ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অপেক্ষা সিদ্ধান্তের

যুক্তরাষ্ট্রে সিডিপির বৈঠক শুরু

প্রকাশিত: ০৫:০৯, ১৩ মার্চ ২০১৮

যুক্তরাষ্ট্রে সিডিপির বৈঠক শুরু

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশের জন্য এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিতে সোমাবর শুরু হয়েছে বহুল কাক্সিক্ষত কমিটি ফর ডেভেলপমেন্টের (সিডিপি) বৈঠক। এই বৈঠকটির সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়েই পৃথিবীর বুকে নতুন তকমা পাবে বাংলাদেশ। স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বের হয়ে ছোট্ট ব-দ্বীপ রাষ্ট্রটি উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি পাবে। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে এ সংক্রান্ত বৈঠকে শুরু হয়েছে। সিডিপির ত্রিবার্ষিক বৈঠকটি চলবে আগামী ১৬ মার্চ পর্যন্ত। বাংলাদেশসহ মোট ১৫ দেশকে এলডিসির তালিকা থেকে বের করে উন্নয়নশীল দেশের তালিকাভুক্ত করা হবে এই বৈঠকে। দক্ষিণ এশিয়ার আরও দুটি দেশ নেপাল ও ভুটানও রয়েছে এই তালিকায়। জাতিসংঘের সহযোগী সংস্থা অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিলের (ইকোসোক) আওতাধীন সিডিপি তিনটি সূচকের মানদ-ের ওপর ভিত্তি করে এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি দেয়। সূচক তিনটি হলোÑ মানব সম্পদের উন্নয়ন, অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা এবং জাতীয় মাথাপিছু আয়। একটি দেশকে উন্নয়নশীলের তালিকাভুক্তির জন্য মানবসম্পদ উন্নয়নে ১০০ এর মধ্যে ৬৬ পয়েন্ট থাকতে হবে। যেখানে বাংলাদেশের রয়েছে ৬৮ দশমিক ৭ পয়েন্ট। অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতায় ৩২ পয়েন্টের নিচে থাকতে হবে একটি দেশকে। বাংলাদেশ রয়েছে ২৫ দশমিক ১১ পয়েন্টে। আর জাতীয় মাথাপিছু আয় (জিএনআই) ১ হাজার ২৪২ মার্কিন ডলার হতে হবে। যাতে বাংলাদেশ এরই মধ্যে পৌঁছে গেছে ১ হাজার ৬১০ ডলারে। দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানাচ্ছে, বৈঠকে বাংলাদেশের ২০১৪, ২০১৫ ও ২০১৬ এই তিন বছরের সূচকের তথ্য উপাত্ত উপস্থাপন করা হবে। তারা বলছেন, এরইমধ্যে তিনটি সূচকেই বাংলাদেশ সক্ষমতা অর্জন করেছে। ফলে বৈঠকে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের মানদ- অর্জন করার স্বীকৃতি পেতে কোন বাধা নেই। তবে এক্ষেত্রে কিছু শর্ত ও প্রক্রিয়া রয়েছে উল্লেখ করে সূত্র জানায়, সূচকের এই ধারাবাহিকতা বাংলাদেশকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ধরে রাখতে হবে। পরে ২০২২ সালের শেষের দিকে জাতিসংঘের নির্ধারিত নিয়মে সূচকের তথ্যগুলো চূড়ান্ত সমন্বয় করে হিসাব তৈরি করা হবে। ২০২৪ সালের মার্চে ফের বৈঠক করবে সিডিপিবে। ওই বৈঠকে চূড়ান্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হবে। সেখানে অনুমোদন হলে তা পাঠানো হবে ইকোসোকে। ইকোসোক স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে চূড়ান্ত করে প্রতিবেদন পাঠাবে জাতিসংঘে। পরে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে তা স্বীকৃতি পেলে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পাবে। এসব প্রক্রিয়া শেষ করতে মোট ৬ বছর লাগবে। এই ছয় বছর বাংলাদেশকে পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। যাতে বাংলাদেশ গড়িয়ে আবার পেছনে চলে না যায়। এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, এলডিসি থেকে বের হয়ে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকায় উঠে গেলে সেখান থেকে আবার পিছিয়ে আসার কোন নজির নেই। আর বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই ধরনের কোন আশঙ্কা একেবারেই থাকছে না। কারণ ১৭৫ মিলিয়নের বেশি যাদের জনসংখ্যাা রয়েছে তাদের আর ফিরে আসার কোন সুযোগ নেই। ফলে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হলে সেখানেই থেকে যাবে। তিনি বলেন, মানবসম্পদ উন্নয়ন ও জাতীয় মাথাপিছু আয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কখনও পেছনে যাওয়ার সম্ভবনা নেই। তবে বড় মাত্রার ঘুর্ণিঝড়, ভূমিকম্প হলে অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচকটি কিছুটা সঙ্কটাপন্ন হলেও হতে পারে। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) সিনিয়র রিচার্স ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য বলেন, কাগজপত্রে ২০২১ সালে আমরা বিভিন্ন সূচক অর্জন করব। কিন্তু আমাদের আরও তিন বছর করে মোট ছয় বছর পর্যবেক্ষণে রেখে দেয়া হবে। যাতে গড়িয়ে আবার পেছনে যায় কিনা তা দেখা হবে। সেই ছয় বছর আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। আনুষ্ঠানিকভাবে এই তালিকা থেকে বের হওয়ার জন্য। তবে এ বছরই বাংলাদেশ প্রয়োজনীয় সূচকগুলো অর্জন করে নিয়েছে। তবে অর্থনৈতিক অর্জনের পাশাপাশি রাজনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতাকেও বড় করে দেখছেন এই অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে বড় কথা হলো দেশের ভেতরে স্থিতিশীলতা না থাকলে, দেশের ভেতরে যদি ঐক্যবোধ না থাকে, তাহলে এই উত্তরণটাকে আমরা একটি সুফল হিসেবে, সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করার ক্ষেত্রে পিছিয়ে যাব।’ উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হলে বাংলাদেশের ওপর কিছু দায়িত্বও বর্তাবে, যা পালনে সতর্ক থাকতে হবে বলে মত দিয়েছেন অপর অর্থনীতিবিদ খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। সিপিডির এই অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক বলেন, ‘বাংলাদেশ এই তালিকায় উন্নীত হলে বৈদেশিক সহায়তা ও বাণিজ্যিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে। আবার বেশ কিছু দায়বদ্ধতাও সৃষ্টি হবে। ফলে এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে।’
×