ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সঙ্গীর সঙ্গে বোঝাপড়াটা বেশি জরুরী। দু’জন দু’জনকে সব থেকে কাছের বন্ধু ভাবুন। যাকে মনের সব কথা নিশ্চিন্তে বলে ফেলা যায়। পারস্পরিক ঘনিষ্ঠতার মাধ্যমে যেমন সঙ্গীর মনের মতো হওয়া সম্ভব, তেমনি খোলামেলা আলোচনা, গল্প, শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে চিন্তা-ভাবনারও মিল খুঁজে পাও

ভাল প্রত্যাশাই ভালবাসা

প্রকাশিত: ০৫:২০, ১২ মার্চ ২০১৮

ভাল প্রত্যাশাই ভালবাসা

সাবিহা রহমান ।। বিশ্ববিখ্যাত রিলেশনশিপ থেরাপিস্ট জন গটম্যানের মতে, সত্যিকারের ভালবাসা মনোরম, অত্যন্ত আনন্দের। শুধু প্রয়োজন সঠিক প্রত্যাশা। ‘ভাল সম্পর্ক’ হলো সম্মান, সততা ও স্নেহর মিশেল। একটি সম্পর্কের জন্য এই বিষয়গুলো অপরিহার্?য। সম্পর্কে সুখ নির্ভর করে বিশ্বাস ও প্রতিশ্রুতির ওপর। বিশ্বাস অর্জন করতে পারলে সঙ্গীর হৃদয়ে আপনার জন্য সম্মানের আসন তৈরি হয়। আর আপনি সঙ্গীকে কতটা সম্মান করেন তা প্রকাশ করে প্রতিশ্রুতি। প্রিয়জনের ভাল বা খারাপলাগাগুলোকে মনে লালন করা ভালবাসারই বহির্প্রকাশ। খুব বেশি বা খুব কম প্রত্যাশা নয়। কিছু কাপল মনে করে মন খারাপ এড়াতে প্রত্যাশা কম রাখা ভাল। কিন্তু গাটম্যানের মতে এটা ভুল। কারণ আপনি সঙ্গীর প্রতি কম প্রত্যাশা করার মানে হলো আপনি তাকে কম গুরুত্ব দিচ্ছেন। এতে সঙ্গী তার প্রতি মনোযোগের অভাব খেয়াল করতে পারে। একটি সম্পর্কে মন খারাপ কিংবা হতাশা থাকবেই। মানুষ কষ্ট পাবে। এগুলো সম্পর্কেরই অংশ। কারণ দু’জন মানুষের চিন্তা-ভাবনা কখনই এক হতে পারে না। সম্পর্কে ঘনিষ্ঠতা, বন্ধুত্ব দুটোই জরুরী। আমরা বেশিরভাগই পারফেক্ট মানুষ খুঁজি। যার মধ্যে সব ভাল গুণ থাকবে। কিন্তু এটা আগে বোঝা উচিত যে ‘সমমনা’ আর ‘মনের মতো’ এক বিষয় নয়। সঙ্গীর সঙ্গে বোঝাপড়াটা বেশি জরুরী। দু’জন দু’জনকে সব থেকে কাছের বন্ধু ভাবুন। যাকে মনের সব কথা নিশ্চিন্তে বলে ফেলা যায়। পারস্পরিক ঘনিষ্ঠতার মাধ্যমে যেমন সঙ্গীর মনের মতো হওয়া সম্ভব, তেমনি খোলামেলা আলোচনা, গল্প, শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে চিন্তা-ভাবনারও মিল খুঁজে পাওয়া কঠিন কিছু নয়। ‘ভাল সম্পর্ক’ যেমন হওয়া উচিত। একটি ভাল সম্পর্কের জন্য সৎ থাকা সবচেয়ে বেশি জরুরী। সঙ্গীকে তার প্রাপ্ত সম্মান দিন। অবাস্তব প্রত্যাশা না রেখে দায়িত্বের সঙ্গে টুকটাক দ্বন্দ্ব মিটিয়ে ফেলুন। কারও সঙ্গে জীবন কাটানোর জন্য পরষ্পরের মধ্যে বোঝাপড়া থাকাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সঙ্গীর অনেককিছু আপনার পছন্দ নাও হতে পারে, াবার আপনার সঙ্গীর আপনার অনেক কিছু ভাল না-ই লাগতে পারে।এক্ষেত্রে পারষ্পারিক বোঝাপড়ায় কিছু কিছু ছাড় দেওয়া উচিত। তবে নিজের একান্ত বিষয়, স্বপ্ন, াল লাগা পুরোপুরি ছেড়ে দেওয়া ঠিক নয়। কারও সঙ্গে সম্পর্ক কিংবা বিয়ে হলেই যে নিজের সব শখ এবং ভাল লাগার জিনিস বিসর্জন দিতে হবে এটা ঠিক নয়। তবে এটা ঠিক, সঙ্গী যেটা পছন্দ করে সেটাকেই আরেকজন গুরুত্ব দেয়। কিন্তু যে জিনিসগুলি আপনি করতে ভালবাসেন, যা আপনাকে আনন্দ দেয়, যেমন-বই পড়া, সিনেমা দেখা, খেলাধূলা করা -এগুলো পুরোপুরি বাদ দেওয়া ঠিক নয়। যখন আপনি দীর্ঘ সম্পর্ক প্রবেশ করবেন তখন নিজের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে যতœশীল হওয়া প্রয়োজন। শরীর সুস্থ রাখার জন্য ধূমপান ছেড়ে দিতে পারেন, নিয়মিত ব্যয়াম করতে পারেন, সুষম খাবারের দিকে মনোযোগী হতে পারেন। আপনি সুস্থ থাকলে সঙ্গীর দিকেও মনোযোগ দিতে পারবেন। এতে সম্পর্কের দৃঢ়তা বাড়বে। প্রত্যেকেরই কিছু না কিছু বদভ্যাস থাকে। কেউ আপনাকে ভালবাসলে হয়তো সে আপনার ছোটখাটো দোষক্রুটিও মেনেনিবে। কিন্তু তার মানে এই নয়, আপনি দোষগুলো বারবারই করতে থাকবেন। যেমন- যদি আপনার সঙ্গী সব কিছু নিয়ে খুব সময় মেনে চলেন, আর আপনি সবসময় দেরি করেন তাহলে একসময় এটা নিয়ে সমস্যা তৈরি হতে পারে। সঙ্গীর মতো না হতে পারলেও মাঝেমধ্যে কাছাকাছি হওয়ার চেষ্টা করতে পারেন। পোশাক নিয়ে অনেকেরই নিজস্ব পছন্দ-অপছন্দ থাকে। কি পোশাক পড়লে নিজেকে ভাল লাগবে এবং কি পড়লে নিজের ব্যক্তিত্ব ফুটে থাকবে সেটা নিয়ে কেউ যদি নিশ্চিত থাকেন তাহলে নিজেকে পরিবর্তন করার কোন দরকার নেই। তবে কোন জায়গায় কোন ধরনের পোশাক পড়া উচিত অনেকে হয়তো তা বুঝতে পারেন না। এসব ক্ষেত্রে পোশাক নির্বাচনের জন্য সঙ্গীর সহায়তা নিতে পারেন। বিয়ের আগে আপনি যেভাবে দৈনন্দিন জীবনযাপন করেছেন বিয়ের পরে সেখানে কিছুটা পরিবর্তন আনতে হবে। যেমন- আপনি খুবই এলোমেলো, অপরিচ্ছন্ন ধরনের একজন মানুষ। আর আপনার সঙ্গী ঠিক তার বিপরীত। সেক্ষেত্রে কিছুটা হলেও আপনাকে নিজেকে পরিবর্তন করতে হবে। আপনি যদি অর্ন্তমুখী স্বভাবের হন, আর সঙ্গী যদি অনেক মিশুক ধরনের হয় তাহলে মাঝেমধ্যে কিছুটা সমস্যা হতে পারে। এটা তো রাতারাতি বদলানো সম্ভব নয়, তবে সঙ্গীর সঙ্গে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে যেতে পারেন। তাতে অন্যদের সঙ্গে কিছুটা হলেও আপনার যোগাযোগ বাড়বে। জীবনে ক্যারিয়ার নিয়ে আপনার হয়তো কোন স্বপ্ন ছিল। বিয়ে হলেই সব শেষ হয়ে গেছে, এটা মনে করবেন না। আপনার সঙ্গীর সঙ্গে আপনার স্বপ্ন নিয়ে আলোচনা করুন। প্রয়োজনে তার সাহায্য নিয়ে সামনে এগিয়ে চলুন। সুখী দাম্পত্য জীবন গড়তে পারষ্পারিক সমঝোতার কোন বিকল্প নেই। দুজন যদি দুজনকে বুঝতে পারেন তাহলে জীবনের যেকোন সমস্যা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।
×