ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

নাসা এবং জাতিসংঘে বাংলাদেশের জিমি মজুমদার

প্রকাশিত: ০৭:০৪, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

নাসা এবং জাতিসংঘে বাংলাদেশের জিমি মজুমদার

ডিপ্রজন্ম : বর্তমানে যে কাজগুলো করছেন? জিমি মজুমদার : উন্নত দেশগুলো যখন তথ্যপ্রযুক্তির বিপ্লবে মেতে উঠছে তখন বাংলাদেশেকে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। আর এই উদ্যোগে তরুণরা সব থেকে বড় ভূমিকা পালন করছে এবং সেই ধারাবাহিকতায় তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলাদেশের নাম লিখিয়েছে তারা বিশ্বদরবারে বেশ কয়েকবার। মঙ্গল গ্রহের অভিযান থেকে শুরু করে মহাকাশের স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ এবং আন্তর্জাতিক রোবটিক্স প্রতিযোগিতায় লাল সবুজের বিজয়রের নিশান রেখেছে তারা। রোবটিক্স এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল অটোমেশন নিয়ে রোবট নির্ভর ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার জন্য কাজ করছি, আমি শুধু রোবটিক্স আর ইন্ডাস্ট্রিয়াল অটোমেশন নিয়েই কাজ করছি না বরং বাংলাদেশর তরুণদের নিয়ে তরুণ নেতৃত্ব একত্র করে বাংলাদেশকে সারা বিশ্বের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করছি। সম্প্রতি নাসার গবেষকের সহকারী হিসাবে যোগ দিয়ে বাংলাদেশে থেকে নাসার কাছে প্রযুক্তিতে দেশের প্রতিনিধিত্ব করছি, এছাড়া জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য মাত্রা বাস্তবায়নের জন্য কাজ করছেন এসডিজি ইয়াং লিডার হিসাবে। পরিচালনা করছি দক্ষিণ এশিয়ার চারটি দেশকে ভিশন ২০২০ সাউথ এশিয়ার অধীনে এবং বিশ্বের কাছে তুলে ধরছি প্রিয় বাংলাদেশকে। ডিপ্রজন্ম : আপনার নিজের পরিচয়টা? জিমি মজুমদার : বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের বাগেরহাট জেলার মংলা উপজেলায় এক প্রত্যন্ত গ্রাম বুড়বুড়িয়া। গ্রামে নেই ইলেকট্রিসিটি, নেই ভাল যোগাযোগব্যবস্থা। সেখানকার কাদামাটি আর লবণপানির সঙ্গে নাড়ির সম্পর্ক শৈশবজুড়ে। বাবা প্রয়াত জুয়েল মজুমদার ছিলেন বুড়বুড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। মা লাভলী মজুমদার ও ছোট ভাই ব্যাবেজ মজুমদারকে নিয়েই তার পরিবার। স্কুল-কলেজের গ-ি খুলনাতে পেরিয়ে যখন ভার্সিটিতে ভর্তি হব তখন থেকেই স্বপ্নের মোড় ঘুরতে শুরু করে। ডিপ্রজন্ম : মেকাটনিক্স নিয়ে পড়ার খোঁজ কিভাবে পেলেন? এটা তো বৈশ্বিক বিষয়- জিমি মজুমদার : এখানে মজার ঘটনা আছে। প্রথমে সুযোগ পেলাম কুষ্টিয়া ইসলামী ইউনিভার্সিটিতে সিএসই তে, পরে এই পাবলিক বিদ্যালয়ের ভর্তি বাতিল করি শুধু রোবটিক্স নিয়ে পড়াশোনার উদ্দেশে। অনেক খোঁজাখুঁজির পর ভর্তি হন ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের মেকাট্রনিক্স বিভাগে। মেকানিক্যাল, ইলেকট্রিক্যাল, ইলেকট্রনিক্স ও কম্পিউটার প্রকৌশলের সমন্বয় এই সাবজেক্টটি ২০০৬ সালে ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে চালু হয়। পরবর্তীতে ২০১২ সালে রাজশাহী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এই বিভাগটি চালু হয়েছে। ‘মেকানিক্যাল, ইলেকট্রিক্যাল, ইলেকট্রনিক্স ও কম্পিউটার প্রকৌশলের সমন্বয় ছাড়া রোবট বানানো অসম্ভব। তাই আমি মনে করি মেকাট্রনিক্স শুধু প্রকৌশল শাখার মাতৃরূপ নয়, রোবট বানানোর ফলিত রূপ। তাই রোবট ছাড়া আমি এখন আর কিছু ভাবতে পারি না। ’বর্তমানে আমি ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের মেকাট্রনিক্স বিভাগে চতুর্থ বর্ষের শেষ সেমিস্টারে অধ্যয়নরত। ডিপ্রজন্ম : কর্মজীবন অন্যদের আগে শুরু“করা জিমির সবকিছু জানতে চাচ্ছিলাম। মানে যেসব কাজ করছেন? জিমি মজুমদার : পড়াশোনার পাশাপাশি বর্তমানে নাসার গবেষকের সহকারী হিসাবে দায়িত্বে আছি। প্রযুক্তিতে বাংলাদেশকে এগিয়ে নেয়ার জন্য গড়ে তুলেছি ইধহমষধফবংয অফাধহপব জড়নড়ঃরপং জবংবধৎপয ঈবহঃবৎ এবং তরুণদের জন্য আন্তর্জাতিক প্রকল্প ঠওঝওঙঘ ২০২০ ঝড়ঁঃয অংরধ। শুধু তাই নয় ওঊঊঊ ঈড়ষষধনৎধঃবপ, ঈড়ষষধনড়ৎরুস, ওহঃবৎহধঃরড়হধষ অঁঃড়সধঃরড়হ ধহফ ৎড়নড়ঃরপং ংড়পরবঃু, ইধহমষধফবংয ঝপরবহপব ঝড়পরবঃু সহ বেশকিছু প্রতিষ্ঠান এবং প্রকল্পের নেতৃত্ব ও গবেষণামূলক কাজের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছি। ডিপ্রজন্ম : এসডিজি এবং ভিশন ২০২০ সাউথ এশিয়ার সঙ্গে কাজের বিষয়টা জানতে চাই- জিমি মজুমদার : বিশ্বের এক বিলিয়ন তরুণ কাজ করে যাচ্ছে ২০৩০ সালের মধ্যে একটি স্বপ্নের পৃথিবী গড়ার জন্য যে পৃথিবীতে থাকবে না কোন দরিদ্রতা, ক্ষুদার অভাব, পুষ্টিহীনতার অভাব, গুণগত শিক্ষার অভাব, মৌলিক চাহিদার অভাব, থাকবে না লিঙ্গ বৈষম্যভেদ, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ এবং অর্থনৈতিক মন্দা। এমন সব মিলিয়ে জাতিসংঘের ১৭টি লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করছে এই তরুণরা যাদের বয়স মাত্র ১০ বছর থেকে ২৪ বছর। জাতিসংঘের এর এই প্রকল্পকে বাস্তবায়নের জন্য ১৭০টি দেশে কাজ করছে ঝউএং নিয়ে যেখানে বাংলাদেশে ও অনেক তরুণ নিরলস কাজ করে যাচ্ছে তাদের নিজস্ব উদ্যোগে অথবা সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় এই প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে । তাই এবার বাংলাদেশ থেকে ১০ থেকে ২৫ বছরের তরুণদের নিয়ে ঝড়ঁঃয অংরধহ ণড়ঁঃয খবধফবৎংযরঢ় এর মাধ্যমে সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার জন্য একযোগে কাজ করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে এই ভিশন ২০২০ সাউথ এশিয়া প্রকল্প । ইউরোপিয়ান দাতাসংস্থা, সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠান এবং এশিয়ার শীর্ষ গবেষক, প্রকৌশলী , ব্যবসায়ী, তরুণ উদ্যোক্তাদের সমন্বয় এই কার্যক্রমে ‘টিম বাংলাদেশ’ ২০২০ সালকে তাদের প্রকল্পের প্রথম লক্ষ্য যাত্রা হিসাবে ঘোষণা করে কাজ শুরু করে ২০১৭ সলের জুন মাসে। যাত্রা শুরু প্রথমপর্যায়ে তারা ৩ মাসে তারা ৩০০০ তরুণ নিয়ে ৫টি জাতীয় সেমিনার, ১০টি ক্যাম্প এবং ২৬টি দেশের সঙ্গে একযোগে আন্তর্জাতিক সম্মেলন করেন। এই বিশাল উদ্যোগের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান পরিচালক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছি। এ সম্পর্কে আরেকটু বলি জাতিসংঘের ১৭টি লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এই প্রকল্পকে নিজস্ব উদ্যোগে বাস্তবায়ন করার কার্যক্রম শুরু করেছি আমরা। তাই সুশিক্ষা, সুস্বাস্থ্য, প্রযুক্তি, নারী সমতা এবং তরুণদের ক্যারিয়ার ও কর্মসংস্থানের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাস্তবায়ন এই ৫টি লক্ষ্যে নিজ উদ্যোগে বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী ও আন্তর্জাতিক সংস্থার মাধ্যমে ২০২০ সালকে ভিশনের প্রথম মিশন হিসাবে ঘোষণা করে কাজ করে যাচ্ছি আমরা। আমাদের পরিকল্পনা দক্ষিণ এশিয়ার তরুণ নেতৃত্ব গড়ে তোলা এ জন্য প্রতি বছর ৫ হাজার তরুণকে দক্ষ নেতৃত্বের জন্য প্রশিক্ষিত করব আমরা।
×