ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বেড়িয়ে আসুন চায়ের দেশ মৌলভীবাজার

প্রকাশিত: ০৭:০৩, ৯ মার্চ ২০১৮

বেড়িয়ে আসুন চায়ের দেশ মৌলভীবাজার

ঋতু বৈচিত্র্যে এখন বসন্ত। চারদিকে নতুন পাতার ছড়াছড়ি। প্রকৃতির এক অপরূপ দৃশ্য যেন মন কাড়ে ভ্রমণপ্রিয়সীদের। এ সময়টাতে ভ্রমণে বের হলে প্রকৃতির এক অপরূপ দৃশ্য অবলোকন করা যায়। আর সে ভ্রমণের স্থানটি যদি হয় চায়ের স্বর্গরাজ্যে তা হলে তো কথাই নেই। প্রিয় পাঠক আজ আমরা আপনাদের সিলেট বিভাগের একটি দর্শনীয় জেলা মৌলভীবাজার জেলার গল্প শোনাব। যে জেলায় রয়েছে ৯২টি চায়ের বাগান। যে চা বাংলাদেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও এখন রফতানি হচ্ছে। দেশের কৃষ্টি, সংস্কৃতি, সভ্যতা সবই মিশে আছে ওই জেলাটির মধ্যে। ঐতিহ্যম-িত জেলার তকমা ও পেয়েছে জেলাটি। পর্যটন শিল্পের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এক জেলা মৌলভীবাজার। রয়েছে বৈচিত্র্যময় প্রাকৃতিক পরিবেশ, চা বাগানের দৃষ্টিনন্দন দৃশ্য আরও রয়েছে মূল্যবান অনেক প্রাকৃতিক সম্পদ। মৌলভীবাজার নামকরণে রয়েছে নানা মতভেদ। কথিত আছে যে, শাহ মোস্তফা (র:) এর বংশধর মৌলভী সৈয়দ কুদরত উল্লাহ অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝা মাঝি মনু নদীর উত্তর তীরে কয়েকটি দোকানঘর স্থাপন করে ভোজ্যসামগ্রী ক্রয়-বিক্রয়ের সুযোগ সৃষ্টি করেন। তার প্রতিষ্ঠিত এ বাজারে নৌ ও স্থলপথে প্রতিদিন লোক সমাগম বৃদ্ধি পেতে থাকে। ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগমের মাধ্যমে মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে মৌলভীবাজারের খ্যাতি। সে থেকেই হয়ত মৌলভীবাজার নামে এটি পরিচিতি লাভ করে। প্রিয় পাঠক আজ আমরা মৌলভীবাজার জেলার দর্শনীয় স্থানের সঙ্গে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেব। চা-বাগান : ‘চা’ যে নামটি শুনলে যে কারও মনে যে জেলাটির নাম মনে পড়বে তা হলো মৌলভীবাজার। মৌলভীবাজার জেলার বিস্তৃত অঞ্চল ঘিরে রয়েছে ছোট ছোট অসংখ্য টিলা-পাহাড় ও সমতল ভূমি। এসবের মাঝে রয়েছে ৯২টি চা বাগান। শ্রীমঙ্গল উপজেলাকে বলা হয় চায়ের রাজধানী। দেশের চাহিদা মিটিয়ে এসব চা রফতানি হয় বিদেশে। চা বাগানের মনোরোম দৃশ্য মন কাড়ে সব বয়স, শ্রেণী, পেশার মানুষের। সবকটি চা বাগানে রয়েছে সবুজের সমারহ। অপূর্ব দৃশ্য নজরকারে সেখানে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদের। মৌলভীবাজারের চা বাগানগুলো দেখতে সর্বদাই মানুষের ভিড় লেগে থাকে চা বাগানগুলোতে। তাই দেড়ি না করে আজই ঘুরে আসুন। মাধবকু- : জলপ্রপাত যা কিনা ঝর্ণা নামে সকলের কাছে পরিচিত। ঝর্ণার জলরাশি পড়ার দৃশ্য ভালবাসে না এমন লোক দুনিয়ায় খুঁজে পাওয়া অসম্ভব। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জলপ্রপাত ‘মাধবকু-’। পাহাড়ের উপর থেকে জলরাশি পড়ার দৃশ্য সত্যি মনোমুগ্ধকর। প্রায় ৮৩ মিটার উঁচু পাহাড়ের ওপর থেকে অবিরাম ধারায় ঝরছে জলরাশি। এ দৃশ্য দেখার জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দর্শনার্থীরা ভিড় জমায় জায়গাটিতে। বিরামহীন ধারায় জলরাশি পড়ার দৃশ্য নজর কাড়ে সবার। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান : ‘উদ্যান’ যা কিনা বাগান নামে পরিচিত। মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার ‘লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান’ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে অনন্য এক জেলা। গাছ-গাছালি, পশুপাখি আর বেশকিছু বিরল প্রজাতির জীববৈচিত্র্য লক্ষ্য করা যায় সেখানে। বিরল প্রজাতির পশুর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো উল্লুক। এছাড়াও রয়েছে হনুমান, লজ্জাবতীর বানর, কুলবানর, কাঠবিড়ালি, হরিণসহ অনেক প্রজাতির পশুপাখি। জীববৈচিত্র্যে অন্যতম এ উদ্যান দেখতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের সরগরম হয় ওই উদ্যানে। নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী : মৌলভীবাজার জেলায় ক্ষুদ্রজাতি আর মাঝে অন্যতম হলো মণিপুরী। এছাড়া আরও রয়েছে খাসিয়া, সাঁওতাল, টিপরাসহ আরও বেশকিছু নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর মানুষ। বিচিত্র এসব মানুষের জীবন প্রণালী। নৃতাত্ত্বিক এসব জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতিতে ও রয়েছে নিজস্ব ঐতিহ্য। আচার-অনুষ্ঠানে এদের ভিন্নতা সত্যি মনোমুগ্ধকর। নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতির এসব মানুষ বেশ অতিথিপরায়নও বটে। বিশেষ করে মণিপুরী পল্লীতে প্রতিবছরের নবেম্বর মাসে অগ্রহায়ণ মাসের শুরুতে মণিপুরী পল্লীতে বসে আকর্ষণীয় রাসমেলা। মেলা দেখার জন্য দেশ-বিদেশের অসংখ্য দর্শনার্থীর মিলনমেলা ঘটে এখানে।
×