ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কোটা পদ্ধতি

প্রকাশিত: ০৪:১১, ১৩ মার্চ ২০১৮

কোটা পদ্ধতি

সরকারী চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা পদ্ধতি চালুর নেপথ্যে যুক্তি অবশ্যই রয়েছে। কোটা প্রথা চালু হয়েছে পাকিস্তান পর্বে। তার বিস্তার ঘটেছে স্বাধীন বাংলাদেশে। অনগ্রসর অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের চাকরির ক্ষেত্রে ঠাঁই দিতে এই পদ্ধতি চালু হয়েছিল অনেক আগেই। তাতে মেধার প্রাধান্য হয়ত ততটা থাকত না। যুক্তি ছিল, রাষ্ট্র পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে বঞ্চিত করতে পারে না। এই কারণে জেলাভিত্তিক কোটা পদ্ধতি চালু হয়েছিল বহু আগেই। যেসব জেলায় শিক্ষিতের হার বেশি ছিল, সেসব জেলার মানুষ কোটা প্রথার শিকার হয়েছেন। মেধাবীদের অনেকে চাকরিতে নিয়োগ পেত না জেলাওয়ারি কোটার কারণে। অনগ্রসর জেলার শিক্ষার্থীদের সুবিধাতে এই প্রথা চালু থাকলেও, এর প্রতি ক্ষোভ ছিল সংশ্লিষ্টদের। সংবিধানের ১৯ (১) ধারায় উল্লেখ রয়েছে, রাষ্ট্র প্রজাতন্ত্রের সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করবে। কিন্তু সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী কিংবা নারীর জন্য রাষ্ট্রের যে একটা দায়-দায়িত্ব রয়েছে, তা পালনে কোটা প্রথা চালু করা হয়েছে। বর্তমানে সরকারী চাকরির ৫৫ শতাংশ কোটার মাধ্যমে পূরণ করা হচ্ছে। যার মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার জন্য ৩০ শতাংশ, নারীর ১০ শতাংশ, জেলা কোটা ১০ শতাংশ, ৫ শতাংশ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষের জন্য নির্ধারিত। এছাড়া প্রতিবন্ধীদের জন্য এক শতাংশ কোটা রয়েছে। যা উল্লিখিত কোটায় অব্যবহৃত অংশ থেকে পূরণ করার বিধান রয়েছে। আর মেধাভিত্তিতে বর্তমানে নিয়োগ পেয়ে থাকে ৪৫ শতাংশ। কোটা পদ্ধতির যৌক্তিকতা নিয়ে তর্ক-বিতর্ক দীর্ঘদিনের বৈকি। কারও মতে, কোটা ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল সমাজের পিছিয়ে পড়া অংশ বা এলাকাকে সামনে নিয়ে আসার জন্য। ভিন্নমতে বলা হচ্ছে, যে বিশেষ ব্যবস্থা চালু রয়েছে, সেই ব্যবস্থাই চাকরির ক্ষেত্রে ছড়ি ঘোরাচ্ছে। নারী ও প্রান্তিক গোষ্ঠীর জন্য কোটা প্রথা স্বাভাবিক। কিন্তু তা সবক্ষেত্রে যৌক্তিক হওয়া বাঞ্ছনীয়। অন্যান্য কোটার নামে মেধাবীদের বঞ্চিত করা মানেই প্রশাসনকে মেধাবিহীনদের আখড়ায় পরিণত করা। সমাজের কোন অংশকে বিশেষ সুবিধা দিতে গিয়ে বৃহত্তর অংশকে বঞ্চিত করা সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ২০১০ সালের এক দাফতরিক আদেশে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় মুক্তিযোদ্ধা কোটায় প্রার্থী পাওয়া না গেলে সেসব পদ খালি রাখার নির্দেশনা দেয়ার পর বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদফতর, দফতরসহ সরকারী কর্মকমিশন শূন্যপদে নিয়োগ দিতে পারেনি। উপজেলা আনসার ও ভিডিপির সার্কেল একজুট্যান্টসহ নয় হাজার স্টাফ নার্স নিয়োগের ক্ষেত্রেও সমস্যাক্রান্ত হয় পিএসসি। শূন্য থেকে যায় কারিগরি ক্যাডারের অনেক পদ। এ অবস্থায় চাকরি প্রত্যাশীদের দাবি ছিল, সরকারী চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতির সংস্কার। এর আগে পিএসসির বার্ষিক প্রতিবেদনে বিভিন্ন বছরে কোটা পদ্ধতি যৌক্তিক করায় বিষয়টি উত্থাপিত হয়। এরই প্রেক্ষিতে সরকার বাস্তবানুগ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কোটা পদ্ধতির কারণে কোটার বাইরে থাকায় যোগ্য ও মেধাবী অনেকেই নিয়োগ থেকে বঞ্চিত হয়। এসব পদ খালি থাকায় সরকার ও রাষ্ট্র মেধাবী এবং যোগ্যদের সেবা থেকে বঞ্চিত হয়। অন্যদিকে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও অনেকে সরকারী চাকরিতে নিয়োগ পাচ্ছিল না। এতে চাকরি প্রার্থীদের মধ্যে হতাশা বাড়ে। এ নিয়ে তারা আন্দোলনেও নামে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সরকার বলছে, সরকারী চাকরিতে কোটার শূন্যপদে মেধা তালিকায় থাকা শীর্ষ প্রার্থীদের নিয়োগের সিদ্ধান্তে কোটা ও সাধারণ প্রার্থীদের কেউ বঞ্চিত হবেন না। তবে কোটা পদ্ধতি সংস্কার করা হচ্ছে না। বরং এখন হতে সরাসরি সরকারী চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটায় যোগ্যপ্রার্থী পাওয়া না গেলে মেধাতালিকা থেকে শূন্যপদ পূরণ করা হবে। এই সিদ্ধান্ত সর্বজন গ্রহণযোগ্য বৈকি। তবে পরিস্থিতি এমন করা উচিত যাতে কোটা প্রথার সংখ্যা হ্রাস হয়। প্রশাসনকে দক্ষ ও গতিশীল করার ক্ষেত্রে মেধার কোন বিকল্প নেই। তাই মেধাবীদের বঞ্চিত করার ক্ষেত্রগুলো সংকুচিত হোক তাই কাম্য।
×