের শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে সিআইডি সংঘবদ্ধ তদন্ত দল মামলা করবে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কার করা হবে। আটকৃতদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা ৩-৫ লক্ষ টাকার বিনিময়ে ঢাকায় অবস্থানরত এলাকার বড় ভাইদের সহযোগিতায় জালিয়াত চক্রের সাথে চুক্তি করে। জালিয়াতচক্র প্রথমেই তাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করেনি। প্রথমে তাদের রেজিস্ট্রেশন ও মার্কশিট জমা নিয়েছে। পরীক্ষার পরে তাদের টাকা পরিশোধ করার কথা রয়েছে। উল্লেখ্য, ২০ অক্টোবর ‘ঢাবি ভর্তি পরীক্ষায় সক্রিয় জালিয়াত চক্র, সতর্ক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন’ এই শিরোনামে একটি রিপোর্টও জনকণ্ঠে প্রকাশিত হয়।
×